রক্তাক্ত ক্যাম্পাস: শিক্ষার্থীদের বাঁচান মাননীয়া, সরকারের কঠোর অবস্থান

2024 Bangladesh quota reform movement: ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের রাজপথ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো উত্তাল হয়ে উঠেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল করার হাইকোর্টের রায়ের…

Chanchal Sen

 

2024 Bangladesh quota reform movement: ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের রাজপথ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো উত্তাল হয়ে উঠেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল করার হাইকোর্টের রায়ের পর থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন ক্রমশ হিংসাত্মক রূপ নিয়েছে। ছয় জন শিক্ষার্থীর মৃত্যু ও শতাধিক আহত হওয়ার পর সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

আন্দোলনের সূত্রপাত

২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্টের একটি রায়ে ২০১৮ সালে বাতিল করা মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। প্রথমে অনলাইনে শুরু হওয়া এই আন্দোলন পরে রাজপথে নামে। ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটির পর ১ জুলাই থেকে আবার জোরদার হয় আন্দোলন।

আন্দোলনের দাবি

আন্দোলনকারীদের প্রধান দাবিগুলো হল:

  • সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা বাতিল
  • সংখ্যালঘু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ন্যায্য হারে কোটা রাখা
  • সর্বোচ্চ ৫% কোটা নির্ধারণ করে নতুন আইন পাস করা

হিংসাত্মক মোড় নেয় আন্দোলন

১৫ জুলাই থেকে আন্দোলন হিংসাত্মক রূপ নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। এতে ৬ জন শিক্ষার্থী নিহত হন এবং শতাধিক আহত হন।

Bangladesh Quota Reform Movement: কোটা সংস্কারের দাবিতে উত্তাল বাংলাদেশ, মেধাবীদের স্বপ্নভঙ্গের আশঙ্কা

সরকারের প্রতিক্রিয়া

হিংসাত্মক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সরকার কঠোর অবস্থান নেয়:

  • ১৭ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা
  • আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি
  • ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন

সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ ডাক কোটা আন্দোলনকারীদের

‘শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব ও সোয়াটের ন্যক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা এবং কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের এক দফা দাবিতে’ আগামীকাল বৃহস্পতিবার সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন (সর্বাত্মক অবরোধ) কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা। এ কর্মসূচি চলাকালে শুধু হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা৷ জরুরি সেবার আওতায় গণমাধ্যমের গাড়ি ও সংবাদপত্র পরিবহনের গাড়ি বাধাহীনভাবে চলতে পারবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

আন্দোলনের প্রভাব

বিষয় প্রভাব
শিক্ষা সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ
যোগাযোগ রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত
অর্থনীতি ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত
রাজনীতি সরকার-বিরোধী দলের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই আন্দোলন শুধু কোটা নিয়ে নয়, বরং সামগ্রিক অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ। তাদের মতে:

  • বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক মন্দা এই আন্দোলনের অন্যতম কারণ
  • সরকারের সাথে আন্দোলনকারীদের সংলাপ জরুরি
  • কোটা নিয়ে আপোষ ছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া কঠিন

ছাত্রদের হুঙ্কারে কেঁপে উঠল রাজপথ: কোটা আন্দোলনের অজানা কাহিনী!

সামনের চ্যালেঞ্জ

সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হল দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা। এজন্য প্রয়োজন:

  • আন্দোলনকারীদের সাথে সংলাপ শুরু করা
  • কোটা নিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া
  • হিংসাত্মক ঘটনার বিচার নিশ্চিত করা

বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার ও আন্দোলনকারী উভয় পক্ষের সংযম প্রয়োজন। অন্যথায় দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।শিক্ষার্থীদের প্রাণ রক্ষা করতে হলে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ শিক্ষার্থীরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হবে। তাই এখনই সময় সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার। নইলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

About Author
Chanchal Sen

চঞ্চল সেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক। তিনি একজন অভিজ্ঞ লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক, যিনি পলিটিক্স নিয়ে লেখালিখিতে পারদর্শী। চঞ্চলের লেখায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের গভীর বিশ্লেষণ এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর সঠিক উপস্থাপন পাঠকদের মুগ্ধ করে। তার নিবন্ধ এবং মতামতমূলক লেখা বস্তুনিষ্ঠতা ও বিশ্লেষণধর্মিতার কারণে পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। চঞ্চল সেনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিভঙ্গি এবং গভীর গবেষণা তাকে রাজনৈতিক সাংবাদিকতার জগতে একটি স্বতন্ত্র স্থান প্রদান করেছে। তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে পাঠকদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং সমাজে পরিবর্তন আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন।