54 years of Bangladesh’s independence: আজ ২৬ মার্চ ২০২৫, বাংলাদেশের ৫৪তম স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। আজ সারাদেশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় এই দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। সূর্যোদয়ের সময় রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন।
দিনটির শুভসূচনা হয়েছে ভোরে ঢাকা এবং সারাদেশে ৩১ টোপধ্বনি দিয়ে। জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়েছে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সমাবেশ এবং প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়েছে, জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়েছে।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে আসন্ন স্বাধীনতা সংগ্রামের বার্তা দেওয়া হয়েছিল। তিনি সেদিন রেসকোর্স ময়দানে বলেছিলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম!”। এরপর ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে গণহত্যা চালায়, যাতে হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়, বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয় এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুট করা হয়।
পাকিস্তানি বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করার আগেই তিনি ২৬ মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পরদিন, ২৭ মার্চ, মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আরেকটি ঘোষণা পাঠ করেন। এভাবে শুরু হয় নয় মাসের দীর্ঘ মুক্তিযুদ্ধ, যা শেষ হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে।
২০২৫ সালের স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারের সদস্য, আহত মুক্তিযোদ্ধা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন। বিদেশি কূটনীতিকরাও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেছেন।
স্বাধীনতা দিবস এবং বিজয় দিবস – এই দুটি ঐতিহাসিক দিন বাংলাদেশের ইতিহাসে সমান গুরুত্বপূর্ণ। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার দিন, যা মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করে; আর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, যেদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং বাংলাদেশ পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করে।
১৯৭০ সালের পাকিস্তানি সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি আসন লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক প্রশাসন তাদের সরকার গঠনে বাধা দেয়। এর প্রতিবাদে বাংলাদেশে আন্দোলন শুরু হয়3। ১৯৭১ সালের মার্চের ২৫ তারিখে জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক অভিযান ঘোষণা করেন এবং শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন। সেই রাতেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অসংখ্য বেসামরিক নাগরিকের উপর নৃশংস আক্রমণ চালায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজ বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হচ্ছে। ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে (ইউল্যাব) গতকাল বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমেদ জিয়াউদ্দিন, বীর প্রতীকের অংশগ্রহণে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন।
২০২৫ সাল হল শেখ হাসিনার শাসনকালের পরবর্তী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় বছর। বর্তমানে জাতীয় সরকারে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য রয়েছে, আর মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রায় ৩০ লক্ষ শহীদ এবং ২ লক্ষ থেকে ৪ লক্ষ নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। এই স্বাধীনতা অর্জন হয়েছিল অনেক ত্যাগ আর আত্মদানের বিনিময়ে। মহান স্বাধীনতা দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি আমাদের উচিত স্বাধীনতার সুফল দেশের সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা নেওয়া।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন ধ্বংস: ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, তবে তা সত্ত্বেও দেশটি অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি সাধন করেছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর আমরা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, যেখানে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং সমৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষা আমাদের এগিয়ে নেওয়ার প্রেরণা যোগাচ্ছে।
আজ স্বাধীনতা দিবসে জাতি হিসেবে আমাদের প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিত যে, শহীদদের আত্মত্যাগ কখনও বৃথা যাবে না। বাংলাদেশ হবে এমন একটি দেশ, যেখানে ন্যায়, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র এবং সকলের জন্য সমৃদ্ধি নিশ্চিত হবে। এটাই হবে আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রকৃত উত্তরাধিকার।