Little‑known facts about Salman Khan: বলিউডের ‘ভাইজান’ হিসেবে পরিচিত সলমন খান শুধু ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের একজন সুপারস্টারই নন, তিনি একটি প্রতিষ্ঠান। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতীয় সিনেমা জগতে রাজত্ব করা এই অভিনেতার জীবন সম্পর্কে অনেক কিছুই জনসমক্ষে আসলেও, এখনও অনেক অজানা দিক রয়েছে যা অধিকাংশ ভক্তরাও জানেন না। আজ আমরা সলমন খানের জীবনের এমন দশটি অজানা ও রোমাঞ্চকর তথ্য নিয়ে আলোচনা করব, যা আপনাকে অবাক করে দেবে।
সলমন খানের প্রকৃত নাম ও পারিবারিক ইতিহাস
সবাই তাকে সলমন খান হিসেবে চিনলেও, তার পূর্ণ নাম আব্দুর রশিদ সেলিম সলমন খান। ১৯৬৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করা সলমন খানের জন্মের সময় তার বাবা-মা এই বিশাল নামটি রেখেছিলেন। বলিউডের বিখ্যাত চিত্রনাট্যকার সেলিম খান ও তার প্রথম স্ত্রী সুশীলা চরকের (পরবর্তীতে সালমা খান নাম গ্রহণ করেন) জ্যেষ্ঠ পুত্র সলমন।
পিতৃকুলের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার
অনেকেই জানেন না যে সলমন খানের পূর্বপুরুষরা ছিলেন বর্তমান পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার আলাকোজাই পশতুন, যারা ১৮০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে বসতি স্থাপন করেছিলেন। আরো আশ্চর্যের বিষয় হল, তার পিতামহ আবদুল রশিদ খান ছিলেন ইন্দোর রাজ্যের ডেপুটি ইনস্পেক্টর জেনারেল, যিনি হোলকার সময়ে দিলার জাং পুরস্কারও অর্জন করেছিলেন।
অন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাঁতারু সলমন
অভিনয় জগতে আসার আগে সলমন খান একজন তুখোড় সাঁতারু ছিলেন। অনেকেই জানেন না যে তিনি স্কুলে পড়ার সময় বহুবার সাঁতার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ও অংশগ্রহণ করেছিলেন। চাইলে তিনি একজন পেশাদার সাঁতারু হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারতেন, কিন্তু ভাগ্য তাকে অভিনয় জগতে টেনে এনেছিল।
শিক্ষাজীবন ও প্রাথমিক আগ্রহ
সলমন খান মুম্বইয়ের প্রতিষ্ঠিত সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশোনা করেছিলেন, যদিও তিনি তার শিক্ষাজীবন সম্পূর্ণ করতে পারেননি। আশ্চর্যের বিষয় হল, তিনি প্রথমে অভিনেতা হওয়ার কথা ভাবেননি, বরং তার বাবা সেলিম খানের মতোই চিত্রনাট্যকার হতে চেয়েছিলেন। এটি তার নিজের লেখক হিসেবে পরবর্তী অবদানগুলির ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছিল।
শারীরিক বৈশিষ্ট্য
সলমন খানের উচ্চতা পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি, যা বলিউডের অনেক অভিনেতার তুলনায় কম হলেও, তার শারীরিক গঠন ও উপস্থিতি তাকে পর্দায় অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলেছে। তিনি তার শারীরিক ফিটনেসের প্রতি অত্যন্ত যত্নবান, যা বয়স বাড়ার সাথে সাথেও অটুট রয়েছে।
অভিনয় ক্যারিয়ারের অজানা দিক
অনেকেই মনে করেন “ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া” (১৯৮৯) দিয়ে সলমন খান বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু বাস্তবে তার প্রথম চলচ্চিত্র ছিল “বিবি হো তো অ্যায়সি” (১৯৮৮) যেখানে তিনি একটি পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। পরের বছরই তিনি “ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া” চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন এবং শ্রেষ্ঠ নবাগত অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও জিতেছিলেন।
অস্বীকৃত ভূমিকা ও চলচ্চিত্র
একটি অত্যন্ত চমকপ্রদ তথ্য হল, ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র “বাজিগর”-এর জন্য পরিচালকের প্রথম পছন্দ ছিলেন সলমন খান। কিন্তু তিনি ভিলেনের চরিত্র করতে অনীহা প্রকাশ করায় এই ভূমিকা পরবর্তীতে শাহরুখ খানকে দেওয়া হয়, যা তার ক্যারিয়ারের একটি মাইলফলক হয়ে ওঠে। এটি সলমন খানের একটি বড় সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়।
চিত্রনাট্যকার হিসেবে অবদান
