ভারত এবার একটি বিরাট আন্তর্জাতিক ঘটনার সাক্ষী হতে চলেছে। আগামী ১৬ মার্চ, ২০২৫-এ দিল্লিতে বিশ্বের শীর্ষ ২০টি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা একত্রিত হবেন। এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের নেতৃত্ব দেবেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভাল। এই সম্মেলনে যোগ দেবেন আমেরিকার ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের ডিরেক্টর তুলসী গ্যাবার্ড, কানাডার গোয়েন্দা প্রধান ড্যানিয়েল রজার্স এবং ব্রিটেনের এমআই৬-এর প্রধান রিচার্ড মুরের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। এই ঘটনা শুধু ভারতের কূটনৈতিক ক্ষমতাই নয়, গোয়েন্দা জগতেও দেশের প্রভাব বাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এই বৈঠকের পিছনে রয়েছে একটি বড় উদ্দেশ্য। গ্লোবাল ইনটেলিজেন্স কনফারেন্স নামে পরিচিত এই সম্মেলনটি হবে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ। বিশ্ব এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং পশ্চিম এশিয়ার উত্তেজনার মতো জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমন সময়ে এই সম্মেলনের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে থাকবে অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, নিউজিল্যান্ডের মতো ভারতের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও। দিল্লিতে এই বৈঠকের আয়োজন করছে ভারতের বহির্গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (র) এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ সচিবালয় (এনএসসিএস)।
ঘটনার বিস্তারিত জানতে গেলে বোঝা যায়, এটি কোনো সাধারণ সভা নয়। ২০২২ সালে প্রথমবার এই ধরনের সম্মেলন আয়োজিত হয়েছিল, যখন ২৬টিরও বেশি দেশের গোয়েন্দা প্রধানরা দিল্লিতে জড়ো হয়েছিলেন। এবারও এই সম্মেলনটি রাইসিনা ডায়ালগের ঠিক একদিন আগে, অর্থাৎ ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। রাইসিনা ডায়ালগ ভারতের একটি বড় জিওপলিটিকাল ও জিওইকোনমিক সম্মেলন, যেখানে বিশ্বনেতারা অংশ নেন। এই গোয়েন্দা বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয় হবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যৌথ কৌশল, ডিজিটাল অপরাধ, সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ করা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা। অজিত দোভাল এই সম্মেলনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা প্রধানদের সঙ্গে একান্তে বৈঠকও করবেন বলে জানা গেছে।
এই সম্মেলনের প্রাসঙ্গিকতা আরও বাড়ে যখন আমরা বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির দিকে তাকাই। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনও চলছে, যা বিশ্ব অর্থনীতি ও নিরাপত্তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। পশ্চিম এশিয়ায় ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের জেরে উত্তেজনা তুঙ্গে। এছাড়া, চীন, রাশিয়া ও ইরানের যৌথ নৌ-মহড়া এবং পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসীদের ট্রেন হাইজ্যাকের মতো ঘটনা বিশ্বকে আরও অস্থির করে তুলেছে। ভারত এই পরিস্থিতিতে নিজেকে একটি নির্ভরযোগ্য শক্তি হিসেবে তুলে ধরতে চায়। অজিত দোভালের নেতৃত্বে এই সম্মেলন ভারতের গোয়েন্দা ও কূটনৈতিক ক্ষমতার একটি বড় প্রদর্শনী হতে চলেছে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, এই বৈঠকে কানাডার গোয়েন্দা প্রধান ড্যানিয়েল রজার্সের উপস্থিতি। ভারত ও কানাডার মধ্যে সম্পর্ক এখন তিক্ত। ২০২৩ সালে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যায় ভারতীয় এজেন্টদের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছিলেন, যা ভারত “অযৌক্তিক” বলে খারিজ করে দেয়। এরপর দুই দেশের কূটনীতিকদের বহিষ্কারের ঘটনা সম্পর্ককে আরও খারাপ করে। এই বৈঠকে দোভাল ও রজার্সের মধ্যে এই বিষয়টি উঠে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আমেরিকার তুলসী গ্যাবার্ডের উপস্থিতিও আলোচনার বিষয়। তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে ভারত সফরে আসছেন। জাপান, থাইল্যান্ড ও ফ্রান্স সফরের পর তিনি ১৫ মার্চ ভারতে পৌঁছাবেন। সম্মেলন ছাড়াও তিনি রাইসিনা ডায়ালগে বক্তৃতা দেবেন এবং দোভালের সঙ্গে একান্তে আলোচনা করবেন। গত মাসে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ওয়াশিংটনে দেখা করেছিলেন।
সব মিলিয়ে, এই সম্মেলন ভারতের জন্য একটি বড় সুযোগ। বিশ্বের গোয়েন্দা নেতারা এক মঞ্চে এসে যে আলোচনা করবেন, তা বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অজিত দোভালের নেতৃত্বে ভারত দেখাতে চায় যে, তারা শুধু আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।