Shah Rukh Khan secret habits: বলিউডের ‘কিং খান’ শাহরুখ খান ৫৯ বছর বয়সেও তাঁর অসাধারণ ফিটনেস এবং এনার্জি নিয়ে সবাইকে অবাক করে দিচ্ছেন। ‘পাঠান’ ও ‘জওয়ান’ চলচ্চিত্রে তাঁর সিক্স-প্যাক অ্যাবস এবং বলিষ্ঠ শরীর দেখে অনেকেই ভাবেন, কীভাবে একজন ৫০ উর্ধ্ব ব্যক্তি এমন দুর্দান্ত ফিটনেস বজায় রাখেন। আসলে শাহরুখের জীবনযাপনে রয়েছে কিছু বিশেষ অভ্যাস, যা তাঁকে সবসময় সক্রিয় এবং যৌবনোজ্জ্বল রাখে। আজকের এই ব্লগে আমরা জানব শাহরুখ খানের এমন ৫টি গোপন অভ্যাস যা তাঁর অসাধারণ সাফল্য এবং স্বাস্থ্যের পিছনে প্রধান ভূমিকা পালন করে।
শাহরুখের অস্বাভাবিক ঘুমের রুটিন: রাত ৫টায় শুরু হয় ‘কিং খানের’ নিদ্রা
বলিউডের অন্যান্য তারকাদের থেকে একদম আলাদা শাহরুখের ঘুমের রুটিন। অধিকাংশ অভিনেতা-অভিনেত্রী যখন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কাজে যান, ঠিক তখনই শাহরুখ খান ঘুমাতে যান। একটি সাক্ষাৎকারে শাহরুখ জানিয়েছেন, “আমি ভোর ৫টায় ঘুমাতে যাই। যখন মার্ক ওয়ালবার্গ (হলিউড অভিনেতা) ঘুম থেকে উঠেন, আমি ঠিক তখনই ঘুমাতে যাই।”
এই রুটিন হলিউড অভিনেতা অক্ষয় কুমারের একদম বিপরীত, যিনি সকাল ৪টায় উঠে ফিটনেস ট্রেনিং শুরু করেন। শাহরুখ সাধারণত সকাল ৯ থেকে ১০টার মধ্যে জেগে উঠেন যদি শুটিং থাকে। এই অস্বাভাবিক রুটিন তাঁকে কিভাবে সাহায্য করে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিটি ব্যক্তির শারীরিক ছন্দ (circadian rhythm) আলাদা, এবং শাহরুখ হয়তো “নাইট আউল” শ্রেণীর মানুষ, যাদের শরীর রাতে বেশি সক্রিয় থাকে।
দিনে একবার আহার: শাহরুখের diet secret যা তাঁর স্লিম ফিগার বজায় রাখে
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, শাহরুখ খান দিনে মাত্র একবার খাবার খান। ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকার সাথে আলাপচারিতায় তিনি জানিয়েছেন যে, তাঁর দিনে একটি মাত্র খাবার খাওয়ার অভ্যাস আছে। এটি ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং নয়, বরং তাঁর নিজের ব্যক্তিগত পছন্দ।
BCCI-র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজীব শুক্লা একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, “শাহরুখ খানের খাবার সম্পর্কে একটি অদ্ভুত মতবাদ আছে। তিনি বলেন, ‘না খেয়ে এখন পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি। লোকেরা খেয়েই মারা যায়।’ খাবার তাঁর কাছে অগ্রাধিকার নয়। তিনি খাবারে বিশ্বাস করেন না।”
খাবারে শাহরুখের অরুচির কারণ
জুলাই ২০২০-এ শেফ শিপ্রা খান্নার ইউটিউব চ্যানেলে শাহরুখ জানিয়েছিলেন: “আমার মা আমাকে ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত খাওয়াতেন, যতদিন তিনি মারা যাননি। তিনি ডাল, চাল, পাপড় আর পেঁয়াজ মিশিয়ে আমাকে খাওয়াতেন। বাবা-মা চলে যাওয়ার পর আমি খাবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।”
