৩৮ বছরে ১০০০ ছবি, সম্পদে অনেক হিরোকে ছাড়িয়ে গেছেন ব্রহ্মানন্দম

তেলুগু সিনেমার কিংবদন্তি কমেডিয়ান কান্নেগান্তি ব্রহ্মানন্দম একটি অবিশ্বাস্য রেকর্ডের মালিক, যা শুনলে যে কেউ অবাক হয়ে যাবেন। এই অসাধারণ অভিনেতা মাত্র ৩৮ বছরের অভিনয় জীবনে ১০০০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এবং গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে তার নাম লেখা রয়েছে। আরও চমকপ্রদ বিষয় হলো, তার মোট সম্পদ প্রায় ৫০০ করোড় টাকা, যা অনেক বলিউড ও দক্ষিণ ভারতীয় সুপারস্টারের চেয়েও বেশি।

১৯৮৭ সালে ‘আহা না পেল্লান্তা’ ছবি দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু করা ব্রহ্মানন্দম আজ ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া কমেডিয়ান। প্রতিটি ছবির জন্য তিনি ১ থেকে ২ করোড় টাকা পর্যন্ত নেন, এমনকি ছোট্ট ক্যামিও ভূমিকার জন্যও। তার বার্ষিক আয় ২৪ করোড় টাকারও বেশি, যার একটি বড় অংশ আসে টেলিভিশন বিজ্ঞাপন ও ব্র্যান্ড এন্ডোর্সমেন্ট থেকে।

ব্রহ্মানন্দমের জন্ম ১৯৫৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অন্ধ্রপ্রদেশের একটি ছোট গ্রাম চাগান্তি ভারি পালেমে। তার বাবা নাগালিঙ্গাচারী একজন কাঠমিস্ত্রি ছিলেন এবং মা লক্ষ্মী নরসাম্মা। আট ভাই-বোনের মধ্যে একজন ব্রহ্মানন্দম প্রথমে তেলুগু সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পড়াশোনা শেষ করে তিনি পশ্চিম গোদাবরী জেলার আত্তিলিতে একজন তেলুগু প্রভাষক হিসেবে কাজ শুরু করেন।

শিক্ষকতার পাশাপাশি ব্রহ্মানন্দম থিয়েটার ও অনুকরণ শিল্পী হিসেবেও কাজ করতেন। ১৯৮৫ সালে ডিডি তেলুগুর ‘পাকাপাকালু’ অনুষ্ঠানে তার টেলিভিশন অভিষেক হয়, যা দর্শকদের কাছে ব্যাপক প্রশংসা পায়। এই অনুষ্ঠানে তার অভিনয় দেখে বিখ্যাত পরিচালক জন্ধ্যালা তাকে ‘আহা না পেল্লান্তা’ ছবিতে সুযোগ দেন, যা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

১৪ বছরের ক্রিকেট প্রতিভা বৈভব সূর্যবংশীর net worth: চমকপ্রদ ধনসম্পদের গল্প!

অভিনয় জগতে প্রবেশের পর ব্রহ্মানন্দম দ্রুত তেলুগু সিনেমার অপরিহার্য অংশ হয়ে ওঠেন। তার কমিক টাইমিং ও প্রাকৃতিক অভিনয় প্রতিভা তাকে ‘তলিউডের কমেডি কিং’ উপাধি এনে দেয়। নব্বইয়ের দশকে তিনি বছরে গড়ে ৪০টি ছবিতে অভিনয় করতেন, যা একটি অবিশ্বাস্য রেকর্ড। তার সুখকর মুখ ও কমেডির প্রতিভা তাকে তেলুগু সিনেমার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও চাহিদাসম্পন্ন অভিনেতা বানিয়েছে।

২০১০ সালে ব্রহ্মানন্দম ক্রিস্টোফার লির পূর্বে ধারণ করা ২৪৪টি ছবির রেকর্ড ভেঙে ৮৫৭টি ছবিতে অভিনয়ের নতুন বিশ্বরেকর্ড স্থাপন করেন। তারপর থেকে তিনি আরও অন্তত ১৪৩টি ছবিতে অভিনয় করেছেন এবং বর্তমানে তার ছবির সংখ্যা ১০৫০ ছাড়িয়েছে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার সাথে এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছিলেন যে, ৯৯৭টি ছবির পর তিনি গণনা করা বন্ধ করে দিয়েছেন।

