অন্নদাশঙ্কর রায়ের লেখা প্রথম ভ্রমণ কাহিনী হলো “পথে প্রবাসে”, যা ১৯৩১ সালে প্রথম বই আকারে প্রকাশিত হয়েছিল। এই ভ্রমণ সাহিত্যটি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে স্বীকৃত এবং আজও পাঠকদের কাছে সমাদৃত। তেইশ-চব্বিশ বছর বয়সে ইংল্যান্ডে আই.সি.এস প্রশিক্ষণের সময় (১৯২৭-১৯২৯) লেখা এই ভ্রমণবৃত্তান্ত শুধু একটি সাধারণ ভ্রমণ বিবরণী নয়, বরং এটি ইউরোপীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির এক গভীর বিশ্লেষণ।
অন্নদাশঙ্কর রায়ের জীবন পরিচয়
অন্নদাশঙ্কর রায় ১৫ মার্চ ১৯০৪ সালে ব্রিটিশ ভারতের উড়িষ্যার ঢেঙ্কানলে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২৮ অক্টোবর ২০০২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি একজন স্বনামধন্য বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক এবং ছড়াকার হিসেবে বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন। তার পিতা নিমাইচরণ রায় ছিলেন ঢেঙ্কানল রাজস্টেটের কর্মী এবং মাতা হেমনলিনী ছিলেন কটকের প্রসিদ্ধ পালিত বংশের কন্যা।
শিক্ষাজীবন ও প্রাথমিক সাফল্য
অন্নদাশঙ্কর রায় ১৯২১ সালে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯২৫ সালে বি.এ পরীক্ষায় ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তবে তার সবচেয়ে বড় সাফল্য আসে ১৯২৭ সালে যখন তিনি এম.এ পড়তে পড়তে আই.সি.এস পরীক্ষায় দ্বিতীয়বারে পূর্ববর্তী রেকর্ড ভেঙে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং সকল ভারতীয় প্রার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পান। তিনিই প্রথম ভারতীয় হিসেবে এ গৌরব লাভ করেন।
”পথে প্রবাসে” – বাংলা ভ্রমণ সাহিত্যের রত্ন
রচনার পটভূমি
১৯২৭ সালে আই.সি.এস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর অন্নদাশঙ্কর রায় সরকারি খরচে শিক্ষানবিশি করতে ইংল্যান্ড যান। তখন তার বয়স মাত্র তেইশ বছর। ১৯২৭ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত দুই বছর ইংল্যান্ডে অবস্থানকালে তিনি লন্ডন ও ইংল্যান্ডের বিভিন্ন স্থান এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেন। ছুটির সময়ে তিনি সুইজারল্যান্ডের লেজাঁ, ফ্রান্সের প্যারিস, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা, জার্মানি ও ইতালির বিভিন্ন শহর পরিদর্শন করেন।
প্রকাশনার ইতিহাস
“পথে প্রবাসে” প্রথমে ধারাবাহিকভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত “বিচিত্রা” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৩১ সালে এটি বই আকারে প্রথম প্রকাশিত হয় এম.সি. সরকার এন্ড সন্স থেকে। এরপর এর অসংখ্য সংস্করণ হয়েছে, যা পাঠকদের নিরন্তর সমাদরের প্রমাণ। বইটি ১০৩ পৃষ্ঠার এক অমূল্য দলিল।
প্রমথ চৌধুরীর প্রশংসা
“পথে প্রবাসে”-র গুরুত্ব বোঝা যায় যখন বাংলা সাহিত্যের দিকপাল প্রমথ চৌধুরী স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এর ভূমিকা লেখেন। প্রমথ চৌধুরী লিখেছিলেন, “আমি যখন বিচিত্রা পত্রিকায় প্রথম পথে প্রবাসে পড়ি, তখন আমি সত্য সত্যই চমকে উঠেছিলুম। কলম ধরেই এমন পাকা লেখা লিখতে হাজারে একজনও পারেন না”। তিনি আরও বলেন, “তাঁর ভ্রমণবৃত্তান্ত যথার্থ সাহিত্য হয়েছে। এ লেখকের মতামতের পিছনে যে একটি সজীব মনের স্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়, সে বিষয়ে কিছুমাত্র সন্দেহ নেই”।
বইটির বিশেষত্ব ও বিষয়বস্তু
অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি
“পথে প্রবাসে” কোনো সাধারণ ভ্রমণ বিবরণী নয়। এখানে রেলের টাইম-টেবিল ধরে দ্রষ্টব্য স্থানের বস্তুগত বিবরণ লিপিবদ্ধ হয়নি, অথবা ভ্রমণের আড়াল দিয়ে নরনারীর প্রেমাখ্যান পরিবেষিত হয়নি। বরং এটি একটি তরুণ ভারতীয় মনের ওপর বিদেশ ভ্রমণ—বিশেষত ইউরোপ ভ্রমণ—কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে তার পরিচয়স্থল।
ইউরোপীয় সভ্যতার বিশ্লেষণ
অন্নদাশঙ্কর তার জিজ্ঞাসু ও বিশ্লেষণী মন দিয়ে ইউরোপীয় সভ্যতা, সংস্কৃতি, মানুষের চরিত্র ও সমাজব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি লন্ডন শহরকে দক্ষিণ কলকাতার একটা বড়ো সংস্করণ বলে অভিহিত করেছেন, তবে পরিচ্ছন্নতা, শৃঙ্খলা এবং সাধারণ মানুষের কর্মতৎপরতায় পার্থক্য নির্দেশ করেছেন। ইংরেজ চরিত্রের বিশ্লেষণে তিনি উল্লেখ করেছেন যে ইংরেজরা উন্নাসিক ও আলাপচারিতায় অপটু, কিন্তু তাদের শালীনতাবোধ প্রখর।
সমাজ-রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ
অন্নদাশঙ্কর রায় ইউরোপের সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং সামাজিক পরিবর্তনের গভীর বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি লক্ষ্য করেছেন যে ইংল্যান্ডে সোশ্যালিজমের প্রভাব পড়েছে বোর্ডিং স্কুল, নার্সিং হোম, হাসপাতাল, পাবলিক লাইব্রেরি ইত্যাদিতে। তিনি মন্তব্য করেছেন, “বিপ্লবকে ইংল্যান্ড ঠেকিয়ে রাখে প্রতিদিন একটু একটু করে ঘটতে দিয়ে”।
ভারতবর্ষ ও ইংল্যান্ডের তুলনামূলক আলোচনা
বইটিতে ভারতবর্ষ ও ইংল্যান্ডের সংস্কৃতি এবং চরিত্রের তুলনামূলক আলোচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অন্নদাশঙ্কর মনে করেন, “ভারতবর্ষ ও ইংল্যান্ড চরিত্রের জগতে antipodes। ভারতবর্ষকে পরিপূর্ণতা দিতে ইংল্যান্ড ছুটে গেছে”। তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন, “আমাদের দেশে যদি সবাই সামান্য করেও কিছু করত – প্রতিদিন করত তবে আমাদের অসাধারণ মানুষগুলিকে অহরহ চরকার মতো ঘুরতে হতো না”।
রমা রলাঁর সাক্ষাৎকার
বইটির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলো সুইজারল্যান্ডের লেজাঁয় ফরাসি লেখক রমা রলাঁর সাথে অন্নদাশঙ্করের সাক্ষাৎকারের বিবরণ। এই সাক্ষাৎকারে শিল্পী ও সাহিত্যিকদের সামাজিক দায়বদ্ধতা, যুদ্ধ এবং শিক্ষা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। রলাঁ বলেছিলেন, “যে মানুষ আর্টিস্ট সে মানুষ কেবল আর্টচর্চা করে ক্ষান্ত হবে না, সে ভালোর স্বপক্ষে ও মন্দের বিপক্ষে প্রোপাগাণ্ডা করবে”।
অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্যিক অবদান
বহুমুখী প্রতিভা
অন্নদাশঙ্কর রায় শুধু ভ্রমণ সাহিত্যিক ই নন, তিনি ছিলেন একজন বহুমুখী লেখক। তার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ “তরুন্য” (১৯২৮) তাকে প্রাবন্ধিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। “অসমাপিকা” ও “আগুন নিয়ে খেলা” তার প্রথম দুটি উপন্যাস। তিনি ছয় খণ্ডের মহাকাব্যিক উপন্যাস “সত্যাসত্য” রচনা করেছেন, যা বাংলা সাহিত্যে একটি অনন্য কৃতিত্ব।
ছড়া ও কবিতা
অন্নদাশঙ্কর রায় ছিলেন একজন জনপ্রিয় ছড়াকার। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর তিনি লেখেন বিখ্যাত ছড়া “তেলের শিশি ভাঙল বলে খুকুর পরে রাগ করো, তোমরা যে সব বুড়ো খোকা ভারত ভেঙে ভাগ করো তার বেলা?”। এই ছড়াটি দেশভাগের বেদনা তীব্রভাবে তুলে ধরে এবং আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনা
তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে “জাপানে” (ভ্রমণকাহিনী), “প্রকৃতির পরিহাস” (১৯৩৪), “মন পবন” (১৯৪৬), “কামিনী কাঞ্চন” (১৯৫৪) এবং “কথা” (ছোটগল্প সংকলন)। তার প্রবন্ধ “বাংলার রেনেসাঁ” বাংলার সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিপ্লবের একটি বিশ্লেষণাত্মক ইতিহাস।
পুরস্কার ও সম্মাননা
অন্নদাশঙ্কর রায় তার সাহিত্যকর্মের জন্য অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। ১৯৬২ সালে তিনি সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণ খেতাবে ভূষিত করে। ১৯৮৯ সালে তিনি সাহিত্য আকাদেমির ফেলো নির্বাচিত হন। তিনি দুইবার (১৯৮৩ ও ১৯৯৪) আনন্দ পুরস্কার পান।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মান
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে দেশিকোত্তম সম্মান প্রদান করে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডিলিট) উপাধি প্রদান করে। ১৯৭৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে জগত্তারিণী পদক পুরস্কারে ভূষিত করে।
অন্যান্য পুরস্কার
তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার, নজরুল পুরস্কার, বিদ্যাসাগর পুরস্কার, শিরোমণি পুরস্কার (১৯৯৫) এবং বাংলাদেশের জেবুন্নিসা পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি প্রথম সভাপতি হন এবং আমৃত্যু এই পদে ছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবন
১৯৩০ সালে অন্নদাশঙ্কর রায় মার্কিন পিয়ানোবাদক অ্যালিস ভার্জিনিয়া অর্নডর্ফকে বিবাহ করেন এবং তার নাম রাখেন লীলা রায়। লীলা রায় ছিলেন একজন সাহিত্যিক প্রতিভাবান নারী যিনি বহু বই বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। অন্নদাশঙ্করের অনেক লেখা “লীলাময়” ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছিল।
প্রশাসনিক ক্যারিয়ার
১৯৩৬ সালে তিনি নদীয়া জেলার ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কাজে যোগ দেন। এর আগে তিনি কুষ্টিয়া মহকুমার হাকিম ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি কুমিল্লা জেলায় জজ হিসাবে নিযুক্ত হন এবং ১৯৫০ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিচার বিভাগের সচিব হন। ১৯৫১ সালে তিনি স্বেচ্ছায় সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন সম্পূর্ণভাবে সাহিত্যচর্চায় নিজেকে নিয়োজিত করার জন্য।
“পথে প্রবাসে”-র দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি
পরিবর্তন ও গতিশীলতা
“পথে প্রবাসে”-তে অন্নদাশঙ্কর রায় জীবনের পরিবর্তনশীলতা এবং গতিশীলতার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “ইউরোপের জীবনে যেন বন্যার উদ্দাম গতি সর্বাঙ্গে অনুভব করতে পাই, ভাবকর্মের শতমুখী প্রবাহ মানুষকে ঘাটে ভিড়তে দিচ্ছে না”। তবে তিনি এও বলেছেন, “পৃথিবী দিন দিন বদলে যাচ্ছে, মানুষ দিন দিন বদলে যাচ্ছে – কিন্তু উন্নতি? প্রগতি? পারফেকশন? তা’ কোনো দিন ছিলও না, কোনোদিন হবারও নয়”।
আধুনিক জীবনের চরিত্র