মধ্যরাতে ওয়ার্কআউট: অস্বাভাবিক সময়ে ফিটনেস রুটিন
কিং খান কখন ওয়ার্কআউট করেন? রাত ২টায়! হ্যাঁ, আপনি ঠিকই পড়েছেন। শাহরুখ জানিয়েছেন, “আমি সাধারণত রাত ২টায় বাড়ি ফিরি, তারপর স্নান করে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ওয়ার্কআউট করি।”তিনি প্রতিদিন জিমে আধা ঘণ্টা সময় দেন।
শাহরুখের ফিটনেস ট্রেনার প্রশান্ত সাওয়ন্ত, যিনি প্রায় ২৩ বছর ধরে তাঁকে ট্রেনিং দিচ্ছেন, জানিয়েছেন যে ‘পাঠান’ চলচ্চিত্রের জন্য শাহরুখের ওয়ার্কআউট রুটিন অত্যন্ত কঠোর ছিল।
‘পাঠান’ এর জন্য শাহরুখের ওয়ার্কআউট রুটিন
‘পাঠান’ চলচ্চিত্রের জন্য শাহরুখের ফিটনেস রুটিনে শক্তি বৃদ্ধি করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। তিনি প্রচুর পুল-আপ এবং পুশ-আপ করতেন। চলচ্চিত্রে অ্যাকশন সিকোয়েন্স খুব বেশি ছিল, তাই শাহরুখকে সেই দৃশ্যগুলি করার জন্য স্ট্যামিনা বাড়াতে হয়েছিল। আইসোমেট্রিক মুভমেন্ট এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে একসাথে কাজ করে তিনি নিজেকে তৈরি করেছিলেন।
কোভিড পরিস্থিতিতেও তিনি প্রতিদিন ট্রেনিং করতেন এবং তাঁর প্রগতির ছবি প্রশান্তকে পাঠাতেন। এমনকি তাঁর কাঁধে ইনজুরি থাকা সত্ত্বেও, তাঁর কাঁধের শক্তি বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়া হয়েছিল।
খাবারে অনাগ্রহ: সাফল্যের পিছনে অদ্ভুত মনোভাব
অস্বাভাবিকভাবে, শাহরুখ খান খাবারে বিশেষ আগ্রহ দেখান না। প্রশান্ত সাওয়ন্ত জানিয়েছেন, “শাহরুখ খান খুব বেশি খেতে পছন্দ করেন না”। তবে পেশী গঠনের জন্য তাঁর ডায়েটে অতিরিক্ত প্রোটিন যোগ করা হয়েছিল।
হিন্দুস্তান টাইমসের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে শাহরুখ বলেছিলেন, “কিছুই না! তবে আমি নির্দিষ্ট কোনো চরিত্রের জন্য ফিট হতে হলে সাদা চাল, সাদা রুটি, চিনি এবং অ্যালকোহল ত্যাগ করি এবং কম পরিমাণে খাবার খাই। আমি লিন মিট, ডাল, ডিমের সাদা অংশ এবং গ্রিলড চিকেন খাই।”
শাহরুখের পছন্দের খাবার
শাহরুখ জানিয়েছেন যে তিনি সাধারণত চলচ্চিত্রের সেটে রান্না করা খাবার এড়িয়ে চলেন এবং বাড়ি থেকে তাঁর জন্য তন্দুরি চিকেন বা মাছ, কখনও কখনও বীন স্প্রাউট বা শাকসবজি আসে। তাঁর রাতের খাবারে সাধারণত তন্দুরি চিকেন এবং তন্দুরি রুটি থাকে, এবং মাঝে মাঝে মাংসের ডিশ খান।
তাঁর আরামদায়ক খাবার হল তন্দুরি চিকেন। তিনি এটি এতটাই পছন্দ করেন যে বছরের ৩৬৫ দিনই খেতে পারেন। অন্যদিকে, তিনি জাঙ্ক ফুড বা মিষ্টি পছন্দ করেন না, তবে মাঝে মাঝে আইসক্রিম বা চকোলেট খান।