ব্রহ্মানন্দমের অসাধারণ সাফল্য শুধু পরিমাণেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং তার আর্থিক অর্জনও সমানভাবে চমকপ্রদ। ডিএনএ ও মানি কন্ট্রোলের তথ্য অনুযায়ী, তার মোট সম্পদ প্রায় ৬০ মিলিয়ন ডলার বা ৫০০ করোড় টাকা। এই বিপুল সম্পদ তাকে শুধু ভারতের সবচেয়ে ধনী কমেডিয়ানই করেনি, বরং রণবীর কাপুর (৩৫০ করোড়), প্রভাস (৩০০ করোড়), এমনকি রজনীকান্তের চেয়েও বেশি ধনী করে তুলেছে।

তুলনায়, কপিল শর্মার মোট সম্পদ ৩০০ করোড় টাকা এবং ভারতের অন্য কোনো কমেডিয়ানের সম্পদ ১০০ করোড় টাকাও ছাড়ায় না। ব্রহ্মানন্দম প্রতি বছর টেলিভিশন বিজ্ঞাপন থেকেই প্রায় ১.৫ করোড় টাকা আয় করেন। তিনি দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে দামী অভিনেতাদের একজন এবং একটি ছবির জন্য ২ থেকে ৩ করোড় টাকা পর্যন্ত নেন।

ব্রহ্মানন্দমের অভিনয় জীবনে রয়েছে অসংখ্য স্মরণীয় চরিত্র। ‘অঞ্জনেয়ুলু’, ‘ধী’, ‘বিক্রমার্কুড়ু’, ‘আথাড়ু’, ‘পোকিরি’, ‘রেডি’, ‘লৌক্যম’, ‘পাওয়ার’, ‘বালুপু’, ‘রেস গুররাম’-এর মতো হিট ছবিতে তার অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। তার প্রাকৃতিক কমেডি টাইমিং ও বুদ্ধিদীপ্ত হাস্যরস তাকে পারিবারিক দর্শকদের কাছে বিশেষভাবে জনপ্রিয় করে তুলেছে।

ভারত সরকার ২০০৯ সালে তার চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য তাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে। এছাড়াও তিনি ছয়টি নন্দী পুরস্কার, দুটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, সিনেমা পুরস্কার এবং তিনটি দক্ষিণ ভারতীয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। আচার্য নাগার্জুন বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রিও প্রদান করেছে।

‘নিজেদের ইমেজ বজায় রাখতে সবটা ধামাচাপা দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী’- অভিনেতা সুমন কুন্ডু

বর্তমানে ৬৯ বছর বয়সী ব্রহ্মানন্দম এখনও সক্রিয়ভাবে অভিনয় করে চলেছেন এবং তরুণ কমেডিয়ানদের কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিচ্ছেন। তিনি মেগাস্টার চিরঞ্জীবী, নাgarজুন, ভেঙ্কটেশ, বালকৃষ্ণ, রবিতেজা, রামচরণের মতো এ-লিস্ট নায়কদের সাথে অভিনয় করেছেন। তার অভিনয় জীবনে কোনো বিতর্ক বা নেতিবাচক ঘটনা নেই, যা তাকে আরও সম্মানীয় করে তুলেছে।

আজকের প্রেক্ষাপটে ব্রহ্মানন্দম শুধু একজন সফল অভিনেতা নন, বরং তিনি একটি অনুপ্রেরণার নাম। একজন সাধারণ শিক্ষক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ছবিতে অভিনয়কারী জীবিত অভিনেতা হয়ে ওঠা তার জীবনী যেকোনো স্বপ্নবাজ মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা। তার সাফল্যের মূল রহস্য হলো কঠোর পরিশ্রম, প্রতিভা এবং সুযোগকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর ক্ষমতা।

Share This Article