Xiaomi 15 Ultra review: স্মার্টফোনের দুনিয়ায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চমক নিয়ে আসছে বিভিন্ন ব্র্যান্ড। এর মধ্যে Xiaomi তাদের অসাধারণ ডিজাইন, শক্তিশালী পারফরম্যান্স এবং উন্নত ক্যামেরার জন্য বরাবরই সবার নজর কেড়েছে। ২০২৫ সালে লঞ্চ হওয়া Xiaomi 15 Ultra এই ধারাবাহিকতার আরেকটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এই ফোনটি নিয়ে টেকপ্রেমীদের মধ্যে আলোচনা তুঙ্গে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই ফোনটি কি সত্যিই আপনার জন্য? এটি কেনার পক্ষে কী কী কারণ আছে এবং কেন এটি এড়িয়ে যাওয়া উচিত? আজকের এই লেখায় আমরা Xiaomi 15 Ultra-এর ৪টি কেনার কারণ এবং ২টি এড়িয়ে যাওয়ার কারণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাই চলুন, এই ফোনটির ভালো-মন্দ দিকগুলো জেনে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিই এটি আপনার জন্য উপযুক্ত কি না!
Xiaomi 15 Ultra: এক নজরে পরিচিতি
Xiaomi 15 Ultra ২০২৫ সালের মার্চ মাসে ভারতে লঞ্চ হয়েছে এবং এটি Xiaomi-এর প্রিমিয়াম ফ্ল্যাগশিপ সিরিজের সর্বশেষ সংযোজন। এই ফোনটি Qualcomm-এর শক্তিশালী Snapdragon 8 Elite চিপসেট, Leica-এর সাথে যৌথভাবে তৈরি চারটি ক্যামেরা এবং ৫৪১০ এমএএইচ ব্যাটারির মতো ফিচার নিয়ে এসেছে। এটির দাম শুরু হয়েছে প্রায় ১,০৯,৯৯৯ টাকা থেকে। এই ফোনটি ফটোগ্রাফি প্রেমীদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে, তবে এর পারফরম্যান্স এবং ডিজাইনও অনেকের মন জয় করেছে। কিন্তু সবকিছুর মতো এটিরও কিছু দুর্বলতা রয়েছে। চলুন, বিস্তারিত জানা যাক।
“ফ্ল্যাগশিপ বনাম মিড-রেঞ্জ: Xiaomi 14 Civi এবং Realme GT 6T-এর মুখোমুখি লড়াই”
Xiaomi 15 Ultra কেনার ৪টি কারণ
১. অসাধারণ ক্যামেরা সিস্টেম
Xiaomi 15 Ultra-এর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এর ক্যামেরা। এই ফোনে Leica-এর সাথে যৌথভাবে তৈরি চারটি ক্যামেরা রয়েছে, যার মধ্যে একটি ৫০ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি লেন্স (Sony LYT 900 সেন্সর), একটি ২০০ মেগাপিক্সেল আলট্রা-টেলিফটো লেন্স, একটি ৫০ মেগাপিক্সেল ফ্লোটিং টেলিফটো এবং একটি ৫০ মেগাপিক্সেল আলট্রা-ওয়াইড লেন্স রয়েছে। এই ক্যামেরাগুলো দিনের আলোতে এবং রাতের অন্ধকারে দুটোতেই দুর্দান্ত ছবি তুলতে পারে। ফটোগ্রাফি প্রেমীদের জন্য Leica Authentic এবং Vibrant মোড রয়েছে, যা ছবিতে প্রাণবন্ত রং এবং বিস্তারিত ডিটেইল যোগ করে। আপনি যদি কনটেন্ট ক্রিয়েটর হন বা ছবি তুলতে ভালোবাসেন, তাহলে এই ফোনটি আপনার জন্য একটি স্বপ্নের ডিভাইস হতে পারে।
২. শক্তিশালী পারফরম্যান্স
এই ফোনটিতে রয়েছে Qualcomm-এর সর্বশেষ Snapdragon 8 Elite চিপসেট, যা ২০২৫ সালের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রসেসরগুলোর একটি। এর সাথে ১৬ জিবি LPDDR5x RAM এবং ৫১২ জিবি UFS 4.1 স্টোরেজ এটিকে দৈনন্দিন কাজ থেকে শুরু করে ভারী গেমিং পর্যন্ত সবকিছুতে অসাধারণ করে তুলেছে। আপনি যদি PUBG বা Call of Duty-এর মতো গেম খেলতে পছন্দ করেন, তাহলে এই ফোন আপনাকে মসৃণ গেমিং অভিজ্ঞতা দেবে। এমনকি মাল্টিটাস্কিং-এও এটি কোনো সমস্যা ছাড়াই কাজ করে।
৩. দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি ও দ্রুত চার্জিং
Xiaomi 15 Ultra-এ রয়েছে ৫৪১০ এমএএইচ-এর বড় ব্যাটারি, যা সারাদিন ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট। এটি ৯০ ওয়াটের HyperCharge এবং ৮০ ওয়াটের ওয়্যারলেস HyperCharge সাপোর্ট করে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, এটি ০ থেকে ১০০ শতাংশ চার্জ হতে মাত্র ৪৭ মিনিট সময় নেয়। আপনি যদি ব্যস্ত জীবনযাপন করেন এবং দ্রুত চার্জিং ফোন চান, তাহলে এটি আপনার জন্য একটি বড় প্লাস পয়েন্ট।