অধিকাংশ লোকই সলমনকে শুধু অভিনেতা হিসেবেই চেনেন, কিন্তু তিনি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যও রচনা করেছেন। ১৯৯৩ সালে তিনি “চন্দ্রমুখী” ছবির কাহিনি লিখেছিলেন। এরপর দীর্ঘ বিরতির পর ২০১০ সালে “বীর” এবং ২০১৯ সালে “দাবাং ৩” এর স্ক্রিপ্টও লিখেছেন তিনি। বিশেষ করে “দাবাং” ফ্র্যাঞ্চাইজির সকল ছবিই বাণিজ্যিকভাবে বিপুল সাফল্য অর্জন করেছে।
বহুধর্মীয় পারিবারিক পরিচয়
সলমন খানের পারিবারিক পরিচয় অত্যন্ত অনন্য। তার বাবা সেলিম খান মুসলিম, মা সুশীলা চরক (পরবর্তীতে সালমা খান) হিন্দু এবং সৎমা হেলেন খ্রিস্টান। এই বহুধর্মীয় পরিবারে বেড়ে ওঠার কারণে সলমন একটি সহিষ্ণু পরিবেশে বড় হয়েছেন, যেখানে ঈদ, দীপাবলি এবং ক্রিসমাস সবই সমান উৎসাহে পালন করা হয়। একবার একটি আদালতে ধর্ম জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বিখ্যাত উত্তর দিয়েছিলেন, “আমি সলমন খান, এবং আমি একজন ভারতীয়”।
আর্থিক সাফল্য ও বিশ্ব স্বীকৃতি
বিশ্বের অন্যতম সফল অভিনেতা হিসেবে, সলমন খান আর্থিকভাবেও অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছেন। ফোর্বস সাময়িকীর ২০১৮ সালের বিশ্বের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক গ্রহণকারী ১০০ তারকার তালিকায় তিনি ৮২তম স্থান অধিকার করেছিলেন এবং ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম স্থানে ছিলেন। তাঁর আয় ছিল প্রায় $৩৭.৭ মিলিয়ন, যা তাঁকে ভারতীয় বিনোদন শিল্পের সর্বোচ্চ আয়কারী ব্যক্তিত্বদের একজন করে তোলে।
বাণিজ্যিক সাফল্যের রেকর্ড
সলমন খান বাণিজ্যিকভাবেও অসাধারণ সফল। তিনি ১০টি বছরে বছরের সর্বোচ্চ আয়কারী হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, যা কোনো ভারতীয় অভিনেতার জন্য সর্বোচ্চ রেকর্ড। “দাবাং”, “সুলতান”, “বজরঙ্গি ভাইজান”, “টাইগার জিন্দা হ্যায়” সহ অনেক ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র তার ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করেছে।
জনসেবা ও সামাজিক অবদান
সলমন খান কেবল একজন সফল অভিনেতাই নন, তিনি “বিয়িং হিউম্যান” নামে একটি জনকল্যাণমূলক সংস্থাও পরিচালনা করেন। এই সংস্থার মাধ্যমে তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং দরিদ্র মানুষদের সাহায্য করার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তিনি নিয়মিতভাবে দানশীলতায় অংশগ্রহণ করেন এবং সমাজের অবহেলিত মানুষদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
অজানা ব্যক্তিগত জীবন
সলমন খান সবসময় তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সংবাদমাধ্যমের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন। তিনি অবিবাহিত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা থাকলেও, তার বিভিন্ন অভিনেত্রীদের সাথে সম্পর্কের খবর প্রায়ই সংবাদ শিরোনামে আসে। অভিনেতা হিসেবে সাফল্য অর্জন করার পাশাপাশি, তিনি ২০১০ সাল থেকে জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো “বিগ বস” এর সঞ্চালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
সলমন খানের পেশাদার আবেগ ও বিশ্বাস
নিজের অভিনয় জীবনে সলমন খান বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করলেও, তিনি নেতিবাচক চরিত্রে (ভিলেন) অভিনয় করতে অস্বীকার করেন। এজন্যই তিনি “বাজিগর” চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে অস্বীকার করেছিলেন। এই সিদ্ধান্ত তার কিছু সুযোগ হাতছাড়া করলেও, তিনি নিজের মূল্যবোধে অটল থেকেছেন। সলমন খানের এই দৃঢ়তা তার ক্যারিয়ারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
বলিউডের এই মেগাস্টার সলমন খানের জীবন শুধু অভিনয় সাফল্যের গল্প নয়, বরং এটি বহুমুখী প্রতিভা, অবিচল দৃঢ়তা এবং অসাধারণ জীবন যাপনের এক অনন্য উদাহরণ। একজন সাঁতারু থেকে বিশ্বের সর্বাধিক আয়কারী অভিনেতাদের একজন হওয়া পর্যন্ত তার যাত্রা অনুপ্রেরণাদায়ক। সলমন খানের জীবনের এই অজানা দিকগুলো জেনে নিঃসন্দেহে তার ভক্তরা আরো বেশি উৎসাহিত হবেন এবং তার প্রতি ভালোবাসা আরো বৃদ্ধি পাবে।
“ভাইজান” নামে পরিচিত এই অভিনেতা শুধু তার অভিনয় দক্ষতার জন্য নয়, তার বহুমুখী প্রতিভা, বদান্যতা এবং সমাজসেবামূলক কাজের জন্যও সমাদৃত। যতই দিন যাবে, সলমন খানের কীর্তি ও জনপ্রিয়তা বাড়তেই থাকবে, কারণ তিনি কেবল একজন অভিনেতাই নন – তিনি একটি প্রতিষ্ঠান, একটি ঐতিহ্য, একটি জীবন্ত কিংবদন্তি।