ভারতের শহরগুলিতে বায়ু দূষণের মাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। ২০২৩ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ৫০টি শহরের মধ্যে ৩৯টি ভারতে অবস্থিত। এই পরিস্থিতিতে, আমাদের ঘরের ভিতরের বাতাসও দূষিত হচ্ছে। বদ্ধ ঘরের ভ্যাপসা গন্ধ শুধু অস্বস্তিকর নয়, এটি স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। কিন্তু চিন্তার কিছু নেই, প্রকৃতি আমাদের জন্য সমাধান দিয়েছে – কিছু বিশেষ গাছ যা আপনার ঘরের বাতাস পরিশুদ্ধ করতে পারে।
ভারতীয় চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (ICMR) এর একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতে প্রতি বছর প্রায় ১.৭ মিলিয়ন লোক বায়ু দূষণের কারণে মারা যায়, যার মধ্যে ইনডোর এয়ার পলিউশন একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। ঘরের ভিতরে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, ধূলিকণা, এবং অন্যান্য দূষক আমাদের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
নাসার বিখ্যাত Clean Air Study, যা ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিল, দেখিয়েছে যে কিছু নির্দিষ্ট গাছ বাতাস থেকে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ দূর করতে পারে। এই গাছগুলি শুধু কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে না, বরং বেনজিন, ফরমালডিহাইড, জাইলিন এবং ট্রাইক্লোরোইথিলিন জাতীয় ক্ষতিকারক পদার্থও অপসারণ করে।
এটি ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইনডোর প্ল্যান্টগুলির মধ্যে একটি। এটি বেনজিন, ফরমালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, জাইলিন এবং টলুইন অপসারণ করে। রাতে অক্সিজেন উৎপাদন করে বলে একে “শ্বশুর-শাশুড়ির জিহ্বা” নামেও ডাকা হয়। এটি কম আলোতেও বেঁচে থাকতে পারে এবং সহজে পরিচর্যা করা যায়।
এটি ফরমালডিহাইড এবং জাইলিন অপসারণে বিশেষ দক্ষ। ভারতীয় জলবায়ুতে সহজেই বাড়ে এবং নতুন চারা উৎপাদন করে। এটি আর্দ্রতা বাড়াতেও সাহায্য করে, যা শুষ্ক মরসুমে বিশেষ উপকারী।
এটি বেনজিন, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, এবং অ্যাসিটোন অপসারণে দক্ষ। ভারতীয় বাড়িতে এটি শুধু বাতাস পরিশুদ্ধ করে না, সৌন্দর্যও বাড়ায়। তবে এটি পালতু প্রাণী এবং শিশুদের জন্য বিষাক্ত হতে পারে, তাই সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
ভারতীয় ঔষধি ব্যবস্থায় এর ব্যবহার প্রাচীন। এটি বেনজিন এবং ফরমালডিহাইড অপসারণ করে। অতিরিক্ত আর্দ্রতাও শোষণ করে, যা ছত্রাক প্রতিরোধে সাহায্য করে।
এর বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে, যেমন D. marginata, D. fragrans। এগুলি বেনজিন, ফরমালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, এবং জাইলিন অপসারণ করে। ভারতের উষ্ণ জলবায়ুতে ভালো বাড়ে।
এটি ফরমালডিহাইড, জাইলিন এবং টলুইন অপসারণ করে। ভারতের বাড়িতে এটি একটি জনপ্রিয় সাজসজ্জার উপাদান। তবে এটি নিয়মিত যত্ন এবং আলো প্রয়োজন।
এটি ফরমালডিহাইড এবং জাইলিন অপসারণে দক্ষ। ভারতের আর্দ্র অঞ্চলে এটি ভালো বাড়ে এবং বাতাসে আর্দ্রতা যোগ করে।
গাছগুলিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী, উত্তর-পূর্ব কোণে গাছ রাখা শুভ। তবে বৈজ্ঞানিকভাবে, যেখানে বাতাসের প্রবাহ ভালো, সেখানে গাছ রাখা উচিত। প্রতি ১০০ বর্গফুটের জন্য একটি বড় বা দুটি ছোট গাছ রাখা যেতে পারে।
ভারতীয় শহরগুলিতে, যেখানে ফ্ল্যাট বা ছোট বাড়িতে থাকার প্রবণতা বাড়ছে, সেখানে এই গাছগুলি বিশেষ উপযোগী। তবে মনে রাখবেন, গাছ শুধুই সমাধান নয়। নিয়মিত ঘর পরিষ্কার রাখা, ভালো বায়ুচলাচল নিশ্চিত করা, এবং দূষণের উৎস কমানো প্রয়োজন।
এই গাছগুলি শুধু বাতাস পরিশুদ্ধ করে না, মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটায়। ভারতীয় যোগ এবং আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী, প্রকৃতির সান্নিধ্য মানসিক শান্তি আনে। একটি ২০১৯ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, ঘরে গাছ রাখলে মানসিক চাপ ৩৭% পর্যন্ত কমতে পারে।
ভারতের বর্তমান পরিবেশ দূষণের পরিপ্রেক্ষিতে, এই গাছগুলি আমাদের ঘরের বাতাস পরিশুদ্ধ করতে এবং একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে। তবে মনে রাখবেন, গাছ লাগানো শুধুই প্রথম পদক্ষেপ। আমাদের সামগ্রিক জীবনযাত্রা এবং পরিবেশ সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।