আধুনিক জীবনের চরিত্র সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, “এটা পুনর্যাযাবরতার যুগ, আমরা সকলকেই চাই, কাউকেই চাইনে, আমাদের আলাপী বন্ধু শত শত, কিন্তু দরদী বন্ধু একটিও নেই”। তবু তিনি এই পরিবর্তনকে সুন্দর বলে মনে করেন কারণ “আমরা পথিক, আমাদের স্নেহ প্রীতি বন্ধুতার বোঝা হালকা হওয়াই তো দরকার”।
“পথে প্রবাসে”-র সাহিত্যিক মূল্য
রচনাশৈলী
অন্নদাশঙ্কর রায়ের রচনাশৈলী তার গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং প্রমথ চৌধুরীর দুই ভিন্ন ধারার সমন্বয়। তিনি ছিলেন নাগরিক এবং পরিশীলিত, এবং তার লেখায় এই দুই শৈলীর সফল মিশ্রণ ঘটিয়েছেন। তার বর্ণনা কোথাও কোথাও কাব্যময় হয়ে উঠেছে। প্রথম লন্ডন দেখার বর্ণনায় তিনি লিখেছেন, “লন্ডনের সঙ্গে আমার শুভদৃষ্টি হলো গোধূলি লগ্নে। হ’তে না হ’তেই সে চক্ষু নত করে আঁধারের ঘোমটা টেনে দিলে”।
পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা
বইটির সবচেয়ে বড় শক্তি হলো লেখকের সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এবং বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি। অন্নদাশঙ্কর শুধু ভ্রমণ করেননি, দেখেছেন চোখ চেয়ে, অনুভব করেছেন, বিশ্লেষণ করেছেন আর অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছেন। তার লেখায় ইতিহাস সচেতনতা যেমন আছে, তেমনি আছে তার নিজস্ব দার্শনিকতা।
চিরন্তন প্রাসঙ্গিকতা
“পথে প্রবাসে” প্রকাশিত হয়েছিল প্রায় একশো বছর আগে, কিন্তু বইটি আজও সমান প্রাসঙ্গিক। অন্নদাশঙ্করের এক সময়ের বহুচর্চিত উপন্যাস এখন বিস্মৃতপ্রায়, কিন্তু “পথে প্রবাসে” এবং তার ছড়াগুলি আধুনিক যুগের পাঠকের কাছে অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণীয়। এর অসংখ্য সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে, যা পাঠকবর্গের নিরন্তর সমাদরের নিদর্শন।
সাংস্কৃতিক প্রভাব
বাংলা ভ্রমণ সাহিত্যে অবদান
“পথে প্রবাসে” বাংলা ভ্রমণ সাহিত্যে একটি মাইলফলক হিসেবে স্বীকৃত। রবীন্দ্রনাথের “ইউরোপ প্রবাসীর পত্র” ও “ইউরোপ যাত্রীর ডায়েরি”-র পরে এটি বাংলা ভ্রমণ সাহিত্যের একটি শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। অন্নদাশঙ্কর নিজে ভ্রমণকাহিনীর রূপ ও রীতির বৈচিত্র্য নিয়ে নানাভাবে ভেবেছেন। তার মতে, “সকলের দৃষ্টিভঙ্গী একই রকমের নয়। কারো দৃষ্টি রসিকের, কারো ক্রিটিকের। যাদৃশী দৃষ্টি সৃষ্টিও তাদৃশী”।
শিক্ষাক্ষেত্রে প্রভাব
অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্যকর্ম বাংলাদেশে এবং ভারতে বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। “পথে প্রবাসে” বইটি পশ্চিমবঙ্গের নবম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত, যা নতুন প্রজন্মের কাছে এই মহান লেখকের পরিচয় ঘটাচ্ছে।
অন্নদাশঙ্কর রায়ের “পথে প্রবাসে” শুধু একটি ভ্রমণ কাহিনী নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক দলিল, একটি দার্শনিক অনুসন্ধান এবং একটি সাহিত্যিক রত্ন। তেইশ বছর বয়সে লেখা এই বইটি বাংলা সাহিত্যে আজও অমর হয়ে আছে কারণ এটি শুধু ভাষা ও স্টাইলের দিক থেকে নয়, আইডিয়া ও আইডিয়ালের দিক থেকেও আদর্শ। এটি প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের মধ্যে, প্রাচীন ও আধুনিকের মধ্যে এক মেলবন্ধন। অন্নদাশঙ্কর রায় ছিলেন বাঙালি প্রতিভার এক শ্রেষ্ঠ উদাহরণ এবং তাই আজও আমরা তাকে মনে রেখেছি এক হৃদয়হীন প্রগতিবাদী চিন্তক হিসাবে।











