70th National Film Awards winners list 2024: ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের সর্বোচ্চ সম্মান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ৭০তম সংস্করণের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার, ১৬ আগস্ট ২০২৪ তারিখে নয়াদিল্লির ন্যাশনাল মিডিয়া সেন্টারে এই পুরস্কারের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। ২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলিকে এই পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করা হয়েছিল।
মালায়ালাম চলচ্চিত্র ‘আত্তাম: দ্য প্লে’ সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতেছে। এই ছবিটি আমেরিকান কোর্টরুম ড্রামা ‘টুয়েলভ অ্যাংরি মেন’ দ্বারা অনুপ্রাণিত। এর আগে এই ছবিটি লস অ্যাঞ্জেলেস ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে গ্র্যান্ড জুরি অ্যাওয়ার্ড জিতেছিল।কন্নড় অভিনেতা ঋষভ শেট্টি তাঁর পরিচালিত ও অভিনীত ‘কান্তারা’ ছবির জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন। সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার যৌথভাবে জিতেছেন নিথ্যা মেনন (‘থিরুচিত্রাম্বলম’ ছবির জন্য) এবং মানসী পারেখ (‘কাচ্ছ এক্সপ্রেস’ ছবির জন্য)।বিখ্যাত পরিচালক সূরজ বড়জাত্যা তাঁর ‘উঁচাই’ ছবির জন্য সেরা পরিচালকের পুরস্কার জিতেছেন।
Kiff: ৩০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৪ – ৩৯টি দেশের
এই ছবিতে অমিতাভ বচ্চন, অনুপম খের, বোমান ইরানি প্রমুখ অভিনয় করেছিলেন।সেরা সহায়ক অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছেন নীনা গুপ্তা ‘উঁচাই’ ছবির জন্য। সেরা সহায়ক অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন পবন রাজ মালহোত্রা ‘ফৌজা’ ছবির জন্য।সেরা শিশু শিল্পীর পুরস্কার জিতেছেন শ্রীপথ ‘মালিকাপ্পুরম’ ছবির জন্য।সেরা হিন্দি চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতেছে ‘গুলমোহর’। এই ছবিতে মনোজ বাজপেয়ী ও শর্মিলা ঠাকুর অভিনয় করেছিলেন। মনোজ বাজপেয়ী এই ছবিতে তাঁর অভিনয়ের জন্য বিশেষ উল্লেখ পেয়েছেন।
সেরা তামিল চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতেছে মণিরত্নম পরিচালিত ‘পন্নিয়িন সেলভন: পার্ট ১’। এই ছবি সেরা চলচ্চিত্রায়ন, সেরা সাউন্ড ডিজাইন এবং সেরা সঙ্গীত পরিচালনার পুরস্কারও জিতেছে।সেরা কন্নড় চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতেছে ‘কেজিএফ: চ্যাপ্টার ২’। এই ছবি সেরা অ্যাকশন ডিরেকশনের পুরস্কারও জিতেছে।সেরা বাংলা চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতেছে ‘কাবেরী অন্তর্ধান’।সেরা মালায়ালম চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতেছে ‘সৌদি ভেল্লাক্কা’।সেরা মারাঠি চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতেছে ‘ভালভি’।সেরা অসমীয়া চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতেছে ‘এমুথি পুথি’।সেরা তেলুগু চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতেছে ‘কার্তিকেয়া ২’।সেরা পাঞ্জাবি চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতেছে ‘বাঘি দি ধি’।
