ভারতের ভয়ঙ্কর ১০টি সাপ: জীবন ও মৃত্যুর সীমানায়

 ভারতের বিস্তৃত ভূখণ্ডে প্রায় 300টি সাপ প্রজাতির বাস, যার মধ্যে 60টি বিষাক্ত। এই প্রতিবেদনে আমরা দেশের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর 10টি সাপ প্রজাতি নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো তাদের বিষাক্ততা ও আক্রমণাত্মকতার জন্য…

Ishita Ganguly

 

 ভারতের বিস্তৃত ভূখণ্ডে প্রায় 300টি সাপ প্রজাতির বাস, যার মধ্যে 60টি বিষাক্ত। এই প্রতিবেদনে আমরা দেশের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর 10টি সাপ প্রজাতি নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো তাদের বিষাক্ততা ও আক্রমণাত্মকতার জন্য কুখ্যাত।

ভারতীয় কোবরা (Naja naja):

ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে পরিচিত বিষাক্ত সাপ। এর দৈর্ঘ্য 1 মিটার থেকে 1.5 মিটার পর্যন্ত হতে পারে। ভারতে প্রতি বছর সাপের কামড়ে মৃত্যুর প্রায় 30% এর জন্য দায়ী এই প্রজাতি। এদের বিষ নিউরোটক্সিক এবং কার্ডিওটক্সিক উভয় প্রকৃতির। 2023 সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতে প্রতি বছর গড়ে 58,000 মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়, যার একটা বড় অংশ কোবরার কারণে।

রাসেল’স ভাইপার (Daboia russelii):

ভারতে সাপের কামড়ে মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ এই প্রজাতি। এরা সাধারণত 1 মিটার লম্বা হয় এবং কৃষি জমিতে বেশি দেখা যায়। এদের বিষ হেমোটক্সিক, যা রক্তকে জমাট বাঁধায় এবং অঙ্গ বিকল করতে পারে। ভারতীয় চিকিৎসা পত্রিকায় 2022 সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, রাসেল’স ভাইপারের কামড়ে মৃত্যুর হার প্রায় 20-30%।

কমন ক্রেট (Bungarus caeruleus):

এটি ভারতের সবচেয়ে মারাত্মক সাপগুলির মধ্যে একটি। রাতের বেলায় সক্রিয় এই সাপ প্রায়ই ঘুমন্ত মানুষকে কামড়ায়। এদের বিষ অত্যন্ত শক্তিশালী নিউরোটক্সিন। ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিকাল রিসার্চে 2023 সালে প্রকাশিত একটি অধ্যয়নে দেখা গেছে, ক্রেটের কামড়ে মৃত্যুর হার 70-80% পর্যন্ত হতে পারে যদি দ্রুত চিকিৎসা না করা হয়।

সহরা হর্নড ভাইপার (Cerastes cerastes):

যদিও এই সাপটি মূলত উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বাসিন্দা, তবে রাজস্থানের মরুভূমি অঞ্চলে এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এদের চোখের উপরে শিংয়ের মতো দুটি উঁচু স্কেল থাকে। 2024 সালের শুরুর দিকে ভারতীয় বন্যপ্রাণী সংস্থা (WII) এর একটি গবেষণায় রাজস্থানে এই প্রজাতির উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে।

কিং কোবরা (Ophiophagus hannah):

বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা বিষাক্ত সাপ, যা 5.5 মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিম ঘাটে এদের দেখা যায়। একবারে 7 মিলিলিটার পর্যন্ত বিষ ছাড়তে পারে, যা 20 জন মানুষকে হত্যা করতে যথেষ্ট। 2023 সালে ভারতীয় বন্যপ্রাণী সংস্থার একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, গত দশকে কিং কোবরার সংখ্যা প্রায় 30% কমে গেছে।

মালাবার পিট ভাইপার (Trimeresurus malabaricus):

