Cortisol and stress management: কর্টিসল হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন যা আমাদের শরীরের নানা কাজে প্রভাব ফেলে। এটি আমাদের এড্রেনাল গ্ল্যান্ড থেকে নিঃসৃত হয় এবং স্ট্রেস হরমোন হিসেবেও পরিচিত। কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে তা আমাদের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি।
কর্টিসল কী এবং এর কাজ কী?
কর্টিসল হলো একটি স্টেরয়েড হরমোন যা আমাদের এড্রেনাল গ্ল্যান্ড থেকে নিঃসৃত হয়। এটি আমাদের শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ নেয়, যেমন:
- স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ
- মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ
- প্রদাহ কমানো
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
- রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ানো
- ঘুম-জাগরণ চক্র নিয়ন্ত্রণ
- স্ট্রেস মোকাবেলায় শক্তি যোগানো
কর্টিসলের মাত্রা দিনের বিভিন্ন সময়ে ওঠানামা করে। সকালে এর মাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে এবং রাতের দিকে কমতে থাকে।
কর্টিসলের মাত্রা বেশি হলে কী হয়?
কর্টিসলের মাত্রা বেশি হলে নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে:
- ওজন বৃদ্ধি, বিশেষত পেট ও উপরের পিঠের দিকে
- মুখমণ্ডল গোলাকার হয়ে যাওয়া
- ত্বকে ব্রণ হওয়া
- ত্বক পাতলা হয়ে যাওয়া
- সহজে আঘাত পাওয়া
- পেশীর দুর্বলতা
- অত্যধিক ক্লান্তি
- খিটখিটে মেজাজ
- মনোযোগ দিতে অসুবিধা
- উচ্চ রক্তচাপ
- মাথাব্যথা
চাপে আছেন? জানুন হাই-লো প্রেসারের গোপন সংকেত
কর্টিসল নিয়ন্ত্রণের ৪টি উপায়
কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নিম্নলিখিত ৪টি উপায় অনুসরণ করা যেতে পারে:
১. নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো
নিয়মিত একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠা কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
২. নিয়মিত ব্যায়াম করা
গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ব্যায়াম করলে ভালো ঘুম হয় এবং স্ট্রেস কমে। এর ফলে কর্টিসলের মাত্রাও কমে আসে। সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন ৩০ মিনিট করে ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।
৩. স্ট্রেস কমানো
মন শান্ত রাখার চেষ্টা করুন। মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস ইত্যাদির মাধ্যমে স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করুন। এতে কর্টিসলের মাত্রা কমবে।
চিনি ব্যবহারের অন্ধকার দিক: জেনে নিন কি কি ক্ষতি করছেন নিজের
৪. সুষম খাবার খাওয়া
কিছু খাবার কর্টিসলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এগুলো নিয়মিত খাওয়ার চেষ্টা করুন:
খাবার | উপকারিতা |
---|---|
গ্রিন টি | অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, স্ট্রেস কমায় |
চর্বিযুক্ত মাছ | ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ |
সূর্যমুখীর বীজ | ভিটামিন ই সমৃদ্ধ |
মিষ্টি আলু | কম্প্লেক্স কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ |
কর্টিসলের মাত্রা পরীক্ষা
কর্টিসলের মাত্রা পরীক্ষা করার জন্য রক্ত, লালা, মূত্র বা চুলের নমুনা ব্যবহার করা হয়। সাধারণত সকালে ৯টার সময় রক্তে কর্টিসলের স্বাভাবিক মাত্রা থাকে ১৪০-৭০০ nmol/L বা ৫-২৫ μg/dL।তবে কর্টিসলের মাত্রা দিনের বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয় বলে একাধিকবার পরীক্ষা করা প্রয়োজন। লালার মাধ্যমে দিনে ৪ বার পরীক্ষা করলে সবচেয়ে নির্ভুল ফলাফল পাওয়া যায়।
কর্টিসল আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হরমোন। এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে তা নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, স্ট্রেস কমানো এবং সুষম খাবার খাওয়ার মাধ্যমে কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। কোনো সমস্যা অনুভব করলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।