অজিত দোভালের প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
হরিয়ানার জন্ম: অজিত কুমার দোভাল ২০ জানুয়ারি ১৯৪৫ সালে হরিয়ানার গরওয়ালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন একজন সেনা কর্মকর্তা, যা দোভালের জীবনে দেশপ্রেমের বীজ বপন করে।
শিক্ষা: দোভাল নিজের শিক্ষাজীবন শুরু করেন অজমের মিলিটারি স্কুল থেকে এবং পরবর্তীতে আগ্রার ডঃ ভীমরাও আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
আইপিএস ক্যারিয়ার শুরু
প্রবেশ আইপিএস-এ: অজিত দোভাল ১৯৬৮ সালে কেরালা ক্যাডারের আইপিএস অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর প্রথম পোস্টিং ছিল কেরালায়, কিন্তু খুব শীঘ্রই তিনি গোয়েন্দা বিভাগে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতে শুরু করেন।
দোভালের উল্লেখযোগ্য অপারেশনসমূহ
মিজো বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণ
১৯৮০ সালে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের বিদ্রোহ দমন করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দোভালের কৌশলগত চতুরতা ও তার বিচক্ষণ নেতৃত্ব মিজোরামে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হয়।
অপারেশন ব্লু স্টার
অপারেশন ব্লু স্টার (১৯৮৪) সময়ে তিনি স্বর্ণ মন্দিরে প্রবেশ করে বিদ্রোহীদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেন এবং সফলভাবে অপারেশন সম্পন্ন করতে সহায়তা করেন।
পাকিস্তানে গোপন অভিযান
অজিত দোভাল পাকিস্তানে গোপনে ছয় বছর অতিবাহিত করেন, যেখানে তিনি গুপ্তচর হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেন। তাঁর এই কৃতিত্ব তাকে ভারতের গোয়েন্দা বিভাগে একজন কিংবদন্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দোভালের ভূমিকা
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অধীনে অজিত দোভাল ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (NSA) হিসেবে নিয়োগ পান। তাঁর এই পদে আসীন হওয়া ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নতুন যুগের সূচনা করে।
সার্জিক্যাল স্ট্রাইক
২০১৬ সালে উরির সেনা ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলার পর, দোভালের নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক পরিচালনা করে, যা সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করে দেয়।
বালাকোট এয়ার স্ট্রাইক
২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার প্রতিশোধ হিসেবে দোভালের পরিকল্পনায় ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানের বালাকোটে সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে এয়ার স্ট্রাইক করে। এই স্ট্রাইক বিশ্বমঞ্চে ভারতের নিরাপত্তা নীতির দৃঢ়তা প্রদর্শন করে।
দোভালের নেতৃত্বে ভারতের কৌশলগত পরিবর্তন
ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO)
অজিত দোভালের নেতৃত্বে DRDO-এর কার্যক্রম উন্নত হয় এবং দেশীয় প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির বিকাশে নতুন মাত্রা যোগ হয়।
ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (IB) ও রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (RAW)
দোভালের অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বে IB ও RAW আরও কার্যকর ও সমন্বিত ভাবে কাজ করতে সক্ষম হয়। তাঁর গোয়েন্দা দক্ষতা ও কৌশলগত দূরদর্শিতা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
অজিত দোভালের সম্মাননা ও পুরস্কার
অজিত দোভাল তাঁর অসাধারণ কর্মজীবনের জন্য বিভিন্ন সম্মাননা ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৮৮ সালে তাঁকে কীর্তি চক্র পুরস্কারে ভূষিত করা হয়, যা সাধারণত সামরিক কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য।
উপসংহার
অজিত দোভাল শুধু একজন আইপিএস অফিসার নন, তিনি একজন কৌশলগত চিন্তাবিদ এবং ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ। তাঁর জীবনের বিভিন্ন অধ্যায় এবং সাফল্য ভারতের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে এক অসামান্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।