Early signs of heart disease: প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মৃত্যুর কারণ। এর মধ্যে ব্লকড হার্ট ভেইনস বা হৃদধমনী বন্ধ হওয়াকে প্রাণঘাতী হৃদরোগের মূল ট্রিগার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই প্রবন্ধে একজন অনকোলজিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী হৃদধমনী বন্ধ হওয়ার ৭টি প্রাথমিক লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
হৃদধমনী বন্ধ হওয়ার কারণ ও প্রভাব
হৃদধমনীতে প্লাক (চর্বি, কোলেস্টেরল) জমে রক্তনালী সংকুচিত হলে রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এই অবস্থাকে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বলা হয়। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা হার্ট ফেইলিউরের মতো জটিলতা দেখা দেয়।
ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা: বয়স অনুযায়ী রেঞ্জ এবং ঝুঁকি কমানোর উপায়
প্রধান ঝুঁকির কারণগুলো:
- উচ্চ কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ
- ডায়াবেটিস ও স্থূলতা
- ধূমপান ও অ্যালকোহল
- শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা
৭টি প্রাথমিক সতর্ক সংকেত: কখন সতর্ক হবেন?
১. বুক ব্যথা বা অ্যাঞ্জাইনা (Chest Pain)
বুকের মাঝখানে চাপ, ভারী ভাব বা জ্বালাপোড়া হৃদধমনী বন্ধ হওয়ার সবচেয়ে কমন লক্ষণ। শারীরিক পরিশ্রম, মানসিক চাপ বা ভারী খাবার খাওয়ার পর এই ব্যথা তীব্র হতে পারে। মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের গবেষণা অনুযায়ী, ৬০% রোগী হার্ট অ্যাটাকের আগে এই লক্ষণটি উপেক্সা করেন1।
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
- ব্যথা ৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হলে
- বাম হাত, গলা বা চোয়ালে ব্যথা ছড়ালে
২. শ্বাসকষ্ট (Shortness of Breath)
হৃদপিণ্ড রক্ত পাম্প করতে ব্যর্থ হলে ফুসফুসে তরল জমে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। রোগীরা প্রায়ই অভিযোগ করেন, “বিছানায় শুয়ে থাকার সময় শ্বাস নিতে সমস্যা হয়” বা “হালকা কাজেই হাঁপিয়ে উঠি”। ওয়েবএমডি’র তথ্য মতে, এই লক্ষণ হার্ট ফেইলিউরের ইঙ্গিত দেয়।
৩. অস্বাভাবিক ক্লান্তি (Unexplained Fatigue)
রক্ত প্রবাহ কমে গেলে শরীরের কোষে অক্সিজেন প্রবাহ বিঘ্নিত হয়। ফলে সামান্য কাজেই ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব হয়। নিউ ইয়র্ক স্টেটের সমীক্ষা অনুসারে, ৪৫% নারী হার্ট অ্যাটাকের আগে তীব্র ক্লান্তি অনুভব করেন।
৪. পা, গোড়ালি বা পেট ফুলে যাওয়া (Swelling in Legs/Abdomen)
হৃদপিণ্ড দুর্বল হলে রক্ত শরীরের নিম্নাঙ্গে জমে ও ফোলাভাব তৈরি করে। এই ফোলা চাপ দিলে গর্ত হয়ে যায় (পিটিং ইডিমা)। অ্যাডভোকেট হেলথকেরেসের গবেষণায় দেখা গেছে, এই লক্ষণটি মূলত ডান দিকের হার্ট ফেইলিউরের সাথে সম্পর্কিত।
৫. মাথা ঘোরা বা ঝিমুনি (Dizziness)
মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমে গেলে ভারসাম্য হারানো, ঝিমুনি বা অজ্ঞান হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। বিশেষ করে দ্রুত দাঁড়ালে বা হঠাৎ শারীরিক পরিশ্রম করলে এই সমস্যা বাড়ে।
৬. অনিয়মিত হৃদস্পন্দন (Irregular Heartbeat)
হৃদপিণ্ডের ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেমে গোলমাল হলে হার্টবিট দ্রুত, ধীর বা অনিয়মিত হয়। এই অবস্থাকে অ্যারিদমিয়া বলা হয়, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
৭. বমি বমি ভাব বা ঘাম (Nausea/Sweating)
পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের সময় বমি, বদহজম বা ঠাণ্ডা ঘামের মতো লক্ষণ বেশি দেখা যায়।
রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতি
ডায়াগনস্টিক টেস্ট | উদ্দেশ্য |
ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম (ECG) | হৃদস্পন্দনের বৈদ্যুতিক কার্যক্রম বিশ্লেষণ |
স্ট্রেস টেস্ট | শারীরিক চাপে হার্টের কর্মক্ষমতা পরীক্ষা |
ইকোকার্ডিওগ্রাফি | আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে হার্টের ছবি তোলা |
চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে লাইফস্টাইল পরিবর্তন, ওষুধ (স্ট্যাটিন, অ্যাসপিরিন), অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি বা বাইপাস সার্জারি।
প্রতিরোধের ৫টি কার্যকর উপায়
১. ভূমধ্যসাগরীয় ডায়েট: জলপাই তেল, মাছ, শাকসবজি ও বাদাম হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী।
২. নিয়মিত ব্যায়াম: সপ্তাহে ১৫০ মিনিট হাঁটা বা সাইকেল চালানো।
৩. ধূমপান ত্যাগ: ধূমপান হৃদধমনীর দেওয়াল ক্ষতিগ্রস্ত করে।
৪. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন চর্চা।
৫. নিয়মিত হেলথ চেকআপ: রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও ব্লাড সুগার মনিটরিং।
পরিসংখ্যান ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ৮০৫,০০০ মানুষ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন।
- বিশ্বে প্রতি ৫ জন মৃত্যুর মধ্যে ১ জনের কারণ হৃদরোগ।
- সময়মতো চিকিৎসা নিলে ৮০% হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ সম্ভব।
হৃদধমনী বন্ধ হওয়ার লক্ষণগুলি প্রায়ই সাধারণ ভেবে উপেক্ষা করা হয়। কিন্তু এই উপসর্গগুলো জানা থাকলে প্রাণঘাতী জটিলতা এড়ানো সম্ভব। নিয়মিত চেকআপ, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও সক্রিয় জীবনযাপনের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি ৫০% পর্যন্ত কমানো যায়। মনে রাখবেন, “প্রতিরোধ চিকিৎসার চেয়ে সহজ” – তাই আজই জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনুন।