2025 TVS iQube Electric Scooter : ভারতীয় বৈদ্যুতিক দুই চাকার বাজারে TVS iQube একটি অগ্রণী নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০২৫ সালে কোম্পানি তাদের এই জনপ্রিয় ইলেকট্রিক স্কুটারে নতুন কিছু পরিবর্তন এনেছে যা গ্রাহকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। নতুন ব্যাটারি ক্যাপাসিটি, উন্নত ফিচার এবং সাশ্রয়ী মূল্যে TVS iQube এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছে।
নতুন TVS iQube এর দাম ও ভ্যারিয়েন্ট
২০২৫ সালের TVS iQube মোট পাঁচটি ভিন্ন ভ্যারিয়েন্টে পাওয়া যাচ্ছে, যার প্রতিটিরই আলাদা দাম রয়েছে। দিল্লি এক্স-শোরুম দামের ভিত্তিতে দেখা যাক:
বেস ভ্যারিয়েন্ট (২.২ কিলোওয়াট ঘন্টা): ৯৪,৪৩৪ টাকা
স্ট্যান্ডার্ড ভ্যারিয়েন্ট (৩.৫ কিলোওয়াট ঘন্টা): ১,০৮,৯৯৩ টাকা
iQube S (৩.৫ কিলোওয়াট ঘন্টা): ১,১৭,৬৪২ টাকা
iQube ST (৩.৫ কিলোওয়াট ঘন্টা): ১,২৭,৯৩৫ টাকা
iQube ST (৫.৩ কিলোওয়াট ঘন্টা): ১,৫৮,৮৩৪ টাকা
আগের বছরের তুলনায় সবগুলো ভ্যারিয়েন্টের দামই কমেছে, যা গ্রাহকদের জন্য একটি সুখবর।
TVS iQube এর ইঞ্জিন ও পারফরম্যান্স স্পেসিফিকেশন
মোটর পাওয়ার ও টর্ক
TVS iQube একটি শক্তিশালী ৪.৪ কিলোওয়াট BLDC (ব্রাশলেস ডিসি) মোটর দিয়ে সজ্জিত। এই হাব-মাউন্টেড মোটর ১৪০ নিউটন মিটার টর্ক উৎপাদন করতে পারে, যা শহুরে যাতায়াতের জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী। মোটরটি IP67 রেটিং সহ আসে, যার মানে এটি ধুলো ও পানি প্রতিরোধী।
গতি ও ত্বরণ
এই বৈদ্যুতিক স্কুটারের সর্বোচ্চ গতি ৭৮ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা। ০ থেকে ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতিতে পৌঁছাতে মাত্র ৪.২ সেকেন্ড সময় লাগে, যা শহরের ট্রাফিকে দ্রুত চলাচলের জন্য আদর্শ।
ব্যাটারি ক্যাপাসিটি ও চার্জিং বৈশিষ্ট্য
বিভিন্ন ব্যাটারি অপশন
নতুন TVS iQube এ বিভিন্ন ব্যাটারি ক্যাপাসিটির অপশন রয়েছে। সবচেয়ে ছোট ভ্যারিয়েন্টে ২.২ কিলোওয়াট ঘন্টা ব্যাটারি রয়েছে, যখন সর্বোচ্চ ভ্যারিয়েন্টে ৫.৩ কিলোওয়াট ঘন্টা ব্যাটারি পাওয়া যাচ্ছে। আগের বছরের তুলনায় কিছু ভ্যারিয়েন্টের ব্যাটারি ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি পেয়েছে।
চার্জিং সময় ও সুবিধা
স্কুটারটিতে ৯৫০ ওয়াট আউটপুটের চার্জার রয়েছে। ফাস্ট চার্জিং সুবিধা থাকায় তুলনামূলক কম সময়ে ব্যাটারি পূর্ণ চার্জ করা সম্ভব। চার্জিং পয়েন্ট স্কুটারেই বিল্ট-ইন রয়েছে, যা ব্যবহারে সুবিধাজনক।
রেঞ্জ ও মাইলেজ পারফরম্যান্স
ভ্যারিয়েন্ট অনুযায়ী TVS iQube এর রেঞ্জ পরিবর্তিত হয়। বেস ভ্যারিয়েন্টে ৯৪ কিলোমিটার রেঞ্জ পাওয়া যায়, যখন টপ ভ্যারিয়েন্ট ST (৫.৩ কিলোওয়াট ঘন্টা) এ IDC স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ২১২ কিলোমিটার রেঞ্জ পাওয়া যায়। মধ্যম ভ্যারিয়েন্টগুলোতে ১৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত রেঞ্জ রয়েছে।
ডিজাইন ও বিল্ড কোয়ালিটি
শারীরিক মাত্রা ও ওজন
TVS iQube এর দৈর্ঘ্য ১,৮০৫ মিলিমিটার, প্রস্থ ৬৪৫ মিলিমিটার এবং উচ্চতা ১,১৪০ মিলিমিটার। সিট হাইট ৭৭০ মিলিমিটার হওয়ায় বিভিন্ন উচ্চতার রাইডারদের জন্য উপযুক্ত। গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ১৫৭-১৬৫ মিলিমিটার, যা শহরের অসমতল রাস্তায় চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত।