সেরা অ্যানিমেশন, ভিজ্যুয়াল এফেক্টস, গেমিং ও কমিক বিভাগে পুরস্কার জিতেছে ‘ব্রহ্মাস্ত্র: পার্ট ১ – শিবা’।জাতীয়, সামাজিক ও পরিবেশগত মূল্যবোধ প্রচারকারী সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতেছে ‘কাচ্ছ এক্সপ্রেস’।সেরা সঙ্গীত পরিচালনার পুরস্কার যৌথভাবে জিতেছেন প্রীতম (‘ব্রহ্মাস্ত্র: পার্ট ১ – শিবা’ ছবির গানের জন্য) এবং এ আর রহমান (‘পন্নিয়িন সেলভন: পার্ট ১’ ছবির পটভূমির সঙ্গীতের জন্য)।সেরা পুরুষ পার্শ্বগায়কের পুরস্কার জিতেছেন অরিজিৎ সিং ‘ব্রহ্মাস্ত্র: পার্ট ১ – শিবা’ ছবির ‘কেসরিয়া’ গানের জন্য। সেরা মহিলা পার্শ্বগায়িকার পুরস্কার জিতেছেন বম্বে জয়শ্রী ‘সৌদি ভেল্লাক্কা’ ছবির ‘চায়ুম ভেয়িল’ গানের জন্য।
সেরা নৃত্য পরিচালনার পুরস্কার যৌথভাবে জিতেছেন জানি মাস্টার ও সতীশ কৃষ্ণন ‘থিরুচিত্রাম্বলম’ ছবির ‘মেঘম করুকাথা’ গানের জন্য।সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার জিতেছেন আনন্দ একারশি ‘আত্তাম’ ছবির জন্য। সেরা সংলাপ লেখকের পুরস্কার যৌথভাবে জিতেছেন অর্পিতা মুখার্জি ও রাহুল ভি চিত্তেলা ‘গুলমোহর’ ছবির জন্য।সেরা সম্পাদনার পুরস্কার জিতেছেন মহেশ ভুবানেন্দ ‘আত্তাম’ ছবির জন্য।সেরা প্রডাকশন ডিজাইনের পুরস্কার জিতেছেন আনন্দ অধ্যা ‘অপরাজিতো’ ছবির জন্য।সেরা মেকআপ আর্টিস্টের পুরস্কার জিতেছেন সোমনাথ কুন্ডু ‘অপরাজিতো’ ছবির জন্য।সেরা পোশাক পরিকল্পনার পুরস্কার জিতেছেন নিকি জোশি ‘কাচ্ছ এক্সপ্রেস’ ছবির জন্য।সেরা গীতিকারের পুরস্কার জিতেছেন নৌশাদ সাদার খান ‘ফৌজা’ ছবির ‘সালামি’ গানের জন্য।
রাজশাহীতে ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক বাড়ি ধ্বংস: সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অপূরণীয়
নন-ফিচার ফিল্ম বিভাগে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতেছে ‘আয়েনা’। সেরা তথ্যচিত্রের পুরস্কার জিতেছে ‘মারমার্স অফ দ্য জঙ্গল’। সেরা অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতেছে ‘এ কোকোনাট ট্রি’।চলচ্চিত্র বিষয়ক সেরা গ্রন্থের পুরস্কার জিতেছে ‘কিশোর কুমার: দ্য আল্টিমেট বায়োগ্রাফি’। এর লেখক অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্য ও পার্থীব ধর।সেরা চলচ্চিত্র সমালোচকের পুরস্কার জিতেছেন দীপক দুয়া (হিন্দি)।এই বছরের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন রাহুল রাওয়াইল। নন-ফিচার ফিল্ম জুরির চেয়ারম্যান ছিলেন নীলা মাধব পান্ডা এবং চলচ্চিত্র বিষয়ক লেখার জুরির চেয়ারম্যান ছিলেন গঙ্গাধর মুদালিয়ার।
পুরস্কার বিজয়ীরা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছ থেকে অক্টোবর মাসে এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার গ্রহণ করবেন।এই বছরের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রগুলি বেশ ভালো ফল করেছে। মালায়ালম, কন্নড়, তামিল চলচ্চিত্রগুলি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার জিতেছে। এর ফলে দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের উত্তরোত্তর বিকাশ ও মানোন্নয়নের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।এছাড়া হিন্দি চলচ্চিত্র ‘ব্রহ্মাস্ত্র: পার্ট ১ – শিবা’ বেশ কয়েকটি কারিগরি বিভাগে পুরস্কার জিতেছে। এর ফলে বলিউডের বড় বাজেটের চলচ্চিত্রগুলির কারিগরি দক্ষতার স্বীকৃতি মিলেছে।
সামগ্রিকভাবে এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের বৈচিত্র্য ও উৎকর্ষের প্রতিফলন ঘটেছে। বিভিন্ন ভাষা ও আঞ্চলিক চলচ্চিত্রগুলি পুরস্কৃত হওয়ায় ভারতের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বহুমাত্রিক চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।এবারের পুরস্কারে কিছু উল্লেখযোগ্য দিক রয়েছে:
