Legal cases pending West Bengal 2024: প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই. চন্দ্রচূড় শনিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে অবসরে যাচ্ছেন। তাঁর দুই বছরের কার্যকালে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রায় দেওয়া হলেও, পশ্চিমবঙ্গ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি মামলা এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। এই মামলাগুলির মধ্যে রয়েছে আরজি কর ধর্ষণ ও হত্যা মামলা, ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলা, রাজভবন শ্লীলতাহানি মামলা, ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল মামলা এবং মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির মামলা। এছাড়াও দুই বিচারপতির মধ্যে সংঘাতের বিষয়টিও রয়েছ।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের একজন চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার এই মামলাটি পশ্চিমবঙ্গের একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার বিচার পশ্চিমবঙ্গের বাইরে স্থানান্তর করার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জোর দিয়ে বলেছেন যে বিচারক প্রয়োজন মনে করলে সাক্ষ্যপ্রমাণ পরীক্ষা করে আরও তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন।এই মামলায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করেছে যে সরকার মামলাটি প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে সরকার দাবি করছে যে তারা নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে সব ধরনের সহযোগিতা করছে।
পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট ২৬ হাজার চাকরি বাতিল করে দিয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এই মামলার শুনানি করেছে কিন্তু চূড়ান্ত রায় দেওয়া হয়নি।এই মামলাটি রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। একদিকে হাজার হাজার শিক্ষক চাকরি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন, অন্যদিকে যোগ্য প্রার্থীরা তাদের প্রাপ্য চাকরি থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ করছেন।
ট্রাম্পের ভাগ্য নির্ধারণ করবে নির্বাচন: হেরে গেলে জেলের ঝুঁকি, জিতলে মামলা থেকে রেহাই!
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি.ভি. আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। এই মামলাটি রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি হয়েছে কিন্তু এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।এই মামলাটি রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। রাজ্যপালের পদমর্যাদা ও সাংবিধানিক দায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
কলকাতা হাইকোর্টের একটি রায়ে পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী (ওবিসি) তালিকা থেকে বেশ কয়েকটি জাতি ও সম্প্রদায়কে বাদ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ২০১০ সাল থেকে ইস্যু করা প্রায় ৫ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল হয়ে গেছে। রাজ্য সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে।এই মামলাটি রাজ্যের সামাজিক ন্যায়বিচার ব্যবস্থার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের ওবিসি মর্যাদা হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন। এর ফলে শিক্ষা ও চাকরিতে সংরক্ষণের সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত হতে পারেন।
পশ্চিমবঙ্গের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে একটি মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। এই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে ভর্তি প্রক্রিয়ায় অনিয়ম হয়েছে এবং যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হয়েছেন।এই মামলাটি রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যবস্থার উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। একদিকে যোগ্য প্রার্থীদের ন্যায্য সুযোগ নিশ্চিত করা, অন্যদিকে মেডিক্যাল শিক্ষার মান বজায় রাখা – এই দুটি বিষয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা চ্যালেঞ্জের।
সাবধান! ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ই-কেওয়াইসি না করালে রেশন কার্ড বাতিল হতে পারে
সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনাটি রাজ্যের বিচার ব্যবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।এই ধরনের সংঘাত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এটি জনসাধারণের মধ্যে বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা কমিয়ে দিতে পারে।
প্রধান বিচাপতি চন্দ্রচূড়ের অবসরের পর এই মামলাগুলির ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। নতুন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বে এই মামলাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তির হবে কি না তা দেখার বিষয়। তবে এই মামলাগুলির রায় পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি, প্রশাসন ও সমাজ ব্যবস্থার উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে।বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে এই জটিল মামলাগুলির সুষ্ঠু সমাধান করা বর্তমান সময়ের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আশা করা যায়, নতুন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্ট এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে।
মন্তব্য করুন