নতুন ডিজাইন এলিমেন্ট
২০২৫ মডেলে কিছু নতুন ডিজাইন পরিবর্তন এসেছে। S এবং ST ভ্যারিয়েন্টে নতুন বেইজ রঙের সিট ও পিলিয়ন ব্যাকরেস্ট যোগ করা হয়েছে। স্কুটারের সামগ্রিক বিল্ড কোয়ালিটি চমৎকার এবং কোনো র্যাটলিং সমস্যা নেই।
প্রযুক্তি ও স্মার্ট ফিচার
ডিসপ্লে ও কানেক্টিভিটি
বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টে ৫ ইঞ্চি থেকে ৭ ইঞ্চি পর্যন্ত TFT ডিসপ্লে রয়েছে। টপ ভ্যারিয়েন্টে টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে পাওয়া যাচ্ছে। ব্লুটুথ কানেক্টিভিটির মাধ্যমে স্মার্টফোনের সাথে সংযোগ স্থাপন করা যায়।
নেভিগেশন ও অ্যাপ ইন্টিগ্রেশন
GPS নেভিগেশন সিস্টেম বিল্ট-ইন রয়েছে যা টার্ন-বাই-টার্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করে। TVS এর ডেডিকেটেড মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে রিয়েল-টাইম ভেহিকেল ট্র্যাকিং, রেঞ্জ মনিটরিং এবং অন্যান্য তথ্য পাওয়া যায়।
নিরাপত্তা ও সেফটি ফিচার
ব্রেকিং সিস্টেম
সামনে ডিস্ক ব্রেক এবং পেছনে ড্রাম ব্রেক রয়েছে। Combined Braking System (CBS) এর কারণে ব্রেকিং পারফরম্যান্স উন্নত। EBS (ইলেকট্রনিক ব্রেকিং সিস্টেম) ও রিজেনারেটিভ ব্রেকিং ফিচার রয়েছে।
অ্যান্টি-থেফট ও সিকিউরিটি
অ্যান্টি-থেফট অ্যালার্ম সিস্টেম রয়েছে যা স্কুটার নড়াচড়া করলে মালিককে সতর্ক করে। জিও-ফেন্সিং ফিচারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে গেলে নোটিফিকেশন পাওয়া যায়। ক্র্যাশ অ্যালার্ট সিস্টেম দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে জরুরি যোগাযোগে তথ্য পাঠায়।
স্টোরেজ ও প্র্যাক্টিক্যাল ফিচার
আন্ডার-সিট স্টোরেজ ৩০-৩২ লিটার যা দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখার জন্য পর্যাপ্ত। USB চার্জিং পোর্ট রয়েছে মোবাইল ডিভাইস চার্জ করার জন্য। ক্যারি হুক ও প্যাসেঞ্জার ফুটরেস্ট সহ বিভিন্ন প্র্যাক্টিক্যাল ফিচার যোগ করা হয়েছে।
বাজারে অবস্থান ও প্রতিযোগিতা
এপ্রিল ২০২৫ এর বিক্রয় তথ্য অনুযায়ী, TVS iQube ১৯,৭৩৬ ইউনিট বিক্রি করে প্রথমবারের মতো মাসিক বিক্রয়ে শীর্ষস্থান দখল করেছে। এটি Ola S1 এবং Bajaj Chetak কে পেছনে ফেলে দিয়েছে। আগের বছরের তুলনায় ১৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বিক্রয়।
সার্ভিসিং ও মেইনটেনেন্স
প্রোঅ্যাক্টিভ ডায়াগনসিস সিস্টেম রয়েছে যা নিয়মিত স্কুটারের অবস্থা পরীক্ষা করে। সার্ভিস ডিউ ইন্ডিকেটর মালিককে সার্ভিসের সময় হলে জানিয়ে দেয়। ওভার-দ্য-এয়ার (OTA) আপডেট সুবিধা রয়েছে যার মাধ্যমে সফটওয়্যার আপগ্রেড করা যায়।
২০২৫ সালের TVS iQube একটি সম্পূর্ণ প্যাকেজ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। উন্নত ব্যাটারি ক্যাপাসিটি, প্রতিযোগিতামূলক মূল্য, আধুনিক ফিচার এবং ভালো বিল্ড কোয়ালিটি – সবকিছু মিলিয়ে এটি ভারতীয় বৈদ্যুতিক স্কুটার বাজারে একটি শক্তিশালী অপশন। যারা পরিবেশবান্ধব যাতায়াত খুঁজছেন এবং আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা নিতে চান, তাদের জন্য TVS iQube একটি আদর্শ পছন্দ হতে পারে।