Signs of overthinking: আচ্ছা, কখনো কি এমন হয়েছে যে রাতের বেলা তারা গুনতে গুনতে হঠাৎ মনে হল, “কাল অফিসের প্রেজেন্টেশনটা কেমন হবে? যদি সব ভুল হয়ে যায়?” কিংবা পছন্দের মানুষটি আজ একটু অন্যরকম ব্যবহার করলো, আর আপনি সঙ্গে সঙ্গেই ভেবে নিলেন, “নিশ্চয়ই আমাকে আর তার ভালো লাগছে না!” যদি এই প্রশ্নগুলো চেনা লাগে, তাহলে বুঝতেই পারছেন, আপনি ওভারথিংকিংয়ের শিকার।
ওভারথিংকিং মানে হলো কোনো বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা। এটা যেন মনের মধ্যে একটা endless loop তৈরি করে, যা থেকে বের হওয়া কঠিন। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা শুধু মানসিক শান্তি কেড়ে নেয় না, দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকেও ব্যাহত করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বুঝবেন কী করে যে আপনি ওভারথিংকিং করছেন? এমন কিছু আচরণ আছে যা দেখলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন যে আপনি অতিরিক্ত ভাবছেন। চলুন, সেই সাতটি আচরণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
আমরা সবাই কম-বেশি চিন্তা করি। কিন্তু যখন একটি ছোটখাটো বিষয়ও আপনার কাছে বিশাল সমস্যা মনে হয়, তখনই বুঝতে হবে আপনি ওভারথিংকিং করছেন। ধরুন, বস আজ আপনার কাজের সামান্য একটু ভুল ধরলেন। স্বাভাবিক অবস্থায় আপনি হয়তো সেটা শুধরে নিতেন, কিন্তু ওভারথিংকিং করলে মনে হবে, “বস নিশ্চয়ই আমার ওপর অসন্তুষ্ট। হয়তো খুব जल्दी আমাকে চাকরি থেকে বের করে দেবেন।”
অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করা ভালো, তবে সেটা যেন অভ্যাসে পরিণত না হয়। যারা ওভারথিংকিং করেন, তারা প্রায়ই পুরনো দিনের ভুলগুলো নিয়ে চিন্তা করেন। “তখন যদি আমি অন্যভাবে কাজটা করতাম, তাহলে হয়তো আজ অন্যরকম হতো”—এই ধরনের চিন্তাগুলো তাদের তাড়া করে ফেরে।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করা ভালো, কিন্তু সেই পরিকল্পনা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করাটা ওভারথিংকিংয়ের লক্ষণ। “যদি আমি চাকরিটা না পাই? যদি আমার ব্যবসা সফল না হয়?”—এই ধরনের চিন্তাগুলো আপনাকে বর্তমান থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
ওভারথিংকিংয়ের শিকার হলে আপনি অন্যের কথা খুব সহজে বিশ্বাস করে ফেলেন। কেউ আপনাকে সামান্য কিছু বললেই আপনি তা নিয়ে অনেক বেশি চিন্তা করতে শুরু করেন। “লোকটা কি আমাকে খারাপ ভাবছে? আমার কাজটা কি তার ভালো লাগেনি?”—এই ধরনের চিন্তাগুলো আপনাকে অস্থির করে তোলে।
যারা ওভারথিংকিং করেন, তারা কোনো বিষয়ে সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। একটি সাধারণ বিষয় নিয়েও তারা অনেক বেশি চিন্তা করেন। “আমি কি এই জামাটা কিনব? নাকি অন্যটা নেব? এটা কি আমার সাথে মানাবে?”—এই ধরনের দ্বিধা তাদের সবসময় ঘিরে থাকে।
অতিরিক্ত চিন্তা করলে ঘুমের সমস্যা হওয়াটা স্বাভাবিক। যখন আপনি রাতে শুয়ে চিন্তা করতে থাকেন, তখন আপনার মস্তিষ্ক সজাগ থাকে এবং সহজে ঘুম আসতে চায় না। ফলে, অনিদ্রা দেখা দেয় এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হতে শুরু করে।
পারফেকশনিজম বা সবকিছু নিখুঁত করার চেষ্টা করাও ওভারথিংকিংয়ের একটি বড় কারণ। আপনি যখন কোনো কাজ নিখুঁতভাবে করতে চান, তখন সেই কাজের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে অনেক বেশি চিন্তা করেন। ফলে, কাজটি সময়মতো শেষ করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং মানসিক চাপ বাড়তে থাকে।
