আজকের ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এর অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের চোখের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই ব্লগে আমরা জানব কীভাবে স্মার্টফোন ব্যবহার করে চোখের যত্ন নিতে হয় এবং সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হয়।
ব্লু লাইট ফিল্টার ব্যবহার করুন
স্মার্টফোন স্ক্রিন থেকে নির্গত ব্লু লাইট চোখের জন্য ক্ষতিকর। এই আলো চোখের রেটিনায় পৌঁছে এবং দীর্ঘমেয়াদে চোখের ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া, রাতে ব্লু লাইটের সংস্পর্শে আসলে মেলাটোনিন হরমোনের উৎপাদন কমে যায়, যা ঘুমের চক্রকে বিঘ্নিত করে।
ব্লু লাইট ফিল্টার ব্যবহার করে এই সমস্যা সমাধান করা যায়। অধিকাংশ আধুনিক স্মার্টফোনে এই ফিচার বিল্ট-ইন থাকে। iPhone-এ এটি ‘Night Shift’ নামে পরিচিত, অন্যদিকে Android ফোনে ‘Night Light’ বা ‘Blue Light Filter’ নামে পাওয়া যায়।
ফিল্টার সেট করার পদ্ধতি:
- iPhone: Settings > Display & Brightness > Night Shift
- Android: Settings > Display > Blue Light Filter or Night Light
আপনি সূর্যাস্তের সময় থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত এই ফিল্টার অটোমেটিক চালু হওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন। এছাড়া, ব্লু লাইট ব্লকিং চশমা ব্যবহার করেও অতিরিক্ত সুরক্ষা পেতে পারেন।
২০-২০-২০ নিয়ম অনুসরণ করুন
২০-২০-২০ নিয়মটি চোখের ক্লান্তি কমাতে এবং চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত কার্যকর। এই নিয়ম অনুযায়ী:
- প্রতি ২০ মিনিট পর
- ২০ ফুট (প্রায় ৬ মিটার) দূরের কোনো বস্তুর দিকে
- ২০ সেকেন্ড তাকান
এই নিয়ম মেনে চলার ফলে:
- চোখের পেশীগুলো বিশ্রাম পায়
- চোখের মধ্যের তরল পদার্থের ভারসাম্য বজায় থাকে
- চোখ শুষ্ক হওয়া প্রতিরোধ করে
- দৃষ্টি ক্লান্তি কমায়
আপনি ফোনে অ্যালার্ম সেট করে বা ’20-20-20′ নামের অ্যাপ ব্যবহার করে এই নিয়ম মেনে চলতে পারেন।
স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা সমন্বয় করুন
স্ক্রিনের অতিরিক্ত উজ্জ্বলতা চোখের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং চোখ জ্বালা-পোড়া করতে পারে। অন্যদিকে, কম উজ্জ্বলতায় চোখ বেশি কষ্ট করে দেখতে হয়। তাই পরিবেশ অনুযায়ী স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা সমন্বয় করা জরুরি।
উজ্জ্বলতা নিয়ন্ত্রণের কৌশল:
- অটো-ব্রাইটনেস ফিচার চালু করুন: এটি আশেপাশের আলোর তীব্রতা অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা সমন্বয় করে।
- রাতে কম উজ্জ্বলতা ব্যবহার করুন: এতে চোখের উপর কম চাপ পড়বে এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে না।
- বাইরে থাকলে উজ্জ্বলতা বাড়ান: সূর্যের আলোয় স্ক্রিন দেখার জন্য বেশি উজ্জ্বলতা প্রয়োজন।
মনে রাখবেন, স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা এমন হওয়া উচিত যাতে আপনি আরামে পড়তে পারেন কিন্তু চোখে চাপ না পড়ে।
ফোন থেকে উপযুক্ত দূরত্ব বজায় রাখুন
স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় সঠিক দূরত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফোন খুব কাছে ধরলে চোখের পেশীগুলোকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়, যা চোখের ক্লান্তি ও অস্বস্তি বাড়ায়।
আদর্শ দূরত্ব নির্ধারণ:
- স্মার্টফোন থেকে কমপক্ষে ১২ ইঞ্চি (প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার) দূরত্ব বজায় রাখুন।
- আপনার কনুইয়ের কাছাকাছি দূরত্বে ফোন ধরুন।
- স্ক্রিন দেখার সময় মাথা সামান্য নীচু করুন, গর্দান বেঁকিয়ে নয়।
এই দূরত্ব বজায় রাখলে:
- চোখের পেশীগুলো কম পরিশ্রম করে
- চোখ শুকনো হওয়ার সম্ভাবনা কমে
- গর্দান ও পিঠের ব্যথা এড়ানো যায়
নিয়মিত চোখের ব্যায়াম করুন
চোখের নিয়মিত ব্যায়াম করলে চোখের পেশীগুলো শক্তিশালী হয় এবং দৃষ্টি ক্লান্তি কমে। নিচের সহজ ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করুন:
- পলক ফেলা: ১ মিনিট ধরে দ্রুত পলক ফেলুন। এতে চোখ আর্দ্র থাকে।
- ফোকাস পরিবর্তন:
- আঙ্গুল নাকের সামনে ধরুন
- ৫ সেকেন্ড আঙ্গুলের দিকে তাকান
- তারপর ৫ সেকেন্ড দূরের কোনো বস্তুর দিকে তাকান
- ১০ বার পুনরাবৃত্তি করুন
- চোখ ঘোরানো:
- চোখ বন্ধ করুন
- ধীরে ধীরে চোখ ঘড়ির কাঁটার দিকে ১০ বার ঘুরান
- তারপর বিপরীত দিকে ১০ বার ঘুরান
- হাত ঘষা:
- হাতের তালু ঘষে গরম করুন
- গরম হাতের তালু দিয়ে চোখ ঢেকে রাখুন
- ৩০ সেকেন্ড এভাবে থাকুন
ব্যায়ামের সময়সূচি:
- প্রতি ঘণ্টায় অন্তত একবার এই ব্যায়ামগুলো করুন
- সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে করলে ভালো ফল পাবেন
স্মার্টফোন আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে, কিন্তু এর অপব্যবহার চোখের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। উপরোক্ত পাঁচটি কৌশল অনুসরণ করে আপনি স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারেন নিরাপদে, চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। মনে রাখবেন, নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করানো এবং প্রয়োজনে চোখের ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করুন, কিন্তু আরও স্মার্টভাবে নিজের যত্ন নিন।