কেন্দ্রীয় সরকার রেশন কার্ডের সঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংযুক্ত করার একটি নতুন প্রস্তাব এনেছে, যাতে রেশন ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও আধুনিক করা যায়। এই প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫-এ কেন্দ্রীয় খাদ্যসচিবের সঙ্গে রাজ্যের খাদ্যসচিবদের বৈঠকে এই পরিকল্পনা উঠে আসে। রাজ্য মনে করছে, এই পদক্ষেপে রেশন বিতরণ আরও সহজ হবে এবং সরকারি সুবিধা সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছাবে। তবে এর পিছনে কেন্দ্রের উদ্দেশ্য কী, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রক একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আয়োজন করে। সেখানে রাজ্যগুলোর খাদ্যসচিবদের সঙ্গে আলোচনা হয় রেশন বণ্টন ব্যবস্থায় নতুন সংস্কার আনার বিষয়ে। কেন্দ্রের প্রস্তাব ছিল, রেশন কার্ডের সঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যুক্ত করা হোক। এর জন্য নতুন রেশন কার্ড বিলির সময় পরিবারের প্রধানের ই-কেওয়াইসি (ইলেকট্রনিক নো ইওর কাস্টমার) ফর্মে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্যও যোগ করতে হবে। আগে থেকেই রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার সংযুক্ত করা হয়েছে, আর আধারের সঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও যুক্ত রয়েছে। তাই এবার সরাসরি রেশন কার্ডের সঙ্গে ব্যাঙ্কের তথ্য যোগ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের খাদ্য ও সরবরাহ দফতর এই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব রবি শঙ্করকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে রাজ্য জানিয়েছে, তারা এই সংযুক্তিকরণের পক্ষে। তবে একটি বিকল্প প্রস্তাবও দিয়েছে রাজ্য। তারা বলেছে, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য সরাসরি ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (এনপিসিআই) থেকে নেওয়া যেতে পারে। কারণ, এনপিসিআই-এর মাধ্যমেই আগে আধারের সঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যুক্ত হয়েছে। এতে রেশন কার্ডে আলাদা করে তথ্য যোগ না করেও কাজ চালানো সম্ভব।
এই প্রস্তাবের পিছনে কেন্দ্রের লক্ষ্য কী হতে পারে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আলোচনা চলছে। অনেকে মনে করছেন, ভবিষ্যতে চাল-গমের মতো খাদ্যপণ্য বিতরণের বদলে সরকার সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নগদ ভর্তুকি দিতে চাইছে। এতে দুর্নীতি কমবে এবং সরকারি সাহায্য সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছাবে। আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) ২০১৭-১৮ সালে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার যুক্ত করা বাধ্যতামূলক করেছিল। তবে সুপ্রিম কোর্ট পরে রায় দেয়, যেসব অ্যাকাউন্টে সরকারি ভর্তুকি যায় না, সেগুলোর জন্য আধার বাধ্যতামূলক নয়। এখন রেশন কার্ডের ক্ষেত্রে এই নতুন পদক্ষেপ এসেছে।
পশ্চিমবঙ্গে ‘খাদ্যসাথী’ প্রকল্পের মতো উদ্যোগ ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়। এই প্রকল্পে রাজ্য সরকার চাষিদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্যে ধান কেনে এবং দরিদ্র মানুষদের রেশন সরবরাহ করে। তবে রেশন ডিলারদের একাংশ আশঙ্কা করছেন, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যুক্ত হলে এই প্রকল্পে প্রভাব পড়তে পারে। সর্বভারতীয় ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলারস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু বলেছেন, “এটা মনে হচ্ছে কেন্দ্রের চাপে রাজ্যের কিছু আমলা খাদ্যসাথী বন্ধ করার চক্রান্ত করছে।” তিনি আরও বলেন, এতে চাষিদের ক্ষতি হতে পারে।
এই পুরো বিষয়টা সহজ করে বললে, কেন্দ্র চায় রেশন কার্ডের সঙ্গে আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট জুড়ে দিতে। এতে রেশনের চাল-গম পাওয়ার পদ্ধতি আরও সহজ হবে। পশ্চিমবঙ্গও এতে রাজি। তারা বলছে, ব্যাঙ্কের তথ্য আধার থেকেই নেওয়া যায়, তাই আলাদা ঝামেলার দরকার নেই। তবে কেউ কেউ ভাবছেন, এর ফলে হয়তো চাল-গমের বদলে টাকা দেওয়া শুরু হবে। এটা হলে রেশন দোকানের ভূমিকা কমে যেতে পারে।
এই প্রস্তাব এখনও চূড়ান্ত হয়নি। কেন্দ্র ও রাজ্য মিলে কীভাবে এটি কার্যকর করা হবে, তা ভবিষ্যতেই স্পষ্ট হবে। তবে এতে রেশন ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসতে পারে। সাধারণ মানুষের জন্য এটা সুবিধা বাড়াবে, নাকি নতুন সমস্যা তৈরি করবে, সেটা সময়ই বলবে। (শব্দ সংখ্যা: ৭৪৮)