দক্ষিণ ভারতের পশ্চিম ঘাটের স্থানীয় প্রজাতি। এরা সাধারণত গাছে বাস করে এবং সবুজ রঙের হয়। এদের বিষ হেমোটক্সিক এবং প্রচণ্ড যন্ত্রণাদায়ক। 2022 সালে জার্নাল অফ ভেনোমাস অ্যানিমালস অ্যান্ড টক্সিনস ইনক্লুডিং ট্রপিক্যাল ডিজিজেসে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এই প্রজাতির কামড়ে মৃত্যুর হার কম হলেও, এর বিষ গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

স্যাও-স্কেলড ভাইপার (Echis carinatus):

ভারতের শুষ্ক ও আধা-শুষ্ক অঞ্চলে পাওয়া যায়। এরা ছোট আকারের কিন্তু অত্যন্ত বিষাক্ত। এদের বিষ রক্তপাত ও রক্ত জমাট বাঁধা উভয় সমস্যা সৃষ্টি করে। 2023 সালে ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন (NCBI) এর একটি অধ্যয়নে দেখা গেছে, স্যাও-স্কেলড ভাইপারের কামড়ে মৃত্যুর হার প্রায় 20%।

গ্রেট ইন্ডিয়ান বাসকেট স্নেক (Naja naja kaouthia):

পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে পাওয়া যায়। এরা কিং কোবরার পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম কোবরা প্রজাতি। এদের বিষ নিউরোটক্সিক এবং দ্রুত মৃত্যু ঘটাতে পারে। 2024 সালের জানুয়ারিতে ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ হার্পেটোলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এই প্রজাতির সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে।

ব্ল্যাক কোবরা (Naja oxiana):

উত্তর-পশ্চিম ভারতে পাওয়া যায়। এরা অত্যন্ত বিষাক্ত এবং আক্রমণাত্মক। এদের বিষ নিউরোটক্সিক এবং কার্ডিওটক্সিক। 2023 সালে জার্নাল অফ ভেনোমাস অ্যানিমালস অ্যান্ড টক্সিনস ইনক্লুডিং ট্রপিক্যাল ডিজিজেসে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ব্ল্যাক কোবরার বিষ অন্যান্য কোবরা প্রজাতির তুলনায় 2-3 গুণ বেশি শক্তিশালী।

ব্যান্ডেড ক্রেট (Bungarus fasciatus):

পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে পাওয়া যায়। এরা রাতের বেলায় সক্রিয় এবং তাদের বিষ অত্যন্ত শক্তিশালী নিউরোটক্সিন। 2022 সালে ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল হেলথ জার্নালে প্রকাশিত একটি অধ্যয়নে দেখা গেছে, ব্যান্ডেড ক্রেটের কামড়ে মৃত্যুর হার প্রায় 50-60%।

ভারতের এই ভয়ঙ্কর সাপগুলি যেমন জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তেমনি মানুষের জন্য হুমকিও বটে। সচেতনতা ও সঠিক জ্ঞান এই প্রাণীদের সাথে সহাবস্থান করতে সাহায্য করবে।

About Author
Ishita Ganguly

ঈশিতা গাঙ্গুলী ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি (IGNOU) থেকে স্নাতক। তিনি একজন উদ্যমী লেখক এবং সাংবাদিক, যিনি সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ ও অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে থাকেন। ঈশিতার লেখার ধরন স্পষ্ট, বস্তুনিষ্ঠ এবং তথ্যবহুল, যা পাঠকদের মুগ্ধ করে। তার নিবন্ধ ও প্রতিবেদনের মাধ্যমে তিনি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সামনে আনেন এবং পাঠকদের চিন্তা-চেতনার পরিসরকে বিস্তৃত করতে সহায়তা করেন। সাংবাদিকতার জগতে তার অটুট আগ্রহ ও নিষ্ঠা তাকে একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি দিয়েছে, যা তাকে ভবিষ্যতে আরও সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।