বাংলা সিনেমায় শিশুসুরক্ষার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আসছে অপরাজিতা আঢ্য ও দেবদূত ঘোষের নতুন ছবি ‘শিহরন’। পরিচালক বাপ্পা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় এই ছবিটি একটি স্কুলের সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করে তৈরি হচ্ছে, যেখানে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জটিল সমস্যাগুলি তুলে ধরা হবে। ছবিতে অপরাজিতা একজন স্কুল প্রিন্সিপালের চরিত্রে এবং দেবদূত ঘোষ ও অঞ্জনা বসু স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকায় দেখা যাবেন।
শিশুদের উপর অতিরিক্ত চাপ এবং তার মানসিক প্রভাব নিয়ে গভীর বার্তা নিয়ে আসছে এই ছবি। পরিচালক বাপ্পা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে বর্তমানে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের সবক্ষেত্রে সেরা হিসেবে দেখতে চান, কিন্তু অনেক সময় অজান্তেই এই প্রত্যাশা শিশুদের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। ছবির মূল বিষয়বস্তু হলো একটি শিশুর মানসিক অস্থিরতার কারণে ঘটে যাওয়া ঘটনার ভয়ানক পরিণতি।
‘শিহরন’ ছবির গল্প একটি স্কুল ও একজন স্কুলপড়ুয়া শিশুকে কেন্দ্র করে এগিয়ে চলবে। পরিচালক ব্যাখ্যা করেছেন যে অনেক সময় বাবা-মায়েরা অজান্তেই সন্তানের উপর চাপ সৃষ্টি করেন, যার ফলে শিশুরা মানসিক অস্থিরতায় ভোগে। এই সমস্যাটি প্রায়শই উপেক্ষিত থেকে যায় এবং শিশুদের নিজেরাই এই চাপ সামলাতে বাধ্য হয়। মন ও মাথার সাথে লড়াই করতে গিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তারা লুকিয়ে রাখে, যা পরবর্তীতে বিরাট সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বহুরূপী: শিবপ্রসাদ-নন্দিতার নতুন ছবি যা দর্শকদের মুগ্ধ করেছে – জানুন সব খুঁটিনাটি
নবাগত শিশুশিল্পী কৌশানী এই ছবিতে মুখ্য শিশু চরিত্রে অভিনয় করছেন। পরিচালক জানিয়েছেন যে এত অল্প বয়সেই কৌশানী দারুণ অভিনয় দক্ষতা প্রদর্শন করছেন। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করবেন বর্ষীয়ান অভিনেতা ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায়।
বাংলা সিনেমায় শিশুসুরক্ষার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ইতিমধ্যে বেশ কিছু প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা দেখা গেছে। ‘জুম জুম জুম’ নামের একটি বাংলা শর্ট ফিল্ম শিশু যৌন নির্যাতন সচেতনতার উপর তৈরি করা হয়েছে, যেখানে শিশুদের শিখানো হয়েছে কীভাবে অপরিচিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হয় এবং বিপদের সময় সাহায্য চাইতে হয়।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও মিমি চক্রবর্তীও শিশুদের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে একটি সচেতনতামূলক মিউজিক ভিডিওতে অংশগ্রহণ করেছেন। পরিচালক সুদেষ্ণা রায়ের এই প্রকল্পে দেখানো হয়েছে যে আজকের যুগে শিশুরা প্রযুক্তির সাথে বেড়ে উঠছে এবং তাদের অনলাইন নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
ইউনিসেফ ইন্ডিয়া এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার একসাথে শিশুদের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জন্য কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান তাদের CSR ফান্ড ব্যবহার করে শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
শিশু বিয়ে নিয়েও বাংলা সিনেমায় সচেতনতামূলক কাজ হয়েছে। পুরুলিয়ার বিনা কালিন্দীর জীবনের উপর ভিত্তি করে নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ‘জয়ী’ নামের একটি শর্ট ফিল্ম তৈরি করেছেন। এই ছবিতে দেখানো হয়েছে কীভাবে একটি ১২ বছরের মেয়ে পরিবারের চাপ সত্ত্বেও নিজের শিক্ষার অধিকার রক্ষা করেছে।
বর্তমানে বাংলার চলচ্চিত্র শিল্পে বাস্তব সমস্যা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছবি তৈরির প্রবণতা বাড়ছে। ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ ছবিতে শিশু অধিকার ও সাংস্কৃতিক পার্থক্যের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। এই ছবিতে দেখানো হয়েছে কীভাবে ভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে শিশু লালন-পালনের পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হতে পারে।
‘শিহরন’ ছবির একটি গান ইতিমধ্যে শুট করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বাকি শুটিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরের মধ্যেই ছবিটি বড়পর্দায় মুক্তি পাবে।
অপরাজিতা আঢ্য সম্প্রতি ‘এটা আমাদের গল্প’ ও ‘৫ নং স্বপ্নময় লেন’ সহ একাধিক ছবিতে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন। তার ফিল্মোগ্রাফিতে ‘প্রাক্তন’, ‘বেলাশেষে’, ‘হামি’ এর মতো সফল ছবি রয়েছে। অন্যদিকে দেবদূত ঘোষ একজন প্রতিভাবান অভিনেতা হিসেবে ধারাবাহিক ও চলচ্চিত্র উভয় মাধ্যমেই কাজ করছেন।
শিশু নিরাপত্তা ও সুরক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। ‘বাল সুরক্ষা’ নামের একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে যা শিশু যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এই অ্যাপে বাবা-মা, শিক্ষক, ডাক্তার, পুলিশ ও আইনজীবীদের জন্য শিশুদের সাথে কীভাবে আচরণ করতে হবে তার বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।
গুগল সেফটি সেন্টার থেকেও বাচ্চা ও পরিবারের জন্য অনলাইন সুরক্ষার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখানে ফ্যামিলি লিঙ্ক অ্যাপের মাধ্যমে অভিভাবকীয় নিয়ন্ত্রণ স্থাপন, স্ক্রিন টাইম সীমা নির্ধারণ এবং শিশুদের উপযুক্ত কন্টেন্ট নির্বাচনের সুবিধা রয়েছে।
‘শিহরন’ ছবিটি বাংলা সিনেমার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হতে পারে কারণ এটি শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কাজ করছে। পরিচালক বাপ্পা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, এই ছবি দর্শকদের বুঝতে সাহায্য করবে যে অভিভাবকদের অজান্তে করা চাপ কীভাবে শিশুদের জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
ছবির প্রযোজনায় রয়েছে স্কোয়ার ওয়ান এন্টারটেনমেন্ট। শুটিংয়ের কাজ চলমান থাকলেও নির্দিষ্ট মুক্তির তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি। তবে আশা করা হচ্ছে যে এই ছবি শিশুসুরক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং অভিভাবক ও শিক্ষাবিদদের মধ্যে প্রয়োজনীয় সচেতনতা তৈরি করবে।