Air conditioning troubleshooting: শীতের পর্দা নামতেই গরমের আনাগোনা, আর সেই সঙ্গে মনে পড়ে যায় এসির কথা। দীর্ঘ একটা শীতকাল এসি বাক্সবন্দী। তাই গরমে ঘর ঠান্ডা করার আগে তার একটু আদর-যত্ন করা দরকার। শীত শেষে আপনার বাড়ির এসিটিকে যদি ঝকঝকে আর কার্যকরী করতে চান, তাহলে এই ৫টি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখুন।
১. এসির একটা সার্ভিসিং করিয়ে নিন!
শীতের অলস সময় কাটিয়ে এসিকে ফের স্বমহিমায় ফেরাতে প্রফেশনাল সার্ভিসিংয়ের বিকল্প নেই। ভাবছেন তো, “এ আর এমন কি কাজ? নিজেই করে নেব।” সত্যি বলতে কী, এসির ভেতরের কলকব্জাগুলো বেশ জটিল। তাই নিজের হাতে করতে গেলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বরং একজন দক্ষ টেকনিশিয়ান দিয়ে করালে এসি যেমন ভালো থাকবে, তেমনই আপনার সময় বাঁচবে।
এসির বিল দেখে চক্ষু চড়ক গাছ! এই ১০টি ট্রিক জানলে বিদ্যুৎ বিল হবে অর্ধেক
সার্ভিসিংয়ের সময় যে বিষয়গুলো দেখবেন
- ফিল্টার পরিষ্কার: এসির ফিল্টার হলো ধুলো-বালির আঁতুড়ঘর। তাই সার্ভিসিংয়ের সময় ফিল্টার ভালো করে পরিষ্কার করা জরুরি।
- কয়েল পরিষ্কার: এসির কয়েলে জমা ধুলো ঠান্ডা বাতাস চলাচলে বাধা দেয়। তাই কয়েল পরিষ্কার রাখা দরকার।
- গ্যাস পরীক্ষা: এসির গ্যাস লিক হলে ঠান্ডা হওয়া কমে যায়। তাই গ্যাসের চাপ পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।
- বৈদ্যুতিক সংযোগ পরীক্ষা: এসির বৈদ্যুতিক সংযোগে ত্রুটি থাকলে শর্ট সার্কিট হতে পারে। তাই সার্ভিসিংয়ের সময় এটা পরীক্ষা করানো দরকার।
২. এসির ফিল্টার পরিষ্কার রাখা কতটা জরুরি?
এসির ফিল্টার পরিষ্কার রাখাটা নিয়মিত অভ্যাসের মধ্যে ফেলা উচিত। কারণ, ফিল্টার পরিষ্কার না থাকলে এসির কর্মক্ষমতা কমে যায়। শুধু তাই নয়, ঘরের বাতাসও দূষিত হতে পারে।
ফিল্টার পরিষ্কারের নিয়ম
- প্রথমে এসি বন্ধ করে ফিল্টার খুলুন।
- এরপর ফিল্টারের ধুলো ঝেড়ে নিন।
- তারপর হালকা গরম পানিতে ডিটারজেন্ট মিশিয়ে ফিল্টার ধুয়ে নিন।
- ফিল্টার ভালো করে শুকিয়ে আবার এসিতে লাগিয়ে দিন।
এই কাজটি মাসে একবার করলেই আপনার এসি অনেক দিন পর্যন্ত ভালো থাকবে।
৩. এসির গ্যাস লিক হলে কী করবেন?
এসির গ্যাস লিক হওয়া একটা সাধারণ সমস্যা। কিন্তু এটা ফেলে রাখলে এসির কম্প্রেশার খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই গ্যাস লিক হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
গ্যাস লিক সনাক্ত করার উপায়
- এসি থেকে ঠান্ডা বাতাস আসা কমে গেলে।
- এসির পাইপে বরফ জমলে।
- এসি চালানোর সময় গ্যাস গ্যাস গন্ধ পেলে।
যদি দেখেন আপনার এসিতে এই লক্ষণগুলো দেখা যাচ্ছে, তাহলে দেরি না করে একজন টেকনিশিয়ানকে ডাকুন।
৪. এসির কয়েল কিভাবে পরিষ্কার করবেন?
