2025 Amavasya dates list: হিন্দু পঞ্জিকায় অমাবস্যা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিথি। প্রতি মাসে কৃষ্ণপক্ষের শেষ দিনে অমাবস্যা পালিত হয়। ২০২৫ সালে বারোটি অমাবস্যা পড়বে, যা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনগুলিতে পিতৃপুরুষদের স্মরণ, দান-ধ্যান, এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা হয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক ২০২৫ সালের অমাবস্যার তারিখ ও দিনগুলি।
২০২৫ সালের অমাবস্যার তালিকা
মাস | তিথি | তারিখ ও বার |
---|---|---|
জানুয়ারি | মাঘ অমাবস্যা | ২৯ জানুয়ারি, বুধবার |
ফেব্রুয়ারি | ফাল্গুন অমাবস্যা | ২৭ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার |
মার্চ | চৈত্র অমাবস্যা | ২৯ মার্চ, শনিবার |
এপ্রিল | বৈশাখ অমাবস্যা | ২৭ এপ্রিল, রবিবার |
মে | জ্যৈষ্ঠ অমাবস্যা | ২৭ মে, মঙ্গলবার |
জুন | আষাঢ় অমাবস্যা | ২৫ জুন, বুধবার |
জুলাই | শ্রাবণ অমাবস্যা | ২৪ জুলাই, বৃহস্পতিবার |
আগস্ট | ভাদ্র অমাবস্যা | ২৩ আগস্ট, শনিবার |
সেপ্টেম্বর | আশ্বিন অমাবস্যা | ২১ সেপ্টেম্বর, রবিবার |
অক্টোবর | কার্তিক অমাবস্যা | ২১ অক্টোবর, মঙ্গলবার |
নভেম্বর | অগ্রহায়ণ অমাবস্যা | ২০ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার |
ডিসেম্বর | পৌষ অমাবস্যা | ১৯ ডিসেম্বর, শুক্রবার |
বিশেষ অমাবস্যা তিথিসমূহ
২০২৫ সালে কয়েকটি বিশেষ অমাবস্যা পালিত হবে, যেগুলি হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
মৌনি অমাবস্যা
২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে মৌনি অমাবস্যা পালিত হবে। এই দিনে মৌন ব্রত পালন করা হয়, যা অত্যন্ত কঠিন একটি ব্রত। সাধকরা এই দিনে একটি শব্দও উচ্চারণ করেন না, যা আত্মসংযমের এক উচ্চ রূপ।
মহালয়া অমাবস্যা ২০২৪: পিতৃপক্ষের শেষ দিনে কী করবেন, জেনে নিন তারিখ, সময় ও তাৎপর্য
মহা শিবরাত্রি
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে মহা শিবরাত্রি উদযাপিত হবে। এই দিনে ভগবান শিবের আরাধনা করা হয় এবং অনেকে সারারাত জাগরণ করেন।
দীপাবলি অমাবস্যা
২১ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে দীপাবলি অমাবস্যা পালিত হবে। এই দিনটি হিন্দু ধর্মে সবচেয়ে বড় উৎসবের দিন হিসেবে পরিচিত। মা লক্ষ্মীর পূজা, ঘর সাজানো, আলোর উৎসব – এই দিনের বৈশিষ্ট্য।
অমাবস্যার তাৎপর্য
অমাবস্যা হিন্দু ধর্মে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিথি। এই দিনে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় কর্মকাণ্ড পালন করা হয়:
4১. পিতৃপুরুষদের স্মরণ: অমাবস্যায় পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ ও শ্রাদ্ধ করা হয়।২. দান-ধ্যান: এই দিনে দান করা বিশেষ পুণ্যের কাজ বলে মনে করা হয়।৩. উপবাস: অনেকে অমাবস্যার দিনে উপবাস পালন করেন।৪. গঙ্গাস্নান: অমাবস্যায় গঙ্গাস্নান করলে বিশেষ পুণ্য অর্জন হয় বলে বিশ্বাস করা হয়।৫. বিষ্ণু পূজা: এই দিনে ভগবান বিষ্ণুর পূজা করা হয়।
অমাবস্যার সময়কাল
অমাবস্যার সময়কাল সাধারণত ২৪ ঘণ্টা ধরে চলে। তবে, এর সঠিক সময় নির্ভর করে তিথির শুরু ও শেষের উপর। উদাহরণস্বরূপ:
- ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫: অমাবস্যা শুরু হবে ২৮ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭:৩৫ মিনিটে এবং শেষ হবে ২৯ জানুয়ারি বিকেল ৬:০৫ মিনিটে।
- ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫: অমাবস্যা শুরু হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮:৫৫ মিনিটে এবং শেষ হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬:১৪ মিনিটে।
অমাবস্যায় করণীয়
১. স্নান: অমাবস্যার দিনে সূর্যোদয়ের আগে স্নান করা উচিত।
২. পিতৃতর্পণ: পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে জল তর্পণ করা।
৩. দান: গরিব ও অসহায় মানুষদের দান করা।
৪. পূজা: ঘরে বা মন্দিরে দেবদেবীর পূজা করা।
৫. উপবাস: সম্পূর্ণ বা আংশিক উপবাস পালন করা।
৬. পাঠ: ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা।৭. ধ্যান: আধ্যাত্মিক চিন্তন ও ধ্যানে মগ্ন হওয়া।
১৫ই আগস্ট: ভারতসহ ৫টি দেশের স্বাধীনতা দিবস
বিশেষ দ্রষ্টব্য
১. প্রতিটি অমাবস্যার নিজস্ব তাৎপর্য রয়েছে। যেমন, মাঘ মাসের অমাবস্যাকে মৌনি অমাবস্যা বলা হয়, যেখানে মৌন ব্রত পালন করা হয়।
২. কার্তিক মাসের অমাবস্যায় দীপাবলি উৎসব পালিত হয়, যা হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসবগুলির একটি।
৩. আশ্বিন মাসের অমাবস্যায় সর্বপিতৃ অমাবস্যা পালিত হয়, যেখানে সকল পিতৃপুরুষের স্মরণে বিশেষ অনুষ্ঠান করা হয়।
৪. জ্যৈষ্ঠ মাসের অমাবস্যায় বট সাবিত্রী ব্রত পালিত হয়, যা বিশেষ করে বিবাহিত মহিলাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৫. অমাবস্যার দিনে কোনো শুভ কাজ করা নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়। তবে, দান-ধ্যান ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ড করা যায়।
২০২৫ সালের অমাবস্যার তালিকা থেকে আমরা দেখতে পাই যে, প্রতি মাসেই একটি করে অমাবস্যা রয়েছে। এই তিথিগুলি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। অমাবস্যা শুধু একটি ধর্মীয় তিথি নয়, এটি আধ্যাত্মিক উন্নতি, পারিবারিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং সামাজিক সংহতি বজায় রাখার একটি মাধ্যম। প্রতিটি অমাবস্যা আমাদের জীবনে নতুন করে ভাবতে, আত্মবিশ্লেষণ করতে এবং আমাদের মূল্যবোধকে পুনর্মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে। তাই, ২০২৫ সালের এই অমাবস্যার তালিকা শুধু তারিখের সংকলন নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা।