কবুতর থেকে তিমি: কোন প্রাণী সেরা গুপ্তচর? জানুন চাঞ্চল্যকর তথ্য!

Best animal spy dolphin dead mouse cat pigeon: গুপ্তচর হিসেবে বিভিন্ন প্রাণীর ব্যবহার একটি অত্যন্ত রোমাঞ্চকর ও বিস্ময়কর বিষয়। বিশেষ করে শীতল যুদ্ধের সময় থেকেই বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি নানা…

Avatar

 

Best animal spy dolphin dead mouse cat pigeon: গুপ্তচর হিসেবে বিভিন্ন প্রাণীর ব্যবহার একটি অত্যন্ত রোমাঞ্চকর ও বিস্ময়কর বিষয়। বিশেষ করে শীতল যুদ্ধের সময় থেকেই বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি নানা ধরনের প্রাণীকে গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে কবুতর, বিড়াল, তিমি, ডলফিন, মরা ইঁদুর এবং এমনকি পোকামাকড়ও। তবে এদের মধ্যে কোন প্রাণীটি সবচেয়ে কার্যকর গুপ্তচর হিসেবে কাজ করেছে তা জানা যাক।

কবুতর: সবচেয়ে সফল গুপ্তচর প্রাণী

গুপ্তচর হিসেবে কবুতরের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছে বলে জানা যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে আধুনিক কাল পর্যন্ত কবুতর গুপ্তচর হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষ করে বার্তা বহন ও এরিয়াল ফটোগ্রাফি নেওয়ার ক্ষেত্রে কবুতরের সাফল্যের হার খুবই উচ্চ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা “অপারেশন কলম্বা” নামে একটি অত্যন্ত সফল গুপ্তচর কর্মসূচি পরিচালনা করে যেখানে কবুতর ব্যবহার করা হয়। এই কর্মসূচির মাধ্যমে নাৎসি বাহিনীর গতিবিধি, নতুন অস্ত্র সম্পর্কিত তথ্য এবং রকেট হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছিল।১৯৭০ এর দশকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা CIA-ও সোভিয়েত ইউনিয়নে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য ক্ষুদ্র ক্যামেরা সংযুক্ত কবুতর ব্যবহার করেছিল। এমনকি ২০২৩ সালেও ভারতে একটি কবুতরকে গুপ্তচরবৃত্তির সন্দেহে আটক করা হয়েছিল। এসব তথ্য থেকে বোঝা যায় যে, কবুতর দীর্ঘদিন ধরে একটি অত্যন্ত কার্যকর গুপ্তচর প্রাণী হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
Indian National Fish: ভারতের জাতীয় মাছ নয়, জলজ প্রাণী – জানুন এই প্রাণীর অজানা রহস্য!

তিমি ও ডলফিন: জলের নীচে গুপ্তচরবৃত্তি

সামুদ্রিক প্রাণী যেমন তিমি ও ডলফিনও গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ২০১৯ সালে নরওয়ের উপকূলে “Hvaldimir” নামে একটি বেলুগা তিমি পাওয়া যায় যার গায়ে “Equipment St Petersburg” লেখা একটি হার্নেস লাগানো ছিল। এটি নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা হয়েছিল যে রাশিয়া হয়তো এই তিমিকে গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহার করছিল। তবে পরবর্তীতে মেরিন বায়োলজিস্টরা মনে করেছেন যে এটি সম্ভবত থেরাপি তিমি হিসেবে ব্যবহৃত হতো।ডলফিনের ক্ষেত্রেও অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে। শীতল যুদ্ধের সময় সোভিয়েত নৌবাহিনী সেভাস্তোপোলের কাছে ডলফিন প্রশিক্ষণের কর্মসূচি চালিয়েছিল। অন্যদিকে মার্কিন নৌবাহিনীও Marine Mammal Program (MMP) এর অধীনে ডলফিনকে পানির নীচে নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহের কাজে ব্যবহার করেছে। ১৯৬০ এর দশকে CIA-ও Project OXYGAS নামে একটি কর্মসূচি চালিয়েছিল যেখানে শত্রু জাহাজে বিস্ফোরক লাগানোর জন্য ডলফিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।