এসির কয়েল পরিষ্কার করাটা একটু ঝামেলার কাজ। তবে কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করলে আপনি নিজেই এটা করতে পারেন।
কয়েল পরিষ্কারের পদ্ধতি
- প্রথমে এসি বন্ধ করুন এবং বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন।
- এরপর এসির কভার খুলুন এবং কয়েল বের করুন।
- একটি নরম ব্রাশ দিয়ে কয়েলের ধুলো ঝেড়ে নিন।
- কয়েল ক্লিনার স্প্রে করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন।
- তারপর একটি ভেজা কাপড় দিয়ে কয়েল মুছে নিন।
- কয়েল ভালো করে শুকিয়ে আবার এসিতে লাগিয়ে দিন।
৫. এসির বৈদ্যুতিক সংযোগ পরীক্ষা করা কেন জরুরি?
এসির বৈদ্যুতিক সংযোগ পরীক্ষা করাটা খুবই জরুরি। কারণ, ত্রুটিপূর্ণ সংযোগের কারণে শর্ট সার্কিট হয়ে আগুন লাগতে পারে। তাই নিয়মিত এসির বৈদ্যুতিক সংযোগ পরীক্ষা করানো উচিত।
বৈদ্যুতিক সংযোগ পরীক্ষার নিয়ম
- এসির পাওয়ার কর্ড পরীক্ষা করুন, কোথাও কাটা বা ছেঁড়া আছে কিনা।
- এসির প্লাগ এবং সকেটের সংযোগ পরীক্ষা করুন।
- এসির ওয়্যারিং পরীক্ষা করুন, কোনো তার ঢিলা আছে কিনা।
যদি আপনি নিজে বৈদ্যুতিক কাজ করতে না জানেন, তাহলে একজন ইলেকট্রিশিয়ানকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিন।
কিছু অতিরিক্ত টিপস যা আপনার কাজে লাগবে
- এসি চালানোর সময় ঘরের দরজা- জানালা বন্ধ রাখুন, এতে ঘর দ্রুত ঠান্ডা হবে।
- এসির তাপমাত্রা ২৫-২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখুন, এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।
- নিয়মিত এসির সার্ভিসিং করান, এতে এসির আয়ু বাড়বে।
- এসি কেনার সময় ভালো ব্র্যান্ডের এবং এনার্জি এফিসিয়েন্ট মডেল কিনুন।
FAQ (Frequently Asked Questions)
এখানে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো, যা আপনার এসি রিপেয়ারিংয়ের কাজে লাগতে পারে:
১. এসির সার্ভিসিং কতদিন পর পর করানো উচিত?
সাধারণত, বছরে একবার এসির সার্ভিসিং করানো উচিত। তবে, যদি আপনার এসি বেশি ব্যবহার করা হয়, তাহলে বছরে দুইবার করানো ভালো।
২. এসির গ্যাস ভরতে কত খরচ হয়?
এসির গ্যাস ভরার খরচ এসির মডেল এবং গ্যাসের ধরনের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
৩. এসির ফিল্টার কতদিন পর পর পরিবর্তন করা উচিত?
এসির ফিল্টার সাধারণত ৩-৬ মাস পর পর পরিবর্তন করা উচিত। তবে, যদি আপনার ঘরে বেশি ধুলোবালি থাকে, তাহলে আরও আগে পরিবর্তন করতে পারেন।
৪. এসির কয়েল পরিষ্কার করতে কী ব্যবহার করা উচিত?
এসির কয়েল পরিষ্কার করার জন্য কয়েল ক্লিনার স্প্রে ব্যবহার করা ভালো। এটি কয়েলের ধুলো এবং ময়লা সহজে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
৫. এসি চালানোর সময় ঘর ঠান্ডা হতে বেশি সময় লাগলে কী করা উচিত?
