AI age prediction: আপনি কি কখনো ভেবেছেন, আপনার বয়স কতটা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব? এবার সেই উত্তর মিলবে আপনার চোখের মধ্যেই! আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে শুধুমাত্র চোখের ছবি বিশ্লেষণ করেই একজন মানুষের প্রকৃত বয়স বলে দেওয়া সম্ভব। শুধু তাই নয়, এই প্রযুক্তি আমাদের স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ চিকিৎসা ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
কিভাবে কাজ করে “চোখ দেখেই বয়স বলে দেবে এআই”?
চোখের পেছনের অংশ, অর্থাৎ রেটিনার ছবি (Retinal Fundus Image) বিশ্লেষণ করে এই AI মডেল বয়স নির্ধারণ করে। গবেষকরা লক্ষ করেছেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের রেটিনায় সূক্ষ্ম পরিবর্তন আসে—যেমন রক্তনালির গঠন, রঙের পরিবর্তন, কিংবা টিস্যুর ঘনত্ব। এইসব পরিবর্তন বিশ্লেষণ করে AI মডেল খুবই নির্ভুলভাবে বয়স অনুমান করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা “Frozen and Learning Ensemble Crossover (FLEX)” নামের একটি উন্নত AI মডেল তৈরি করেছেন, যা ১০ হাজারের বেশি মানুষের ২০ হাজারেরও বেশি রেটিনা ছবি দিয়ে প্রশিক্ষিত। এই মডেল শুধু বয়সই নয়, বরং চোখের বয়স (Retinal Age) ও প্রকৃত বয়সের পার্থক্য (Retinal Age Gap) নির্ধারণ করতে পারে। এই পার্থক্য যদি বেশি হয়, তাহলে দেহের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গও দ্রুত বার্ধক্যের দিকে এগোচ্ছে কিনা, তা আগেভাগেই জানা সম্ভব।
চোখের বয়স ও স্বাস্থ্য: নারীদের জন্য বিশেষ বার্তা
গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের ক্ষেত্রে চোখের বয়স ও প্রকৃত বয়সের মধ্যে পার্থক্য থাকলে সেটি সন্তান ধারণের সক্ষমতা ও মেনোপজের ঝুঁকি সম্পর্কে আগাম বার্তা দেয়। গবেষকরা প্রায় ১,৩০০ প্রি-মেনোপজাল নারীর ২,৫০০ রেটিনা ছবি বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, যেসব নারীর চোখের বয়স তাদের প্রকৃত বয়সের চেয়ে বেশি, তাদের রক্তে অ্যান্টি-মুলেরিয়ান হরমোন (AMH) কম থাকে। এই হরমোন নারীর ডিম্বাণু রিজার্ভ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়—অর্থাৎ, কম AMH মানে গর্ভধারণের সম্ভাবনাও কম।
৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিটি বাড়তি ‘রেটিনাল বছর’ ৪০-৪৪ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে AMH কমে যাওয়ার ঝুঁকি ১২% এবং ৪৫-৫০ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি ২০% পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। অর্থাৎ, চোখের বয়সের তথ্য ভবিষ্যতে নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
চোখের ছবি থেকে আরও কী জানা সম্ভব?
চোখের ছবি বিশ্লেষণ করে শুধু বয়স নয়, বরং ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্নায়বিক সমস্যা ইত্যাদিরও আগাম ইঙ্গিত পাওয়া সম্ভব। গবেষকরা বলছেন, চোখের রেটিনার ছবি বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতে আরও নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি শনাক্ত করা যাবে। উদাহরণস্বরূপ, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখিয়েছেন, চোখের প্রোটিন বিশ্লেষণ করেও AI বয়স নির্ধারণ করতে পারে এবং চোখের রোগ থাকলে সেই বয়স অনেক বেশি দেখায়। এমনকি, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি বা পারকিনসন রোগের ক্ষেত্রেও এই প্রযুক্তি কার্যকর হতে পারে।
চোখ দেখেই বয়স বলে দেবে এআই: প্রযুক্তির নির্ভুলতা কতটা?
বর্তমান সময়ে বিভিন্ন AI মডেলের মধ্যে “Retinal Age”, “EyeAge”, “PhotoAgeClock” ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এইসব মডেল গড়ে ২.৩ থেকে ৩.৯৭ বছরের মধ্যে বয়স নির্ধারণে ভুল করে, অর্থাৎ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বয়স নির্ধারণ প্রায় নিখুঁত। জাপান, চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের গবেষকরা এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন এবং অনেক ক্ষেত্রেই এটি চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার উপযোগী বলে প্রমাণিত হয়েছে।
চোখের ছবি দিয়ে বয়স নির্ধারণ: ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
এই প্রযুক্তি এখনো গবেষণার পর্যায়ে থাকলেও, ভবিষ্যতে চিকিৎসা, স্বাস্থ্যঝুঁকি নির্ধারণ, এমনকি ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যপরিকল্পনায় (Personalized Medicine) AI-নির্ভর চোখের বয়স নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। তবে, গবেষকরা বলছেন, আরও বড় পরিসরে এবং বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন, যাতে প্রযুক্তির নির্ভুলতা ও ব্যবহারিক মূল্যায়ন নিশ্চিত করা যায়।
“চোখ দেখেই বয়স বলে দেবে এআই”—এই প্রযুক্তি শুধু বয়স নির্ধারণেই নয়, বরং আমাদের স্বাস্থ্য, জীবনযাত্রা ও ভবিষ্যত চিকিৎসা ব্যবস্থায় এক নতুন বিপ্লবের সূচনা করছে। একদিকে যেমন এটি আমাদের বার্ধক্য ও স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে আগাম সতর্কতা দিতে পারছে, অন্যদিকে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যপরিকল্পনা ও চিকিৎসা সিদ্ধান্ত গ্রহণেও সহায়ক হবে। চোখের ছবি আর কেবল দৃষ্টিশক্তি নয়, এবার তা হয়ে উঠছে আমাদের বয়স ও স্বাস্থ্যগত ভবিষ্যতের নির্ভরযোগ্য আয়না।