অমিতাভ বচ্চন বলিউডের সবচেয়ে বড় সুপারস্টারদের একজন। কিন্তু তাঁর এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের কাহিনী। ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে যখন তিনি মুম্বাইতে অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলেন, তখন তাঁকে অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল। এমনকি রাতের পর রাত তাঁকে মেরিন ড্রাইভের বেঞ্চে শুয়ে থাকতে হয়েছিল, যেখানে তাঁর প্রতিবেশী ছিল বিশাল বিশাল ইঁদুর।
একটি সাক্ষাৎকারে অমিতাভ বচ্চন জানিয়েছিলেন যে, তিনি যখন মুম্বাইতে এসেছিলেন তখন তাঁর কাছে খুব কম টাকা ছিল। তিনি বন্ধুদের বাড়িতে কিছুদিন থাকার পর বুঝতে পারেন যে এভাবে বেশিদিন চলবে না। তাই তিনি মেরিন ড্রাইভের বেঞ্চে রাত কাটাতে শুরু করেন। তিনি বলেছিলেন, “আমার থাকার জায়গা ছিল না। আপনি জানেন বন্ধুদের বাড়িতে সীমিত সময়ের জন্য থাকা যায়, কারণ আপনি তাদের বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করছেন। তাই আমি কয়েকদিন মেরিন ড্রাইভের বেঞ্চে কাটিয়েছি, যেখানে আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে বড় ইঁদুরগুলোর সাথে।”
এই সময় অমিতাভ বচ্চনকে বিজ্ঞাপনে অভিনয় করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় একটি বিজ্ঞাপনের জন্য ১০,০০০ টাকা অফার করা হয়েছিল, যা তখনকার দিনে বিশাল অঙ্কের টাকা ছিল। কিন্তু অমিতাভ বচ্চন সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেছিলেন, “তখনও সুযোগ ছিল, যখন বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলি আমার কাছে এসেছিল। আমাকে একটি বিজ্ঞাপনের জন্য ১০,০০০ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল, যা বিশাল অর্থ ছিল কারণ আমি রেডিও স্পটে মাসে ৫০ টাকা আয় করতাম। কিন্তু আমি মনে করেছিলাম বিজ্ঞাপন করলে আমার কিছু হারিয়ে যাবে এবং আমি শুধু প্রলোভন প্রতিরোধ করেছিলাম।”
চিনি ব্যবহারের অন্ধকার দিক: জেনে নিন কি কি ক্ষতি করছেন নিজের
অমিতাভ বচ্চন বলেছিলেন যে তিনি মুম্বাইতে এসেছিলেন শুধুমাত্র অভিনেতা হওয়ার জন্য। তিনি বলেন, “আমি মুম্বাইতে এসেছিলাম একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে, আর কিছুই না। আমি ভেবেছিলাম যদি অভিনেতা না হতে পারি তাহলে ট্যাক্সি চালাব। পুরো উদ্দেশ্য ছিল অভিনয় করা।”
এই ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে অমিতাভ বচ্চন কতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন অভিনেতা হওয়ার ব্যাপারে। তিনি জানতেন যে বিজ্ঞাপনে অভিনয় করলে তাঁর মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যেতে পারেন। তাই তিনি অর্থের প্রলোভন প্রতিরোধ করেছিলেন।
অমিতাভ বচ্চনের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব সহজ ছিল না। কারণ তখন তাঁর কাছে খুব কম টাকা ছিল এবং থাকার জায়গাও ছিল না। কিন্তু তিনি তাঁর স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে তাঁর কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল, তাই তিনি ভেবেছিলেন যে যদি অভিনেতা হতে না পারেন তাহলে ট্যাক্সি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করবেন।
অমিতাভ বচ্চনের এই সংগ্রামের দিনগুলি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯৬৯ সালে তিনি তাঁর প্রথম ছবি ‘সাত হিন্দুস্তানি’-তে অভিনয় করেন। এরপর ১৯৭১ সালে ‘আনন্দ’ ছবিতে অভিনয় করে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। কিন্তু তাঁর প্রকৃত সাফল্য আসে ১৯৭৩ সালে ‘জঞ্জির’ ছবির মাধ্যমে। এই ছবির পর থেকে তিনি ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ হিসেবে পরিচিতি পান।
অমিতাভ বচ্চনের জীবনের এই ঘটনা থেকে আমরা শিখতে পারি যে সফলতার জন্য দৃঢ় সংকল্প ও ত্যাগ প্রয়োজন। তিনি যখন মুম্বাইতে এসেছিলেন তখন তাঁর কাছে কোনো গ্যারান্টি ছিল না যে তিনি সফল হবেন। কিন্তু তিনি তাঁর স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সব রকম কষ্ট স্বীকার করেছিলেন।
অমিতাভ বচ্চনের এই সময়কার আরও একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল যে তিনি তখন রেডিওতে কাজ করতেন এবং মাসে মাত্র ৫০ টাকা আয় করতেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে ১০,০০০ টাকার বিজ্ঞাপন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা তাঁর জন্য একটি বড় সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু তিনি জানতেন যে বিজ্ঞাপনে অভিনয় করলে তা তাঁর অভিনেতা হওয়ার স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অমিতাভ বচ্চনের এই সময়কার জীবন যাপন পদ্ধতি থেকে আমরা দেখতে পাই যে তিনি কতটা নিষ্ঠাবান ছিলেন তাঁর লক্ষ্যের প্রতি। তিনি যখন মেরিন ড্রাইভের বেঞ্চে শুয়ে থাকতেন, তখন তাঁর পাশে থাকত বিশাল বিশাল ইঁদুর। এই অবস্থায় অনেকেই হয়তো হাল ছেড়ে দিত, কিন্তু অমিতাভ বচ্চন তা করেননি। তিনি জানতেন যে এটা একটা অস্থায়ী অবস্থা এবং একদিন তিনি তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছে যাবেন।
অমিতাভ বচ্চনের এই সময়কার জীবন থেকে আমরা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পেতে পারি। তা হল, জীবনে সফল হতে হলে শুধু প্রতিভা থাকলেই হয় না, সেই সাথে প্রয়োজন অধ্যবসায় ও ধৈর্য। অমিতাভ বচ্চন যখন মুম্বাইতে এসেছিলেন, তখন তিনি শুধু একজন সাধারণ যুবক ছিলেন যার স্বপ্ন ছিল অভিনেতা হওয়ার। কিন্তু তিনি কখনও হাল ছাড়েননি। তিনি ধৈর্য ধরে তাঁর লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন।
অমিতাভ বচ্চনের জীবনের এই পর্যায়টি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সফলতার পথ কখনোই সহজ নয়। প্রত্যেক সফল ব্যক্তিকেই তাঁর জীবনের কোনো না কোনো সময়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু যারা এই কঠিন সময়গুলোকে অতিক্রম করতে পারেন, তারাই শেষ পর্যন্ত সফল হন।
অমিতাভ বচ্চনের এই ঘটনা থেকে আমরা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখতে পারি। তা হল, নিজের মূল্যবোধ ও আদর্শকে আঁকড়ে ধরে রাখা। তিনি যখন বিজ্ঞাপনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, তখন তিনি জানতেন যে এটা তাঁর জন্য একটি বড় অর্থের প্রস্তাব। কিন্তু তিনি তাঁর মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি।