Cancer symptoms in patients: ক্যান্সার একটি জটিল রোগ যা শরীরের যেকোনো অঙ্গে দেখা দিতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে এর লক্ষণগুলি প্রায়শই অস্পষ্ট থাকে, কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট উপসর্গ রয়েছে যা ক্যান্সারের ইঙ্গিত দিতে পারে। এই লক্ষণগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা ক্যান্সার নিরাময়ের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষ ক্যান্সারে মারা গেছেন। তবে সময়মত শনাক্তকরণ ও উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে এই মৃত্যুহার কমানো সম্ভব। চলুন জেনে নেই ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে দেখা যায় এমন ১০টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
১. অস্বাভাবিক ক্লান্তি ও দুর্বলতা
ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ হল চরম ক্লান্তি ও দুর্বলতা। এটি শুধুমাত্র সাধারণ ক্লান্তি নয়, বরং একটি গভীর, অব্যাহত শ্রান্তি যা বিশ্রাম নেওয়ার পরেও দূর হয় না।ক্যান্সার গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৯০% ক্যান্সার রোগী এই ধরনের ক্লান্তি অনুভব করেন। এটি বিশেষ করে লিউকেমিয়া, কোলন ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা যায়। যদি আপনি কয়েক সপ্তাহ ধরে অস্বাভাবিক ক্লান্তি অনুভব করেন, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ক্যান্সার প্রতিরোধে ৭টি জীবনধারা পরিবর্তন: আপনার স্বাস্থ্যের চাবিকাঠি
২. অব্যাখ্যাত ওজন হ্রাস
হঠাৎ করে কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া ক্যান্সারের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে যদি আপনি ৬ মাসের মধ্যে আপনার শরীরের ওজনের ৫% বা তার বেশি ওজন হারান, তাহলে তা উদ্বেগের কারণ হতে পারে।গবেষণায় দেখা গেছে, ফুসফুসের ক্যান্সার রোগীদের প্রায় ৬০% রোগ নির্ণয়ের সময় উল্লেখযোগ্য ওজন হ্রাস অনুভব করেন। এছাড়াও প্যাংক্রিয়াটিক ক্যান্সার, গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার এবং ইসোফেগাল ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও এই লক্ষণটি প্রায়শই দেখা যায়।
৩. দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা গলার স্বরের পরিবর্তন
যদি আপনার ৩-৪ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি থাকে বা আপনার গলার স্বরে পরিবর্তন আসে, তাহলে তা ফুসফুসের ক্যান্সার বা থাইরয়েড ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।ফুসফুসের ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৫০-৭৫% এর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী কাশি দেখা যায়। বিশেষ করে যদি কাশির সাথে রক্ত আসে, তাহলে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এছাড়াও গলার স্বর ভাঙা বা কর্কশ হয়ে যাওয়া লেরিঞ্জিয়াল ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
৪. পাচনতন্ত্রের পরিবর্তন
মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন, যেমন দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, বা মলের সাথে রক্ত যাওয়া কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।গবেষণায় দেখা গেছে, কোলন ক্যান্সার রোগীদের প্রায় ৮০% মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন অনুভব করেন। এছাড়াও পাকস্থলীর ক্যান্সার বা প্যাংক্রিয়াটিক ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও এই লক্ষণগুলি দেখা যেতে পারে।
৫. ত্বকের পরিবর্তন
ত্বকের যেকোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন, যেমন নতুন আঁচিল বা তিল, বা বিদ্যমান আঁচিলের আকার বা রঙের পরিবর্তন ত্বকের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ৫.৪ মিলিয়ন মানুষ ত্বকের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। ABCDE নিয়ম (Asymmetry, Border, Color, Diameter, Evolving) অনুসরণ করে আঁচিল পরীক্ষা করা উচিত। যদি কোনো সন্দেহজনক পরিবর্তন দেখা যায়, তাহলে অবিলম্বে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৬. অস্বাভাবিক রক্তপাত
যেকোনো ধরনের অস্বাভাবিক রক্তপাত, যেমন প্রস্রাবে রক্ত, মলে রক্ত, বা স্ত্রীদের ক্ষেত্রে মেনোপজের পরে রক্তস্রাব, ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।উদাহরণস্বরূপ, প্রস্রাবে রক্ত মূত্রথলির ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, মূত্রথলির ক্যান্সার রোগীদের প্রায় ৮০% প্রস্রাবে রক্ত দেখতে পান। অন্যদিকে, মেনোপজের পরে রক্তস্রাব জরায়ুর ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
৭. গিলতে সমস্যা বা বুকে ব্যথা
গিলতে সমস্যা বা বুকে ব্যথা ইসোফেগাল ক্যান্সার বা ফুসফুসের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।ইসোফেগাল ক্যান্সার রোগীদের প্রায় ৯০% গিলতে সমস্যা অনুভব করেন। অন্যদিকে, ফুসফুসের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা একটি সাধারণ লক্ষণ। যদি এই ধরনের সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৮. মুখগহ্বরের পরিবর্তন
মুখের ভিতরে সাদা বা লাল দাগ, ঘা যা সহজে সারে না, বা জিহ্বায় ব্যথা মুখগহ্বরের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ৩৫৭,০০০ নতুন মুখগহ্বরের ক্যান্সার রোগী শনাক্ত হন। বিশেষ করে যারা ধূমপান করেন বা তামাক চর্বণ করেন, তাদের এই ধরনের পরিবর্তনের প্রতি সতর্ক থাকা উচিত।
৯. স্তনের পরিবর্তন
স্তনে গাঁট, আকার বা আকৃতির পরিবর্তন, বা স্তনবোঁটা থেকে রক্তস্রাব স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ৮ জন মহিলার মধ্যে ১ জন তার জীবনকালে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। নিয়মিত স্তন পরীক্ষা এবং ম্যামোগ্রাম করানো স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
২০টি সাইলেন্ট কিলার: পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে প্রায়শই উপেক্ষিত ক্যান্সারের লক্ষণগুলি
১০. ঘন ঘন জ্বর বা সংক্রমণ
ঘন ঘন জ্বর বা সংক্রমণ লিউকেমিয়া বা লিম্ফোমার লক্ষণ হতে পারে। এই ধরনের ক্যান্সার রক্ত কোষ ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে, যার ফলে শরীর সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে না।গবেষণায় দেখা গেছে, লিউকেমিয়া রোগীদের প্রায় ৬০% রোগ নির্ণয়ের সময় জ্বর বা সংক্রমণের লক্ষণ দেখা যায়