Former Chief Justice family story: ভারতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় সম্প্রতি তাঁর দুই পালিতা কন্যার দুর্লভ জেনেটিক রোগ নেমালাইন মায়োপ্যাথি নিয়ে মুখ খুলেছেন। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মেয়েরা যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে তা নিয়ে তিনি খোলাখুলি কথা বলেছেন। একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি জানান, “আমাদের সন্তানেরা নেমালাইন মায়োপ্যাথি নামক একটি অবস্থা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। চিকিৎসক, সেবাদানকারী এবং নিশ্চিতভাবেই পিতামাতাদের মধ্যে মায়োপ্যাথি সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব রয়েছে। সবাই অস্বীকৃতির মধ্যে বাস করে।
যে পরিবারে এই ধরনের শিশু জন্মগ্রহণ করে, তারা মনে করে তাদের কোনো সমস্যা নেই।”নেমালাইন মায়োপ্যাথি একটি দুর্লভ জন্মগত রোগ যা কঙ্কালের পেশীগুলিকে প্রভাবিত করে এবং পেশীর দুর্বলতা সৃষ্টি করে। এটি একটি বংশগত রোগ যা জিনগত পরিবর্তনের কারণে হয় এবং পেশীর প্রোটিনগুলিকে প্রভাবিত করে। প্রতি ৫০,০০০ জন্মের মধ্যে প্রায় ১ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়। রোগটির লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে মুখমণ্ডল, ঘাড় ও ধড়ের পেশীর দুর্বলতা, খাওয়া ও গিলতে সমস্যা, শ্বাসকষ্ট এবং কখনও কখনও বিকৃতি।চন্দ্রচূড় তাঁর মেয়েদের রোগ নির্ণয়ের জন্য যে যন্ত্রণাদায়ক ও আক্রমণাত্মক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল তার কথাও উল্লেখ করেন।
প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বিদায়: পশ্চিমবঙ্গের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ মামলা এখনও অমীমাংসিত – কী হবে এর
তিনি বলেন, “আমাদের বলা হয়েছিল যে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষাটি এতটাই আক্রমণাত্মক ও যন্ত্রণাদায়ক যে তারা অ্যানেস্থেসিয়া ছাড়াই শিশুর দেহ থেকে টিস্যুর একটি অংশ সংগ্রহ করবে। এটি অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। আমি এখনও মনে করতে পারি যখন দুই সন্তানের পরীক্ষা করা হয়েছিল। বড় মেয়ের পরীক্ষার পর, সে যন্ত্রণায় কাতর হয়ে শুধু এটুকুই বলতে পেরেছিল – ‘আমার বোনকে এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে দেবেন না’।”চন্দ্রচূড়ের দুই পালিতা কন্যা মাহি (১৮) ও প্রিয়াঙ্কা (২২) এই রোগে আক্রান্ত। তাঁরা ২০১৫ সাল থেকে চন্দ্রচূড় পরিবারের সদস্য। চন্দ্রচূড় যখন এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন তখন এই দুই মেয়ে তাঁদের জীবনে আসে। উত্তরাখণ্ডের একটি গ্রামে বেড়ে ওঠা এই দুই মেয়ের জন্য সেখানে কোনো উপযুক্ত স্কুল ছিল না। এলাহাবাদে চন্দ্রচূড় স্থানীয়ভাবে কাউকে নিয়োগ করেন তাদের বর্ণমালা ও সংখ্যা শেখানোর জন্য। দিল্লিতে এসে তাঁরা তামান্না নামে একটি বিশেষ স্কুলে ভর্তি হন।
পরবর্তীতে তাঁরা সংস্কৃতি স্কুলে যোগ দেন।চন্দ্রচূড় জানান, এই রোগ নির্ণয়ের জন্য ভারতের বড় বড় প্রতিষ্ঠানেও কোনো পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। লখনউতে যেখানে পরীক্ষার সুবিধা ছিল, সেখানেও রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষাটি এতটাই আক্রমণাত্মক ও যন্ত্রণাদায়ক ছিল যে শিশুদের অ্যানেস্থেসিয়া ছাড়াই দেহ থেকে টিস্যু সংগ্রহ করা হত। তিনি বলেন, “এটি অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। আমি এখনও মনে করতে পারি যখন দুই সন্তানের পরীক্ষা করা হয়েছিল। বড় মেয়ের পরীক্ষার পর, সে যন্ত্রণায় কাতর হয়ে শুধু এটুকুই বলতে পেরেছিল – ‘আমার বোনকে এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে দেবেন না’।”নেমালাইন মায়োপ্যাথি রোগের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে রোগের লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে শারীরিক ও পেশাগত থেরাপি, শ্বাসপ্রশ্বাসের সহায়তা, জয়েন্টের সমস্যার জন্য সার্জারি, খাওয়ার সহায়তা, স্পিচ থেরাপি এবং সহায়ক যন্ত্রপাতি ব্যবহার। চন্দ্রচূড় মনে করেন, এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো, ভালো পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা এবং আক্রান্তদের জন্য উন্নত সহায়তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি।চন্দ্রচূড় বলেন, “আমার মেয়েরা আমাকে বিশ্বকে দেখার নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে।” তিনি জানান, তাঁর মেয়েদের এই অবস্থা তাঁকে ও তাঁর স্ত্রী কল্পনাকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার রক্ষায় আরও বেশি কাজ করতে হবে। তাঁর মতে, এই ধরনের শিশুদের জন্য সামাজিক বৈষম্য ও সুযোগের অভাব তাদের স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।চন্দ্রচূড়ের এই খোলাখুলি স্বীকারোক্তি নেমালাইন মায়োপ্যাথি রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করবে বলে আশা করা যায়। এর ফলে এই রোগ নিয়ে আরও গবেষণা হতে পারে এবং আক্রান্তদের জন্য উন্নত সহায়তা ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে। একজন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি হিসেবে চন্দ্রচূড়ের এই উদ্যোগ অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে বলে আশা করা যায়।চন্দ্রচূড় পরিবারের এই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা শিখতে পারি যে, প্রতিবন্ধিতা কোনো ব্যক্তির সম্ভাবনাকে সীমিত করে না। সঠিক সহায়তা ও যত্নের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন। চন্দ্রচূড়ের মেয়েরা তাঁদের পিতার কাছে শুধু প্রেরণার উৎস নয়, তাঁরা সমগ্র দেশের জন্য একটি উদাহরণ যে, প্রতিবন্ধিতা কোনো বাধা নয়।চন্দ্রচূড়ের এই স্বীকারোক্তি আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার কথা মনে করিয়ে দেয়।
কে এই বিচারপতি সঞ্জীব খান্না? যিনি ভারতের ৫১তম প্রধান বিচারপতি হতে চলেছেন
আমাদের সমাজে এখনও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি নানা ধরনের কুসংস্কার ও বৈষম্য রয়েছে। একজন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির এই উদ্যোগ এই বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করবে।চন্দ্রচূড়ের মেয়েদের অভিজ্ঞতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা ও চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা কতটা জরুরি। তাঁর মেয়েদের জন্য উপযুক্ত স্কুল খুঁজে পাওয়ার সংগ্রামের কথা শুনে আমরা বুঝতে পারি যে, এই ক্ষেত্রে আমাদের দেশে আরও অনেক উন্নতি প্রয়োজন।