১. মালায়ালম চলচ্চিত্র ‘আত্তাম: দ্য প্লে’ সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার জেতার মাধ্যমে মালায়ালম চলচ্চিত্র শিল্পের উৎকর্ষ স্বীকৃতি পেয়েছে। এই ছবিটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও সাফল্য পেয়েছিল।
২. কন্নড় অভিনেতা ঋষভ শেট্টি ‘কান্তারা’ ছবির জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতে নিয়েছেন। এই ছবিটি বক্স অফিসেও বিপুল সাফল্য পেয়েছিল। এর মাধ্যমে আঞ্চলিক চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তা ও গুণগত মান দুটোই প্রমাণিত হয়েছে।
৩. সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার যৌথভাবে দুজন জিতেছেন – নিথ্যা মেনন ও মানসী পারেখ। এটি প্রমাণ করে যে মহিলা চরিত্রগুলি ক্রমশ বলিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
৪. বিখ্যাত পরিচালক সূরজ বড়জাত্যা ‘উঁচাই’ ছবির জন্য সেরা পরিচালকের পুরস্কার জিতেছেন। এটি প্রমাণ করে যে প্রবীণ শিল্পীরাও সৃজনশীলতায় পিছিয়ে নেই।
৫. ‘পন্নিয়িন সেলভন: পার্ট ১’ একাধিক কারিগরি বিভাগে পুরস্কার জিতেছে। এর মাধ্যমে দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রের কারিগরি দক্ষতার স্বীকৃতি মিলেছে।
৬. ‘ব্রহ্মাস্ত্র: পার্ট ১ – শিবা’ বেশ কয়েকটি কারিগরি বিভাগে পুরস্কার জিতেছে। এর ফলে বলিউডের বড় বাজেটের চলচ্চিত্রগুলির প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের স্বীকৃতি মিলেছে।
৭. বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার চলচ্চিত্রগুলি যেমন বাংলা, মারাঠি, অসমীয়া, পাঞ্জাবি ইত্যাদি ভাষার ছবিগুলিও পুরস্কৃত হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারতের ভাষাগত বৈচিত্র্য ও প্রতিটি অঞ্চলের সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা প্রতিফলিত হয়েছে।
৮. নন-ফিচার ফিল্ম বিভাগে বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্র পুরস্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তথ্যচিত্র, অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র ইত্যাদি। এটি প্রমাণ করে যে ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প শুধু বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণেও সমান দক্ষ।
৯. চলচ্চিত্র বিষয়ক গ্রন্থ ও সমালোচনার পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতি গবেষণা ও সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গিকেও উৎসাহিত করা হয়েছে।এই পুরস্কারগুলির প্রভাব ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে ব্যাপক হবে বলে আশা করা যায়।
এর ফলে:
তবে এই পুরস্কারগুলি নিয়ে কিছু সমালোচনাও রয়েছে। অনেকে মনে করেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরস্কার প্রদানে পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, আরও বেশি নতুন ও স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত ছিল।যাই হোক, সামগ্রিকভাবে ৭০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের সমৃদ্ধি ও বৈচিত্র্যকে তুলে ধরেছে। এই পুরস্কারগুলি ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগাবে বলে আশা করা যায়।