আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে একজন জুনিয়র ডাক্তারের উপর ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে চিকিৎসকরা একটি অনন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাঁরা হাসপাতাল চত্বরে ‘অভয়া’ নামে একটি মূর্তি স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমে তাঁরা নিহত চিকিৎসকের স্মৃতিকে জীবন্ত রাখতে চান এবং হাসপাতালে নিরাপত্তার দাবি জানাতে চান।
গত ৯ আগস্ট ২০২৪ তারিখে আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। একজন কর্তব্যরত জুনিয়র ডাক্তারকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। এই ঘটনা সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং চিকিৎসকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়। ঘটনার পর থেকেই চিকিৎসকরা ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
চিকিৎসকরা নিহত সহকর্মীকে ‘অভয়া’ নাম দিয়েছেন। এই নামটি তাঁর পরিচয় গোপন রাখার পাশাপাশি তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর একটি উপায়। ‘অভয়া’ শব্দটির অর্থ হল নির্ভীক বা ভয়হীন, যা নিহত চিকিৎসকের সাহসিকতাকে প্রতিফলিত করে।
মূর্তি স্থাপনের সিদ্ধান্তটি ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট (WBJDF) নিয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন যে ২ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্লাটিনাম জুবিলি ভবনের সামনে ‘অভয়া’-র মূর্তি উন্মোচন করা হবে। এই অনুষ্ঠানটি সকাল ১১টায় শুরু হবে।
মূর্তি স্থাপনের পাশাপাশি চিকিৎসকরা একটি বৃহৎ প্রতিবাদ মিছিলেরও আয়োজন করেছেন। এই মিছিল কলকাতার কলেজ স্কোয়ার থেকে শুরু হয়ে ধর্মতলা পর্যন্ত যাব। মিছিলটি দুপুর ১টায় শুরু হবে। এই মিছিলে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর্মী সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও অংশ নেবেন।
চিকিৎসকদের এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র একজন সহকর্মীর স্মৃতি রক্ষার জন্য নয়, বরং হাসপাতালে নিরাপত্তার দাবি জানানোর জন্যও। তাঁরা মনে করেন যে এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস-এর পূর্ণব্রত গুণ বলেছেন, “মূর্তি স্থাপন এবং মিছিল – এই দুটি কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা ‘অভয়া’-র জন্য ন্যায়বিচার এবং হাসপাতালে নিরাপত্তার দাবি জানাতে চাই।”
এই ঘটনার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। চিকিৎসকরা অভিযোগ করেছেন যে গত ১৩ বছরে শাসক দলের দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের কারণে স্বাস্থ্য বিভাগের অবস্থা খারাপ হয়েছে। তাঁরা বলেছেন যে ২০২১ সালের নির্বাচনের পর এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
বন্যা দুর্গতদের পাশে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা, শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে চিকিৎসা শিবির
চিকিৎসকদের অভিযোগ, স্বাস্থ্য ভবন থেকে শুরু করে রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাস্থ্য নিয়োগ বোর্ড এবং মেডিকেল কাউন্সিল – সব জায়গায় দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। নিয়োগ, শিক্ষা এবং বদলি – সব ক্ষেত্রেই ঘুষ, স্বজনপোষণ এবং অবৈধ লেনদেন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসকরা প্রতিশোধমূলক বদলি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন, আর রোগীরা ভুগছেন নিম্নমানের ওষুধ ও যন্ত্রপাতির অভাবে।
এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা মনে করেন যে ‘অভয়া’-র মূর্তি স্থাপন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি শুধু একজন সহকর্মীর স্মৃতি রক্ষা করবে না, বরং হাসপাতালে নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।
উদিতা নাগ, যিনি শহরের বেসরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিনিধিত্ব করেন, জানিয়েছেন যে ২ অক্টোবরের প্রতিবাদ মিছিলের পর তাঁরা গঙ্গা নদীতে বড় সংখ্যক প্রদীপ ভাসাবেন ‘অভয়া’-র স্মরণে[4]। এটি হবে একটি অনন্য শ্রদ্ধাঞ্জলি।
কলকাতা হাইকোর্ট WBJDF-কে ১ অক্টোবর বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কলেজ স্কোয়ার থেকে রবীন্দ্র সদন পর্যন্ত সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ও এস্প্ল্যানেড হয়ে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল করার অনুমতি দিয়েছে[4]। হাইকোর্ট কলকাতা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে যাতে তারা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মী মোতায়েন করে যাতে কোনো অশান্তি না ঘটে এবং মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে চলতে পারে।
মুজিবরের মূর্তি ভাঙলেই কি আন্দোলনকারীরা মুছে ফেলতে পারবে কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে থেকে?
এই ঘটনার পর থেকে চিকিৎসকরা বিভিন্ন দাবি তুলেছেন। তাঁরা চাইছেন:
১. হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা।
২. চিকিৎসকদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা।
৩. স্বাস্থ্য বিভাগে দুর্নীতি বন্ধ করা।
৪. ‘অভয়া’-র হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার ও শাস্তি।
চিকিৎসকরা মনে করেন যে এই দাবিগুলি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন চলবে। তাঁরা বলেছেন যে ‘অভয়া’-র মূর্তি স্থাপন তাঁদের আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব।
এই ঘটনা প্রমাণ করে যে চিকিৎসকরা শুধু রোগীদের সেবা করেন না, তাঁরা সামাজিক দায়িত্বও পালন করেন। তাঁরা চান যে সমাজের সকল স্তরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হোক এবং মহিলারা নিরাপদে কাজ করতে পারেন।
‘অভয়া’-র মূর্তি স্থাপন একটি প্রতীকী পদক্ষেপ। এটি শুধু একজন চিকিৎসকের স্মৃতি রক্ষা করবে না, বরং সমাজকে স্মরণ করিয়ে দেবে যে আমাদের সকলের দায়িত্ব রয়েছে একটি নিরাপদ ও ন্যায়সঙ্গত সমাজ গড়ে তোলার।
চিকিৎসকদের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে তাঁরা শুধু রোগীদের সেবা করেন না, তাঁরা সমাজের প্রতিও দায়বদ্ধ। তাঁরা চান যে সমাজের সকল স্তরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হোক এবং মহিলারা নিরাপদে কাজ করতে পারেন।
‘অভয়া’-র মূর্তি স্থাপন একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এটি শুধু একজন চিকিৎসকের স্মৃতি রক্ষা করবে না, বরং সমাজকে স্মরণ করিয়ে দেবে যে আমাদের সকলের দায়িত্ব রয়েছে একটি নিরাপদ ও ন্যায়সঙ্গত সমাজ গড়ে তোলার।