বিড়াল: অসফল গুপ্তচর প্রাণী

শীতল যুদ্ধের সময় CIA বিড়ালকেও গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিল। “Project Acoustic Kitty” নামে একটি কর্মসূচির মাধ্যমে তারা বিড়ালের শরীরে শ্রবণযন্ত্র ও ট্রান্সমিটার লাগিয়ে গুপ্ত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বিড়ালের অনিয়ন্ত্রিত আচরণের কারণে এই প্রকল্প সফল হয়নি। CIA-এর একটি গোপন দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে যে বাস্তব পরিস্থিতিতে এই কৌশল ব্যবহার করা সম্ভব নয়।

মরা ইঁদুর: অস্বাভাবিক গুপ্তচর মাধ্যম

CIA আরও একটি অদ্ভুত পদ্ধতি ব্যবহার করেছিল যেখানে মরা ইঁদুরের দেহের মধ্যে গোপন বার্তা লুকিয়ে রাখা হতো। এর পিছনে যুক্তি ছিল যে মৃত ইঁদুরের দেহ দেখে বেশিরভাগ মানুষ ঘৃণায় দূরে সরে যাবে, ফলে গোপন বার্তা নিরাপদে থাকবে। কিন্তু পরীক্ষামূলকভাবে দেখা গেল যে বিড়ালরা এই মৃত ইঁদুর খেয়ে ফেলছে। তাই CIA বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করেছিল যাতে বিড়ালরা মৃত ইঁদুর না খায়।
এছাড়াও বিভিন্ন পাখি, কাক, এমনকি পোকামাকড়কেও গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হয়েছে। CIA একবার কাককে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল যাতে তারা জানালার কানিশে শ্রবণযন্ত্র বসাতে পারে। ১৯৬০ এর দশকে CIA Project Aquiline নামে একটি কর্মসূচি চালিয়েছিল যেখানে পাখির আকৃতির ড্রোন তৈরি করে গুপ্তচরবৃত্তির চেষ্টা করা হয়েছিল। ১৯৭০ এর দশকে তারা ফড়িংয়ের আকৃতির একটি ড্রোনও তৈরি করেছিল যার মাথায় ক্ষুদ্র মাইক্রোফোন লাগানো ছিল।
সফলতার ১৫টি অভ্যাস: শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের জীবন থেকে শেখার মতো পাঠ
বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে কবুতর সবচেয়ে সফল গুপ্তচর হিসেবে কাজ করেছে। এর কারণ হলো কবুতরের উচ্চ বুদ্ধিমত্তা, প্রশিক্ষণযোগ্যতা এবং পরিবেশের সাথে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা। তিমি ও ডলফিনও সমুদ্রের নীচে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। অন্যদিকে বিড়াল ও মরা ইঁদুরের মতো প্রাণীর ব্যবহার তেমন সফল হয়নি।তবে প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে গুপ্তচরবৃত্তিতে প্রাণীর ব্যবহার কমে আসছে। বর্তমানে অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ও ড্রোনের মাধ্যমে অধিকাংশ গুপ্তচরবৃত্তি করা হয়। তবুও ইতিহাসে প্রাণীদের গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহারের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বিশেষ করে কবুতরের অবদান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ যা আজও বিস্ময় জাগায়।
About Author
Avatar

আমাদের স্টাফ রিপোর্টারগণ সর্বদা নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন যাতে আপনি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সর্বশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে পারেন। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রতিশ্রুতি আমাদের ওয়েবসাইটকে একটি বিশ্বস্ত তথ্যের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।তারা নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্টিংয়ে বিশ্বাসী, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন তৈরিতে সক্ষম