সঙ্কল্পবদ্ধতা এবং অধ্যবসায়: শাহরুখের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি
শাহরুখের ফিটনেস ট্রেনার প্রশান্ত সাওয়ন্ত জানিয়েছেন, “২৩ বছর ধরে আমি তাকে ট্রেনিং দিচ্ছি এবং একমাত্র মূল মন্ত্র হল – ‘ধারাবাহিকতা একটি বড় ভূমিকা পালন করে।'” গত কয়েক বছরে শাহরুখ খান অনেক আঘাত ও সার্জারি পেয়েছেন এবং তিনি আরও সতর্ক হয়ে গেছেন। তিনি তাঁর শরীরের প্রতি আরও ধৈর্যশীল হয়েছেন। তিনি তাঁর ফিটনেস সম্পর্কে প্রচুর গবেষণাও করেন।
ওয়ার্কআউটের সময় শাহরুখের মনোভাব
শাহরুখ খান কখনও ওয়ার্কআউটের সময় ফোনে কথা বলেন না বা সঙ্গীত শুনেন না। ওয়ার্কআউটের সময় মন-শরীরের সংযোগ থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে তাঁর মতো শরীর অর্জন করতে হলে।
প্রশান্ত সাওয়ন্ত অনুসারে, শাহরুখের নিবেদন, ধৈর্য, আন্তরিকতা এবং ধারাবাহিকতার কারণেই তিনি ‘পাঠান’ ছবিতে অসাধারণ শারীরিক পরিবর্তন আনতে পেরেছিলেন।
সুস্থ থাকতে শাহরুখের পরামর্শ
শাহরুখের ফিটনেস ট্রেনার মানুষের জন্য পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ টিপস শেয়ার করেছেন:
-
ভালো এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান
-
শরীরে সর্বদা পর্যাপ্ত জল রাখুন
-
সঠিক ঘুমের সময়সূচি বজায় রাখুন
-
শর্টকাট অবলম্বন করবেন না
-
নিয়মিত ওয়ার্কআউট করুন
শাহরুখের মতে, পরিমিত খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম করলে কেউই তাঁর পেশীবহুল শরীর অর্জন করতে পারেন। তবে শর্টকাট হিসেবে যারা অস্বাভাবিক পদ্ধতি অবলম্বন করেন, তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে।
শিশুর ঘুমের রুটিন: খিটখিটে মেজাজ থেকে শান্ত স্বভাবে রূপান্তর
শাহরুখ খানের এই ৫টি গোপন অভ্যাস তাঁর জীবনযাপনের এমন দিক উন্মোচন করে যা অধিকাংশ লোক হয়তো জানে না। তাঁর অস্বাভাবিক ঘুমের রুটিন, দিনে মাত্র একবার খাবার খাওয়া, মধ্যরাতে ওয়ার্কআউট করা, খাবারে অনাগ্রহ এবং সঙ্কল্পবদ্ধতা – এই সবই তাঁকে ৫৯ বছর বয়সেও যৌবনোজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করছে।
‘পাঠান’, ‘জওয়ান’ এবং ‘ডাঙ্কি’ এর পর, শাহরুখ এখন তাঁর পরবর্তী ছবি ‘কিং’ নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন যেখানে তাঁর মেয়ে সুহানা খান এবং অভিষেক বচ্চনও থাকবেন।তাঁর অদম্য উৎসাহ এবং শারীরিক ফিটনেস প্রমাণ করে যে তিনি সত্যিই বলিউডের ‘কিং’ হয়ে থাকবেন আরও অনেক বছর।তবে এখানে মনে রাখতে হবে, প্রতিটি ব্যক্তির শরীর আলাদা এবং শাহরুখের মতো রুটিন সবার জন্য উপযোগী নাও হতে পারে। আপনার স্বাস্থ্য ও ফিটনেস রুটিন শুরু করার আগে অবশ্যই একজন পেশাদার ফিটনেস বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।