ওভারথিংকিং একটি জটিল সমস্যা, তবে এর থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব নয়। কিছু সহজ কৌশল অবলম্বন করে আপনি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। নিচে কয়েকটি কার্যকরী উপায় আলোচনা করা হলো:
প্রথমত, আপনাকে জানতে হবে আপনি কখন এবং কী নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করছেন। যখনই মনে হবে আপনি অপ্রয়োজনীয় চিন্তা করছেন, তখনই নিজেকে থামানোর চেষ্টা করুন।
অতীত বা ভবিষ্যৎ নিয়ে না ভেবে বর্তমানে কী করছেন, সেদিকে মনোযোগ দিন। মাইন্ডফুলনেস এবং মেডিটেশন এক্ষেত্রে খুবই উপযোগী হতে পারে।
আপনি যে বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করছেন, সেগুলো কি আসলেই এত গুরুত্বপূর্ণ? নাকি আপনি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছেন? নিজের চিন্তাগুলোকে প্রশ্ন করুন এবং যুক্তির মাধ্যমে সেগুলোর সমাধান করার চেষ্টা করুন।
কোনো বিষয়ে চিন্তা করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করুন। যখন সময় শেষ হয়ে যাবে, তখন অন্য কোনো কাজে মন দিন।
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন। পর্যাপ্ত ঘুমান, স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
নিজের চিন্তাগুলো বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সাথে আলোচনা করুন। অনেক সময় অন্যের perspective থেকে বিষয়গুলো দেখলে সহজ মনে হয়।
যদি কোনোভাবেই ওভারথিংকিং কমাতে না পারেন, তাহলে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।
##ওভার থিংকিং নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন (FAQ):
সব সময় অতিরিক্ত চিন্তা করা সবসময় মানসিক রোগ নয়। তবে, এটা দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা বা ওসিডি-র মতো মানসিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। অতিরিক্ত চিন্তা যদি দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে, তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কয়েকটি সাধারণ লক্ষণ হলো:
কিছু সহজ উপায় নিচে দেওয়া হলো:
Russells Viper: ভয়ঙ্কর এই সাপকে কিভাবে চিনবেন? কোথায় ছাড়বেন ?
অতিরিক্ত চিন্তা করলে শরীরে অনেক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যেমন:
রাতে ঘুমোনোর আগে ওভার থিংকিং কমানোর কিছু উপায়:
অবশ্যই! বন্ধুদের সাথে মিশলে মন হালকা হয় এবং চিন্তাভাবনা অন্যদিকে ধাবিত হয়। সামাজিক সমর্থন এবং আলোচনা আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
হ্যাঁ, অবশ্যই। স্বাস্থ্যকর খাবার আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। প্রক্রিয়াজাত খাবার ও চিনি কমিয়ে ফল, সবজি এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত।
জীবনটা সুন্দর, উপভোগ করার মতো। ওভারথিংকিং করে একে জটিল করে তুলবেন না। ছোটখাটো সমস্যাগুলোকে বড় করে না দেখে সেগুলোর সমাধান করার চেষ্টা করুন। বর্তমানের প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করুন, ভবিষ্যৎ নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা না করে নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান। আর মনে রাখবেন, আপনি একা নন। আপনার পাশে সবসময় বন্ধু, পরিবার এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা আছেন। তাদের সাথে কথা বলুন, নিজের অনুভূতি শেয়ার করুন এবং সুন্দর একটি জীবনযাপন করুন।
যদি মনে হয় আপনি কিছুতেই এই সমস্যা থেকে বের হতে পারছেন না, তাহলে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে দ্বিধা করবেন না। সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন!