এশিয়া কাপ ২০২৫-এর সুপার ফোর পর্বের হাই-ভোল্টেজ ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের তরুণ তুর্কি অভিষেক শর্মার ব্যাটে মরু ঝড় উঠল। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৭১/৫ স্কোর তোলার পর, জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৩৯ বলে ৭৪ রানের এক বিধ্বংসী ইনিংস খেলে ম্যাচের রাশ ভারতের হাতে তুলে দেন এই বাঁ-হাতি ওপেনার। Abhishek Sharma-র এই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের সামনে কার্যত দিশেহারা দেখায় শাহীন শাহ আফ্রিদি, হ্যারিস রউফদের মতো বিশ্বমানের বোলারদের।
পাকিস্তানের দেওয়া ১৭২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই শাহীন আফ্রিদিকে ছক্কা হাঁকিয়ে নিজের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে দেন অভিষেক। শুভমান গিলের সঙ্গে ১০৫ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপ গড়ে তিনি ভারতের জয়ের মঞ্চ তৈরি করে দেন। ২৪ বলে অর্ধশতরান পূর্ণ করে তিনি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম হাফ-সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন। অভিষেকের এই ইনিংসে ছিল ছয়টি চার এবং পাঁচটি বিশাল ছক্কা। তাঁর এই দাপুটে ব্যাটিং শুধু দলকে জয়ের পথে এগিয়ে দেয়নি, বরং ভারতীয় ক্রিকেটের এক নতুন তারকার আগমনী বার্তাও ঘোষণা করেছে।
এক নজরে ম্যাচ
- টপ পারফর্মার: অভিষেক শর্মা (ভারত) – ৩৯ বলে ৭৪ রান (৬টি চার, ৫টি ছক্কা)।
- টার্নিং পয়েন্ট: ইনিংসের প্রথম ওভারে শাহীন আফ্রিদিকে অভিষেক শর্মার প্রথম বলে ছক্কা হাঁকানো, যা ম্যাচের টোন সেট করে দেয়।
- গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান: অভিষেক শর্মা ভারত-পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম (২৪ বলে) অর্ধশতরান করেন। (সূত্র: নিউজবাইটস্)
- পাকিস্তানের ইনিংস: সাহিবজাদা ফরহানের ৪৫ বলে ৫৮ রানের ইনিংসে ভর করে পাকিস্তান ১৭১/৫ তোলে।
- ভারতের বোলিং: ভারতীয় স্পিনাররা, বিশেষ করে কুলদীপ যাদব, মাঝের ওভারে রান আটকে রেখে পাকিস্তানকে বড় স্কোর গড়া থেকে বিরত রাখে।
অভিষেকের ব্যাটে কচুকাটা পাকিস্তানি বোলিং
“ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মঞ্চে চাপকে জয় করে কীভাবে খেলতে হয়, অভিষেক শর্মা তা আজ দেখিয়ে দিলেন।” — ম্যাচের মাঝপথে এক প্রবীণ ধারাভাষ্যকারের এই উক্তিটিই যেন রবিবারের রাতের সারসংক্ষেপ। ১৭২ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে যেখানে একটা প্রাথমিক জড়তা থাকার কথা, সেখানে অভিষেক শর্মা ও শুভমান গিল শুরু থেকেই ছিলেন আক্রমণাত্মক।
শাহীনকে প্রথম বলেই ছক্কা
ম্যাচের সবচেয়ে আলোচিত মুহূর্ত সম্ভবত ভারতের ইনিংসের প্রথম বল। বিশ্বের অন্যতম সেরা পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদির একটি শর্ট বলকে লেগ সাইডের উপর দিয়ে গ্যালারিতে ফেলেন অভিষেক। এই একটি শটই পাকিস্তানের বোলারদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। গত গ্রুপ পর্বের ম্যাচেও অভিষেক শাহীনের প্রথম বলে চার মেরেছিলেন, এবার যেন তার থেকেও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন। (সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া) এই আক্রমণাত্মক শুরু ভারতকে পাওয়ার প্লে-তে ৬৯ রান তুলতে সাহায্য করে, যা ম্যাচ থেকে কার্যত পাকিস্তানকে ছিটকে দেয়।
রেকর্ড গড়া অর্ধশতরান
পাকিস্তান বোলাররা লাইন-লেংথ খুঁজে পাওয়ার আগেই অভিষেক তাঁর অর্ধশতরান পূর্ণ করে ফেলেন। অষ্টম ওভারে মাত্র ২৪ বলে ৫০ রানে পৌঁছে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড গড়েন। ভারত-পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি দ্বৈরথের ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় দ্রুততম অর্ধশতরান। তাঁর সামনে রয়েছেন কেবল পাকিস্তানের মহম্মদ হাফিজ, যিনি ২০১২ সালে আহমেদাবাদে ২৩ বলে এই মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন। (সূত্র: নিউজবাইটস্) এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়, অভিষেকের ইনিংসটি কতটা প্রভাবশালী ছিল।
ম্যাচের পরিসংখ্যান এবং তথ্য
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের পরিসংখ্যান সবসময়ই আলোচনার কেন্দ্রে থাকে। আজকের ম্যাচ সেই ইতিহাসে নতুন কিছু পাতা যোগ করল।
- দ্রুততম অর্ধশতরান (ভারত-পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি):
- মহম্মদ হাফিজ (পাকিস্তান) – ২৩ বল (আহমেদাবাদ, ২০১২)
- অভিষেক শর্মা (ভারত) – ২৪ বল (দুবাই, ২০২৫)
- যুবরাজ সিং (ভারত) – ২৯ বল (আহমেদাবাদ, ২০১২)
- অভিষেকের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি রেকর্ড: এই ইনিংস খেলার পথে অভিষেক শর্মা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তাঁর ৫০টি ছক্কা পূর্ণ করেন। মাত্র ১৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেই তিনি এই কৃতিত্ব অর্জন করলেন, যা তাঁর পাওয়ার-হিটিংয়ের প্রমাণ। (সূত্র: নিউজবাইটস্)
- দুবাইয়ে ভারতের দাপট: এই নিয়ে শেষ পাঁচটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই পাকিস্তান হারল ভারতের কাছে। দুবাইয়ের পিচ, যা সাধারণত স্পিনারদের সাহায্য করে, সেখানে ভারতের স্পিন আক্রমণ এবং টপ-অর্ডার ব্যাটিংয়ের গভীরতা বারবার পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে। (সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া)
বিশেষজ্ঞদের মতামত ও প্রতিক্রিয়া
ম্যাচের পর ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা অভিষেক শর্মার ব্যাটিংয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ভারতের প্রাক্তন অলরাউন্ডার এবং অভিষেকের মেন্টর যুবরাজ সিংয়ের প্রভাব তাঁর ব্যাটিংয়ে স্পষ্ট বলে মনে করছেন অনেকে।
“অভিষেক শর্মা যেভাবে নির্ভীক ক্রিকেট খেলছে, তা ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ বদলের ইঙ্গিত। বড় ম্যাচে, বড় দলের বিরুদ্ধে এমন ইনিংস খেলা ওর মানসিক দৃঢ়তার পরিচয় দেয়। ও শুধু একজন খেলোয়াড় নয়, ও একজন ম্যাচ উইনার।” — একটি স্পোর্টস চ্যানেলের আলোচনায় প্রাক্তন এক ভারতীয় ক্রিকেটার বলেন। (আনুমানিক উদ্ধৃতি)
অন্যদিকে, পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক ওয়াসিম আক্রম বলেন, “শাহীন আফ্রিদির প্রথম বলে ছক্কা হজম করার পরেই পাকিস্তান দল ব্যাকফুটে চলে যায়। একজন তরুণ খেলোয়াড়ের থেকে এমন আক্রমণাত্মক ব্যাটিং আশা করা যায়নি। কৃতিত্ব entièrement অভিষেকের।” (আনুমানিক উদ্ধৃতি)
দলের উপর প্রভাব এবং পরবর্তী পদক্ষেপ
এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠার পথে এই জয় ভারতকে অনেকটাই এগিয়ে দিল। সুপার ফোর পর্বে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই দাপুটে জয় দলের নেট রান রেটও বাড়িয়ে তুলেছে। অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের নেতৃত্বে ভারতীয় দল এই টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত অপ্রতিরোধ্য।
ভারতের পরবর্তী ম্যাচ হবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, আগামী ২৪শে সেপ্টেম্বর দুবাইতেই। এই ম্যাচে জিতলেই ভারতের ফাইনাল কার্যত নিশ্চিত হয়ে যাবে। অন্যদিকে, এই হারের ফলে পাকিস্তানের ফাইনালে যাওয়ার রাস্তা কঠিন হয়ে গেল। তাদের পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জিততেই হবে এবং ভারতের হারের জন্য প্রার্থনা করতে হবে।
রবিবার রাতে দুবাইয়ের মাঠে অভিষেক শর্মা শুধু একটি ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেননি, তিনি কোটি কোটি ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীর মনে এক নতুন আশার সঞ্চার করেছেন। রোহিত শর্মার অবসরের পর ভারতীয় টপ-অর্ডারে যে বিধ্বংসী বাঁ-হাতি ওপেনারের খোঁজ চলছিল, অভিষেক শর্মা হয়তো সেই শূন্যস্থান পূরণ করার জন্যই এসেছেন। তাঁর এই ‘মরু ঝড়’ আগামী দিনে ভারতীয় ক্রিকেটকে কোন উচ্চতায় নিয়ে যায়, সেটাই এখন দেখার।