symptoms of acute pancreatitis: অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস হলো অগ্ন্যাশয়ের (pancreas) হঠাৎ প্রদাহজনিত একটি রোগ, যেখানে অগ্ন্যাশয়ে আকস্মিকভাবে তীব্র ফোলা ও ব্যথা শুরু হয়। অগ্ন্যাশয় আমাদের পেটের পেছনে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা হজমের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম ও ইনসুলিন জাতীয় হরমোন তৈরি করে। এই রোগটি সাধারণত হঠাৎ শুরু হয় এবং সময়মতো চিকিৎসা না হলে তা জীবনঘাতীও হয়ে উঠতে পারে।
রোগটি কীভাবে হয়? — কারণ ও ঝুঁকি
অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিসের প্রধান দুটি কারণ হলো:
- পিত্তনালিতে পাথর (Gallstones): পিত্তনালিতে পাথর জমে গেলে তা অগ্ন্যাশয়ের নালী ব্লক করে দেয়, ফলে এনজাইম বের হতে না পেরে অগ্ন্যাশয়েই সক্রিয় হয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
- অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান: দীর্ঘদিন ধরে বা অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান অগ্ন্যাশয়ের কোষে ক্ষতি করে প্রদাহের সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়াও কিছু কম প্রচলিত কারণ রয়েছে:
- রক্তে চর্বি (লিপিড) বা ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে যাওয়া
- অগ্ন্যাশয়ে আঘাত পাওয়া
- কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (যেমন: স্টেরয়েড, কিছু ডিউরেটিক)
- ভাইরাল সংক্রমণ
- জেনেটিক বা পারিবারিক ইতিহাস
- কিছু ক্ষেত্রে কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না (ইডিওপ্যাথিক)
লক্ষণ ও উপসর্গ: কখন সতর্ক হবেন?
অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিসের প্রধান লক্ষণ হলো:
- পেটের ওপরের অংশে হঠাৎ তীব্র ব্যথা, যা পিঠে ছড়িয়ে পড়তে পারে
- ব্যথা অনেক সময় বুকের দিকেও যেতে পারে
- বমি ও বমি বমি ভাব
- পেটে ফোলা, স্পর্শে অস্বস্তি
- জ্বর ও দুর্বলতা
কিছু ক্ষেত্রে রোগী এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়ে যে, শ্বাসকষ্ট, রক্তচাপ কমে যাওয়া, এমনকি কিডনি বা হার্টের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
রোগের জটিলতা ও পরিসংখ্যান
বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ১৫–৪২ জন প্রতি ১ লাখে এই রোগে আক্রান্ত হন এবং সংখ্যাটি বাড়ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগটি মৃদু হলেও, প্রায় ২০% রোগীর ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়—যেমন অঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া, ইনফেকশন, অথবা প্যানক্রিয়াসের টিস্যু নষ্ট হয়ে যাওয়া। মৃদু অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিসে মৃত্যুর হার ১% এর কম, তবে গুরুতর ক্ষেত্রে এটি ২০–৩০% পর্যন্ত হতে পারে। দ্রুত ও সঠিক চিকিৎসা না পেলে মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
রোগ নির্ণয়: কীভাবে জানা যায়?
রোগীর উপসর্গ, শারীরিক পরীক্ষা, এবং কিছু নির্দিষ্ট রক্ত পরীক্ষা (যেমন: অ্যামাইলেজ, লাইপেজ এনজাইমের মাত্রা বৃদ্ধি) দিয়ে সাধারণত রোগটি শনাক্ত করা হয়। প্রয়োজনে আল্ট্রাসনোগ্রাফি, সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করা হয়, বিশেষ করে জটিলতা বা কারণ নির্ণয়ের জন্য।
চিকিৎসা: অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিসের করণীয়
প্রাথমিক চিকিৎসা
- বিশ্রাম ও পর্যবেক্ষণ: রোগীকে সাধারণত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সম্পূর্ণ বিশ্রাম, তরল ও ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স ঠিক রাখা হয়।
- ব্যথানাশক ওষুধ: তীব্র ব্যথা কমাতে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়।
- খাদ্য: প্রথম দিকে মুখে কিছু খেতে দেওয়া হয় না, প্রয়োজন হলে শিরায় (IV) তরল ও পুষ্টি দেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি হলে ধীরে ধীরে তরল ও সহজপাচ্য খাবার শুরু করা হয়।
- কারণভিত্তিক চিকিৎসা: যদি পিত্তনালিতে পাথর থাকে, তাহলে প্রয়োজন হলে এন্ডোস্কোপি বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পাথর অপসারণ করা হয়। অ্যালকোহলজনিত হলে অ্যালকোহল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হয়।
- জটিলতা দেখা দিলে: সংক্রমণ হলে অ্যান্টিবায়োটিক, অঙ্গ বিকল হলে আইসিইউ সাপোর্ট, এবং প্রয়োজনে অস্ত্রোপচার করা হয়।
প্রতিরোধ ও সচেতনতা
- অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান এড়িয়ে চলুন
- পিত্তনালিতে পাথর থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
- স্থূলতা, উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার, এবং ধূমপান এড়িয়ে চলুন
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের
অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস একটি হঠাৎ ও গুরুতর রোগ, যা সময়মতো চিকিৎসা পেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেরে যায়। তবে অবহেলা করলে মারাত্মক জটিলতা হতে পারে। তাই উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাস এড়িয়ে চলুন। সুস্থ অগ্ন্যাশয় মানেই সুস্থ হজম ও সুস্থ জীবন—সচেতনতাই পারে আপনাকে ও আপনার পরিবারকে এই বিপজ্জনক রোগ থেকে রক্ষা করতে।