ওয়াইফাই রাউটার ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা: স্বাস্থ্য ঝুঁকি, প্রযুক্তিগত প্রভাব ও সমাধান

24/7 Wi-Fi router solutions: বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে ওয়াইফাই রাউটার এখন ঘরে ঘরে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই ডিভাইসটি দীর্ঘসময় চালু রাখার ফলে স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও শক্তির অপচয় সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়ছে। সাম্প্রতিক গবেষণা ও বিশেষজ্ঞ মতামত বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নানান চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ওয়াইফাই রাউটার থেকে নির্গত বিকিরণ: অদৃশ্য শত্রুর প্রভাব

ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন কীভাবে কাজ করে

ওয়াইফাই রাউটার ২.৪ GHz বা ৫ GHz ফ্রিকোয়েন্সিতে রেডিও তরঙ্গ নির্গত করে, যা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রামের অ-আয়নাইজিং অংশের অন্তর্ভুক্ত। যদিও এই মাত্রার বিকিরণকে সাধারণত “নিরাপদ” বিবেচনা করা হয়, দীর্ঘমেয়াদী এক্সপোজার নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। ইতালির তুরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাউটারের কাছাকাছি ঘুমানো ব্যক্তিদের মধ্যে মাইগ্রেনের ঝুঁকি ৪০% বেশি।

ওয়াই-ফাইয়ের পাসওয়ার্ড ভুলে গেলেও বের করে ফেলুন এক ক্লিকে : [Step-by-Step Wifi Password Guide]

স্বাস্থ্যগত প্রভাব: বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ও বিতর্ক

স্নায়বিক প্রভাব:

মস্তিষ্কের কার্যক্রমে বিঘ্ন: রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি টিস্যু ভেদ করে মেলাটোনিন উৎপাদন কমাতে পারে, যা ঘুমের চক্রে ব্যাঘাত ঘটায়।
শিশু ও গর্ভবতীদের জন্য উচ্চ ঝুঁকি: ভ্রূণের স্নায়বিক বিকাশ ও শিশুদের জ্ঞানীয় দক্ষতায় নেতিবাচক প্রভাবের প্রমাণ মিলেছে ইঁদুরের উপর চালিত গবেষণায়।

দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকি:

ক্যান্সার: ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (IARC) রেডিওফ্রিকোয়েন্সিকে “সম্ভাব্য কার্সিনোজেন” হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে।
প্রজনন স্বাস্থ্য: পুরুষদের স্পার্ম কাউন্ট কমে যাওয়া ও ডিএনএ ক্ষতির সাথে সম্পর্কিত গবেষণা রয়েছে।

প্রযুক্তিগত ও ব্যবহারিক দিক: নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব

নিরাপত্তা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

পুরানো রাউটারে ফার্মওয়্যার আপডেট বন্ধ হয়ে গেলে হ্যাকারদের জন্য সুযোগ তৈরি হয়। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ব্রায়ান নিউমাইস্টারের মতে, রাউটার বন্ধ থাকলে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি শূন্যে নেমে আসে। তবে আধুনিক রাউটারে WPA3 এনক্রিপশন ও ফায়ারওয়াল বৈশিষ্ট্য থাকলে ঝুঁকি কম।

শক্তি খরচ ও পরিবেশগত প্রভাব

সাধারণ একটি রাউটার গড়ে ৫-২০ ওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। গণনা অনুযায়ী:

দৈনিক খরচ = ১০ ওয়াট × ২৪ ঘণ্টা = ২৪০ ওয়াট-ঘণ্টা

বাৎসরিক খরচ = ২৪০ × ৩৬৫ = ৮৭.৬ কিলোওয়াট-ঘণ্টা

এটি প্রায় ৫০০ টাকার বার্ষিক খরচ বাড়াতে পারে।

বিশেষজ্ঞ পরামর্শ: ভারসাম্য বজায় রাখার কৌশল

স্থান নির্ধারণ ও ব্যবহারের সময়সূচি

দূরত্ব বজায় রাখুন: শোয়ার ঘর থেকে অন্তত ১০ ফুট দূরে রাউটার স্থাপন করুন।
টাইমার সেট করুন: রাত ১১টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত অটো শাটঅফ ফিচার ব্যবহার করুন।

বিকল্প প্রযুক্তির ব্যবহার

ইথারনেট কেবল: ডেস্কটপ ও স্মার্ট টিভিতে ওয়ায়ার্ড কানেকশন ব্যবহারে বিকিরণ ৯০% কমে।
ইউটিপি ক্যাবল: ১০০ মিটার পর্যন্ত ডেটা ট্রান্সমিশনে সক্ষম, কোন রেডিয়েশন ছাড়াই।