পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে একটি নতুন মোড় এল। দেশের ২৪৭ জন বিখ্যাত বিজ্ঞানী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। এই চিঠিতে তাঁরা অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং তাদের দাবিগুলি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত ৫ অক্টোবর থেকে কলকাতার ধর্মতলায় ৬ জন জুনিয়র ডাক্তার অনশন শুরু করেছেন। তাদের প্রধান দাবি হল আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধর্ষিত ও খুন হওয়া মহিলা ডাক্তারের ন্যায়বিচার এবং হাসপাতালে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা। এই অনশন আজ ৮ম দিনে পড়েছে।
বিজ্ঞানীরা তাদের চিঠিতে লিখেছেন, “আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে কয়েকজন তরুণ চিকিৎসক গত কয়েকদিন ধরে অনশনে রয়েছেন। তাদের স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। আমরা আপনাকে অনুরোধ করছি যে আপনি ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ করুন এবং তাদের ন্যায্য দাবিগুলি পূরণ করুন।”
Junior Doctors Hunger Strike: সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে আমরণ অনশনে ৬ জুনিয়র ডাক্তার
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন পদার্থবিজ্ঞানী অমলেন্দু চক্রবর্তী, প্রাক্তন অধ্যাপক পার্থ ঘোষ, জীববিজ্ঞানী উত্তম পাল এবং অন্যান্য বিশিষ্ট বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলেছেন, চিকিৎসকদের দাবিগুলি যৌক্তিক এবং সেগুলি পূরণ করা উচিত।
বিজ্ঞানীরা আরও উল্লেখ করেছেন যে স্বাস্থ্য পরিষেবায় দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। তাঁরা এই বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, “আমরা আশা করি আপনি এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন এবং রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি করবেন।”
অনশনরত ডাক্তারদের মধ্যে একজন, ডাঃ অনিকেত মাহাতোর স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি অক্সিজেন সাপোর্টে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বিজ্ঞানীদের এই চিঠি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
জুনিয়র ডাক্তারদের প্রধান দাবিগুলি হল:
1. আর জি কর ঘটনার ন্যায়বিচার
2. হাসপাতালে নিরাপত্তা বৃদ্ধি
3. স্বাস্থ্য সচিব এন এস নিগমকে অপসারণ
4. হাসপাতালে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন
5. মহিলা পুলিশ কর্মী নিয়োগ
6. ডাক্তার ও নার্সদের শূন্যপদ পূরণ
Indian Medical Association (IMA) এর সভাপতি আর ভি আসোকান মুখ্যমন্ত্রীকে একটি পৃথক চিঠি লিখেছেন। তিনি বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গ সরকার সমস্ত দাবি পূরণ করতে সক্ষম। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও নিরাপত্তা কোনও বিলাসিতা নয়, এটি একটি পূর্বশর্ত।”
অন্যদিকে, কলকাতা পুলিশ অনশনরত ডাক্তারদের স্বাস্থ্যের অবনতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বলেছেন, “আমরা তাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখছি। আমরা চাই তারা অনশন প্রত্যাহার করুক।”
রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছেন, “আমরা ডাক্তারদের দাবিগুলি খতিয়ে দেখছি। আমরা তাদের সাথে আলোচনা করতে প্রস্তুত।”
এই পরিস্থিতিতে, বিজ্ঞানীদের চিঠি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটি দেখায় যে শুধু চিকিৎসক সমাজ নয়, দেশের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীরাও এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁরা চান যে সরকার দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করুক।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে তা রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সরকারের উচিত দ্রুত ডাক্তারদের সাথে আলোচনায় বসা এবং তাদের ন্যায্য দাবিগুলি পূরণ করা।
এদিকে, নাগরিক সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকেও ডাক্তারদের সমর্থনে কণ্ঠ উঠছে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ছাত্র সংগঠনগুলি অনশনরত ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা বলছে, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার মান উন্নত করা জরুরি।
সামগ্রিকভাবে, এই পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞানীদের চিঠি এবং ডাক্তারদের অনশন প্রমাণ করে যে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। আগামী দিনগুলিতে সরকার কীভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে তার উপর নজর থাকবে সকলের।