যদি এসি চালানোর সময় ঘর ঠান্ডা হতে বেশি সময় লাগে, তাহলে প্রথমে ফিল্টার পরীক্ষা করুন। ফিল্টার পরিষ্কার থাকলে গ্যাস পরীক্ষা করুন এবং প্রয়োজন হলে সার্ভিসিং করান।
শীত শেষে এসি: কিছু দরকারি বিষয়
শীতের শেষে এসি চালু করার আগে কিছু বিষয় মনে রাখা দরকার। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার কারণে এসির মধ্যে ধুলো-ময়লা জমতে পারে, যা এসির কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। তাই, এসি চালু করার আগে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত।
১. এসির ভেতরের যন্ত্রাংশ পরীক্ষা
দীর্ঘ দিন এসি বন্ধ থাকার কারণে ইঁদুর বা অন্য কোনো পোকামাকড় ভেতরে বাসা বাঁধতে পারে। তাই এসি চালু করার আগে ভেতরের যন্ত্রাংশগুলো ভালোভাবে পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। কোনো তার ছেঁড়া থাকলে বা অন্য কোনো সমস্যা দেখলে দ্রুত মেকানিক ডেকে সারিয়ে নিন।
২. এসির বাইরের অংশের যত্ন
এসির বাইরের অংশেও অনেক ধুলো-ময়লা জমে থাকে। একটি ভেজা কাপড় দিয়ে এসির বাইরের অংশ ভালো করে মুছে নিন। খেয়াল রাখবেন, এসির কোনো অংশে যেন পানি না ঢোকে।
৩. এসির ভেন্টিলেশন
এসির ভেন্টিলেশন ঠিক রাখা খুব জরুরি। ভেন্টিলেশন বন্ধ থাকলে এসি ঘর ঠান্ডা করতে বেশি সময় নেবে এবং বিদ্যুতের খরচও বাড়বে। তাই নিশ্চিত করুন যে এসির ভেন্টিলেশন যেন কোনো কিছু দিয়ে ঢাকা না থাকে।
৪. এসির সাউন্ড পরীক্ষা
এসি চালু করার পর যদি দেখেন যে সেটি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি আওয়াজ করছে, তাহলে বুঝবেন যে কোনো সমস্যা আছে। এই ক্ষেত্রে, দ্রুত একজন মেকানিক ডেকে এসি পরীক্ষা করানো উচিত।
৫. এসির গ্যাস এবং কুলিং
এসি চালু করার পর যদি দেখেন যে ঘর ঠান্ডা হচ্ছে না, তাহলে বুঝবেন যে গ্যাসের সমস্যা আছে। গ্যাসের চাপ কমে গেলে কুলিং কমে যায়। এই ক্ষেত্রে, মেকানিক ডেকে গ্যাস রিফিল করে নিন।
এসি নিয়ে কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা
আমাদের সমাজে এসি ব্যবহার নিয়ে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। এই ধারণাগুলোর কারণে অনেকেই এসির সঠিক ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হন এবং নানা সমস্যায় পড়েন।
১. এসি চালালে স্বাস্থ্য খারাপ হয়
অনেকের ধারণা, এসি চালালে ঠান্ডা লেগে শরীর খারাপ হয়। তবে, সঠিক তাপমাত্রায় এসি চালালে এবং নিয়মিত সার্ভিসিং করালে স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং, এসির কারণে ঘরের ভেতরের দূষিত বাতাস ফিল্টার হয়ে যায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
২. এসিতে বিদ্যুৎ বিল অনেক বেশি আসে
অনেকে মনে করেন, এসি চালালে বিদ্যুৎ বিল অনেক বেশি আসে। কিন্তু, আধুনিক এনার্জি এফিশিয়েন্ট এসিগুলো বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। সঠিক তাপমাত্রায় এসি চালালে এবং অপ্রয়োজনে বন্ধ রাখলে বিদ্যুৎ বিল অনেক কমানো যায়।
৩. এসির দাম অনেক বেশি
আগে এসির দাম অনেক বেশি থাকলেও বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন দামের এসি পাওয়া যায়। আপনি আপনার বাজেট অনুযায়ী একটি ভালো এসি কিনতে পারেন।
৪. এসি শুধু গরমকালেই দরকারি
অনেকে মনে করেন, এসি শুধু গরমকালেই দরকারি। কিন্তু, এসির হিটিং মুড ব্যবহার করে শীতকালেও ঘর গরম রাখা যায়। তাই, এসি সারা বছরই ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫. পুরনো এসি পরিবর্তন করার দরকার নেই
পুরনো এসিগুলো সাধারণত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয় না। তাই, পুরনো এসি পরিবর্তন করে নতুন এনার্জি এফিশিয়েন্ট এসি কিনলে বিদ্যুৎ বিল অনেক কমানো যায়।
শীতের শেষে এসিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য এই বিষয়গুলো মাথায় রাখা খুবই জরুরি। নিয়মিত সার্ভিসিং, ফিল্টার পরিষ্কার এবং সঠিক ব্যবহার আপনার এসির আয়ু বাড়াতে সাহায্য করবে। সেই সাথে, আপনার ঘর থাকবে ঠান্ডা আর আপনি থাকবেন সুস্থ। তাহলে আর দেরি কেন, আজই আপনার এসির যত্ন নিন আর উপভোগ করুন আরামদায়ক গরমকাল।