Vitamin deficiency bad breath: মুখের দুর্গন্ধ একটি অত্যন্ত বিরক্তিকর সমস্যা যা অনেকেই প্রতিদিন অনুভব করেন। অনেক সময় নিয়মিত দাঁত মাজা ও মুখ পরিষ্কার রাখার পরেও এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। এর পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে, তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে কিছু নির্দিষ্ট ভিটামিনের অভাব মুখের দুর্গন্ধের অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে।
মুখের দুর্গন্ধের সাথে জড়িত প্রধান ৩টি ভিটামিন
পুষ্টিবিদ নমামি অগ্রবাল তাঁর একটি সাম্প্রতিক ভিডিওতে উল্লেখ করেছেন যে নিম্নলিখিত ৩টি ভিটামিনের অভাব মুখের দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে:
১. ভিটামিন ডি
ভিটামিন ডি শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান। এটি ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে এবং দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, খাবার থেকে এই ভিটামিন সহজে পাওয়া যায় না। ফলে অনেকেরই শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দেখা যায়।শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি না থাকলে দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এনামেল ক্ষয়ে যেতে পারে, যার ফলে দাঁতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এগুলো মুখের দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে।পুষ্টিবিদ অগ্রবাল বলেন, “জোয়ার ও দাঁত হাড় দিয়ে তৈরি এবং শক্তিশালী হাড়ের জন্য ভিটামিন ডি প্রয়োজন! ভিটামিন ডি-এর অভাবে হাড় ভেঙে যেতে পারে এবং দাঁত আলগা হয়ে যেতে পারে। এটি মুখের দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে!”বয়স বাড়ার সাথে সাথে যারা পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি গ্রহণ করেন না বা যাদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি রয়েছে, তারা স্বাদ ও গন্ধের ক্ষতির অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেন।
২. ভিটামিন সি
ভিটামিন সি-এর অভাব মুখের দুর্গন্ধের আরেকটি প্রধান কারণ হতে পারে। এই ভিটামিনের অভাবে মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে, যা মুখের দুর্গন্ধের কারণ হয়।পুষ্টিবিদ অগ্রবাল বলেন, “ভিটামিন সি-এর অভাবের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য লক্ষণগুলির মধ্যে একটি হল মাড়ি থেকে রক্তপাত + যা মুখের দুর্গন্ধের কারণ হয়!”ভিটামিন সি-এর অভাবে মুখে বিভিন্ন ধরনের ক্ষত দেখা দিতে পারে। এই ক্ষতগুলি থেকে মুখে সংক্রমণ হতে পারে। মুখে জীবাণু সংক্রমণ হলে দুর্গন্ধ তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়।ভিটামিন সি মুখের টিস্যু পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে। এটি কেল, ব্রকলি, জাম এবং সাইট্রাস ফলে পাওয়া যায়।
মুখের গড়নের সাথে মানানসই টিপ: সৌন্দর্য বৃদ্ধির সহজ উপায়
৩. আয়রন
আয়রনের অভাব মুখের দুর্গন্ধের তৃতীয় প্রধান কারণ হতে পারে। রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল আয়রনের অভাব। আর অ্যানিমিয়ার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই মুখে দুর্গন্ধ হয়।পুষ্টিবিদ অগ্রবাল বলেন, “আয়রনের অভাবে জিহ্বায় প্রদাহ হতে পারে এবং মুখে ঘা হতে পারে + এছাড়াও মুখের দুর্গন্ধ হতে পারে”। এটি মুখের দুর্গন্ধের আরও সাধারণ কারণগুলির মধ্যে একটি।
মুখের দুর্গন্ধ প্রতিরোধে করণীয়
মুখের দুর্গন্ধ প্রতিরোধ করতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:
১. নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করুন ও ফ্লস করুন
২. জিভ পরিষ্কার করুন
৩. প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন
৪. ধূমপান ত্যাগ করুন
৫. নিয়মিত দাঁতের চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
৬. সুষম খাবার গ্রহণ করুন
৭. প্রয়োজনে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নিন
মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সহায়ক খাবার
কিছু নির্দিষ্ট খাবার রয়েছে যা মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে। এগুলো হল:
১. কাঁচা ফল ও সবজি: আপেল, গাজর, সেলারি ইত্যাদি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার মুখ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
২. দই: গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৩ আউন্স দই খেলে ৬ সপ্তাহের মধ্যে মুখের দুর্গন্ধ ৮০% কমে যেতে পারে।
৩. মশলা ও হার্বস: পার্সলি, স্পিয়ারমিন্ট, রোজমেরি ইত্যাদি মুখের দুর্গন্ধ কমাতে সাহায্য করে।
৪. চা: গ্রিন টি, ব্ল্যাক টি ইত্যাদি মুখের ব্যাকটেরিয়া দমন করে দুর্গন্ধ কমায়।
৫. সুগারলেস চুইংগাম: লালা উৎপাদন বাড়িয়ে মুখ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
৬. পানি: প্রচুর পানি পান করলে মুখ থেকে দুর্গন্ধযুক্ত কণা ধুয়ে যায়।
৭. আদা: আদাতে থাকা ৬-জিঞ্জেরল নামক উপাদান মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।
৮. চেরি: চেরিতে থাকা যৌগ মিথাইল মারক্যাপটান নামক দুর্গন্ধযুক্ত উপাদান দূর করে।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করুন ৭ দিনে – বিশেষজ্ঞদের গোপন টিপস ফাঁস!
মুখের দুর্গন্ধ একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এর পিছনে গুরুতর কারণ লুকিয়ে থাকতে পারে। ভিটামিন ডি, ভিটামিন সি এবং আয়রনের অভাব এই সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।পুষ্টিবিদ অগ্রবাল বলেন, “আপনার প্রয়োজনীয় অঙ্গগুলির পরীক্ষা করান এবং যদি কোনও ঘাটতি থাকে তবে খাবার ও সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে আপনার গ্রহণ বাড়ান!”মনে রাখবেন, আমাদের শরীরের লক্ষণ ও অস্বাভাবিকতা আমাদের জানাতে চায় যে শরীরের কী প্রয়োজন। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান এবং সুষম খাবার গ্রহণ করুন যাতে আপনার পুষ্টির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।