৪. প্রিমিয়াম ডিজাইন ও ডিসপ্লে
এই ফোনটির ৬.৭৩ ইঞ্চি WQHD+ AMOLED ডিসপ্লে রয়েছে, যা ১২০ হার্টজ রিফ্রেশ রেট এবং ৩২০০ নিটস উজ্জ্বলতা সাপোর্ট করে। এটি HDR10+ এবং Dolby Vision-এর মতো ফিচারও দেয়। ফলে ভিডিও দেখা বা গেম খেলার সময় আপনি একটি দারুণ অভিজ্ঞতা পাবেন। এছাড়া এটির ডিজাইনও বেশ আকর্ষণীয় – Silver-Chrome রঙে এটি দেখতে অসাধারণ। IP68 রেটিং থাকায় এটি পানি ও ধুলো থেকেও সুরক্ষিত।
Xiaomi 15 Ultra এড়িয়ে যাওয়ার ২টি কারণ
১. সীমিত AI ফিচার ও রঙের বিকল্প
Xiaomi 15 Ultra-এর একটি বড় দুর্বলতা হলো এর সীমিত AI-ভিত্তিক প্রোডাকটিভিটি ফিচার। Samsung Galaxy S25 Ultra বা iPhone 16 Pro Max-এর মতো ফোনে যেসব উন্নত AI টুল রয়েছে, সেগুলো এখানে অনুপস্থিত। এছাড়া এটি শুধুমাত্র একটি রঙে (Silver-Chrome) পাওয়া যায়, যেখানে প্রতিযোগীরা একাধিক রঙের বিকল্প দেয়। আপনি যদি বৈচিত্র্য পছন্দ করেন, তাহলে এটি আপনাকে হতাশ করতে পারে।
২. দামের তুলনায় সামান্য উন্নতি
এই ফোনটির দাম ১,০৯,৯৯৯ টাকা, যা Xiaomi 14 Ultra-এর তুলনায় ১০,০০০ টাকা বেশি। কিন্তু এর ফিচারগুলোতে খুব বেশি পরিবর্তন নেই। উদাহরণস্বরূপ, প্রাইমারি ক্যামেরায় ভেরিয়েবল অ্যাপারচার সুবিধা সরিয়ে ফেলা হয়েছে, যা আগের মডেলে ছিল। তাই আপনি যদি Xiaomi 14 Ultra-এর মালিক হন, তাহলে এটি কেনার জন্য খুব বেশি নতুনত্ব পাবেন না।
Xiaomi 15 Ultra-এর ভালো-মন্দ
Xiaomi 15 Ultra ফটোগ্রাফি এবং পারফরম্যান্সের দিক থেকে অনেক এগিয়ে। এর ২০০ মেগাপিক্সেল টেলিফটো লেন্স এবং ১ ইঞ্চি প্রাইমারি সেন্সর এটিকে বাজারের অন্যতম সেরা ক্যামেরা ফোন বানিয়েছে। TechRadar-এর একটি রিভিউতে বলা হয়েছে, এটি “স্মার্টফোন ক্যামেরার জগতে একটি নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে।” তবে এটির কিছু দিকে উন্নতির সুযোগ আছে। উদাহরণস্বরূপ, গেমিংয়ের সময় ফোনটি কিছুটা গরম হয়ে যায় এবং HDR ছবিতে মাঝে মাঝে অসামঞ্জস্য দেখা যায়।
এছাড়া, এটি Android 15-ভিত্তিক HyperOS 2-এ চলে, যা ব্যবহারে মসৃণ। তবে AI ফিচারের অভাব এবং সীমিত রঙের বিকল্প এটিকে প্রতিযোগীদের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে রাখে। আপনি যদি ফটোগ্রাফি এবং পারফরম্যান্সকে প্রাধান্য দেন, তাহলে এটি দারুণ। কিন্তু যদি বৈচিত্র্য বা অতিরিক্ত AI টুল চান, তাহলে অন্য অপশন দেখতে পারেন।
Vivo V50 থেকে iQoo Neo 10R: ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ আসছে যেসব নতুন মোবাইল
Xiaomi 15 Ultra কি আপনার জন্য?
Xiaomi 15 Ultra একটি শক্তিশালী ফ্ল্যাগশিপ ফোন, যা ক্যামেরা, পারফরম্যান্স, ব্যাটারি এবং ডিজাইনের দিক থেকে অনেক কিছু দিতে পারে। এটি কেনার ৪টি কারণ – অসাধারণ ক্যামেরা, শক্তিশালী প্রসেসর, দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি এবং প্রিমিয়াম ডিসপ্লে – এটিকে ফটোগ্রাফি প্রেমী এবং টেকপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলে। তবে এড়িয়ে যাওয়ার ২টি কারণ – সীমিত AI ফিচার এবং দামের তুলনায় সামান্য উন্নতি – এটিকে সবার জন্য উপযুক্ত করে না।
তাই আপনার চাহিদা কী তা ভেবে দেখুন। আপনি যদি ক্যামেরা ও পারফরম্যান্সের জন্য বড় বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত থাকেন, তাহলে Xiaomi 15 Ultra আপনার জন্য। কিন্তু যদি বৈচিত্র্য বা বেশি AI ফিচার চান, তাহলে বাজারে অন্য অপশনও রয়েছে। আপনার মতামত কী? নিচে কমেন্ট করে জানান!
