Age-related Pregnancy Risks: বর্তমান সময়ে অনেক নারীই পেশাগত ও ব্যক্তিগত কারণে বেশি বয়সে মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কিন্তু ৩৫ বছর বয়সের পর গর্ভধারণ করলে মা ও শিশু উভয়ের জন্যই বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। চিকিৎসকরা এই বয়সকে “উন্নত মাতৃ বয়স” হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক বেশি বয়সে মা হওয়ার প্রধান ৭টি ঝুঁকি সম্পর্কে।
১. ক্রোমোজোমাল অস্বাভাবিকতার ঝুঁকি
বেশি বয়সে মা হওয়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি হল শিশুর মধ্যে ক্রোমোজোমাল অস্বাভাবিকতা দেখা দেওয়া, যার মধ্যে ডাউন সিনড্রোম সবচেয়ে পরিচিত।ডাউন সিনড্রোম একটি জেনেটিক রোগ যেখানে ২১ নং ক্রোমোজোমে একটি অতিরিক্ত ক্রোমোজোম থাকে। এতে শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং বুদ্ধিমত্তা স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকে।বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই ঝুঁকি বাড়তে থাকে:
- ৩৫ বছর বয়সী মায়েদের ক্ষেত্রে প্রতি ৪০০ জনের মধ্যে ১ জনের শিশুর ডাউন সিনড্রোম হওয়ার ঝুঁকি থাকে
- ৪০ বছর বয়সে এই ঝুঁকি বেড়ে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ১ জনে দাঁড়ায়
২. গর্ভপাতের ঝুঁকি
বেশি বয়সে গর্ভধারণ করলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এর কারণ হল:
- ডিম্বাণুর গুণগত মান কমে যাওয়া
- জরায়ুর পরিবর্তন
- হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
৩৫ বছরের পর গর্ভধারণ করলে গর্ভপাতের ঝুঁকি ২০-৩০% পর্যন্ত বাড়তে পারে।
৩. গর্ভকালীন ডায়াবেটিস
বেশি বয়সে গর্ভধারণ করলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এর ফলে:
- শিশুর অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি হতে পারে
- প্রসবের সময় জটিলতা দেখা দিতে পারে
- শিশুর রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যেতে পারে
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে মা ও শিশু উভয়ের জন্যই ঝুঁকি বাড়ে।
৪. উচ্চ রক্তচাপ ও প্রি-ইক্লাম্পসিয়া
বেশি বয়সে গর্ভধারণ করলে উচ্চ রক্তচাপ এবং প্রি-ইক্লাম্পসিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রি-ইক্লাম্পসিয়া একটি গুরুতর অবস্থা যেখানে:
- রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়
- প্রস্রাবে প্রোটিনের উপস্থিতি দেখা যায়
- অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ফুলে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়
এটি মা ও শিশু উভয়ের জন্যই বিপজ্জনক হতে পারে। নিয়মিত চেকআপ ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা জরুরি।
৫. সময়ের আগে প্রসব
বেশি বয়সে গর্ভধারণ করলে সময়ের আগে প্রসব হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সাধারণত ৩৭ সপ্তাহের আগে প্রসব হলে তাকে সময়ের আগে প্রসব বলা হয়। এর ফলে:
- শিশুর ওজন কম হতে পারে
- শিশুর শ্বাসকষ্ট হতে পারে
- শিশুর অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে
সময়ের আগে প্রসব রোধ করতে নিয়মিত চেকআপ ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৬. সিজারিয়ান প্রসবের সম্ভাবনা
বেশি বয়সে গর্ভধারণ করলে সিজারিয়ান প্রসবের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এর কারণগুলি হল:
- জরায়ুর পেশীর শক্তি কমে যাওয়া
- প্রসব বেদনা শুরু হতে দেরি হওয়া
- শিশুর অস্বাভাবিক অবস্থান
সিজারিয়ান প্রসবের পর সুস্থ হতে বেশি সময় লাগতে পারে এবং পরবর্তী গর্ভধারণে জটিলতা দেখা দিতে পারে।
৭. জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি
বেশি বয়সে গর্ভধারণ করলে শিশুর মধ্যে জন্মগত ত্রুটি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এর মধ্যে রয়েছে:
- হৃদরোগ
- ক্লেফট লিপ ও প্যালেট
- স্পাইনা বাইফিডা
এসব ত্রুটি শিশুর জীবনমান ও স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
বেশি বয়সে গর্ভধারণের প্রস্তুতি
যদিও বেশি বয়সে গর্ভধারণের ঝুঁকি রয়েছে, তবুও সঠিক প্রস্তুতি নিলে সুস্থ সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব। এজন্য করণীয়:
প্রি-কনসেপশন চেকআপ
গর্ভধারণের আগে একটি বিস্তৃত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত। এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে:
- রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা
- থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট
- ডায়াবেটিস স্ক্রিনিং
- রক্তচাপ পরীক্ষা
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন
সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম ও ধূমপান বর্জন করা উচিত। এছাড়া:
- পর্যাপ্ত ঘুম নেওয়া
- মানসিক চাপ কমানো
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট
গর্ভধারণের কমপক্ষে ৩ মাস আগে থেকে ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট নেওয়া শুরু করা উচিত। এটি শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সাহায্য করে।
জেনেটিক কাউন্সেলিং
বেশি বয়সে গর্ভধারণ করলে জেনেটিক কাউন্সেলিং করানো উচিত। এতে জেনেটিক সমস্যার ঝুঁকি সম্পর্কে জানা যায় এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো যায়।
এসির ঠান্ডায় লুকিয়ে আছে মৃত্যুর ছোঁয়া! জানুন কীভাবে বাঁচবেন
নিয়মিত প্রিনাটাল চেকআপ
গর্ভাবস্থায় নিয়মিত চেকআপ করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে যেকোনো সমস্যা দ্রুত শনাক্ত করা যায় এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়।বেশি বয়সে মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এর ঝুঁকি ও সুবিধা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। যদিও ঝুঁকি রয়েছে, তবুও সঠিক প্রস্তুতি ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে সুস্থ সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব।
প্রতিটি মহিলার শারীরিক অবস্থা আলাদা, তাই ব্যক্তিগত পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।বেশি বয়সে মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে নিয়মিত চেকআপ, সুষম খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো যায়। সর্বোপরি, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা এবং নিজের শরীরের প্রতি মনোযোগী থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।