apple cider vs juice health benefits: আপনি কি জানেন যে অ্যাপল সাইডার এবং আপেলের জুস আসলে একই জিনিস নয়? দেখতে প্রায় একই রকম হলেও, এই দুটি পানীয়ের মধ্যে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য। অনেকে ভুল করে মনে করেন যে এগুলো একই পণ্য, কিন্তু আসলে তৈরির প্রক্রিয়া, স্বাদ, পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতার দিক থেকে এদের মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। আজকের এই আলোচনায় আমরা বিস্তারিতভাবে জানবো অ্যাপল সাইডার এবং আপেলের জুসের মধ্যে মূল পার্থক্যগুলি, যাতে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
অ্যাপল সাইডার কী এবং কীভাবে তৈরি হয়?
অ্যাপল সাইডার হলো তাজা আপেল চিপে তৈরি একটি প্রাকৃতিক পানীয় যা সাধারণত ঘোলা এবং গাঢ় সোনালি রঙের হয়। এটি তৈরি করার সময় আপেলকে পিষে রস বের করা হয় এবং কোনো ফিল্টারিং প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয় না। এই কারণে সাইডারে আপেলের প্রাকৃতিক উপাদান যেমন খোসা, বীজ এবং অন্যান্য অংশ থেকে আসা পুষ্টি উপাদান সংরক্ষিত থাকে।
তৈরির প্রক্রিয়াটি বেশ সরল। প্রথমে তাজা আপেল ধোয়া হয়, তারপর সেগুলো চূর্ণ করে একটি প্রেসে চাপ দিয়ে রস বের করা হয়। এই রস কোনো ধরনের পরিস্রাবণ ছাড়াই সরাসরি বোতলজাত করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তার জন্য পাস্তুরিত করা হলেও, অনেক সময় কাঁচা অবস্থায়ই বিক্রি করা হয়।
আপেলের জুস তৈরির পদ্ধতি
অন্যদিকে আপেলের জুস তৈরির প্রক্রিয়া অনেক বেশি জটিল এবং প্রক্রিয়াজাত। আপেলের জুস তৈরি হয় রান্না করা আপেল থেকে। প্রথমে আপেল গরম করা হয়, তারপর রস বের করে সেটিকে ভালোভাবে ছেঁকে পরিষ্কার করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় সমস্ত ঘোলাটে অংশ এবং পাল্প সরিয়ে ফেলা হয়, যার ফলে একটি স্বচ্ছ তরল পাওয়া যায়।
আপেলের জুস সাধারণত ১৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় পাস্তুরিত করা হয়, যা এর স্থায়িত্ব বাড়ায় এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। এই প্রক্রিয়ার ফলে জুসের স্বাদ হয় মোলায়েম এবং মিষ্টি।
পুষ্টিগত পার্থক্য বিশ্লেষণ
অ্যাপল সাইডারের পুষ্টিমান
এক কাপ (২৪৮ গ্রাম) অ্যাপল সাইডারে রয়েছে:
-
ক্যালোরি: ১১৪-১২০
-
প্রোটিন: ০.২-০.৩ গ্রাম
-
ফ্যাট: ০.৩ গ্রাম
-
কার্বোহাইড্রেট: ২৮ গ্রাম
-
ফাইবার: ০.৫ গ্রাম
-
চিনি: ২৪ গ্রাম
অ্যাপল সাইডারে রয়েছে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন সি। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, যেহেতু এটি ফিল্টার করা হয় না, তাই এতে আপেলের জুসের তুলনায় বেশি পলিফেনল থাকে।
আইফোনে চ্যাটজিপিটি: এআই যুগে অ্যাপলের নতুন অধ্যায়
আপেলের জুসের পুষ্টিমান
এক কাপ আপেলের জুসে রয়েছে:
-
ক্যালোরি: ১১০
-
প্রোটিন: ০ গ্রাম
-
ফ্যাট: ০ গ্রাম
-
কার্বোহাইড্রেট: ২৬ গ্রাম
-
চিনি: ২৪ গ্রাম
-
ভিটামিন সি: দৈনিক প্রয়োজনের ১০০%
আপেলের জুস প্রক্রিয়াজাত হওয়ার কারণে এতে প্রায় কোনো ফাইবার থাকে না এবং পলিফেনলের পরিমাণও কম থাকে।
স্বাস্থ্য উপকারিতার তুলনা
অ্যাপল সাইডারের স্বাস্থ্য উপকারিতা
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: অ্যাপল সাইডারে প্রচুর পলিফেনল রয়েছে যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এই উপাদানগুলো ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে।
হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য: পলিফেনলযুক্ত খাবার হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং কার্ডিওভাস্কুলার স্বাস্থ্য উন্নত করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়: যদিও অ্যাপল সাইডারে খুব বেশি ফাইবার নেই, তবুও এতে থাকা পেকটিন পাচনতন্ত্রের জন্য উপকারী।
হাইড্রেশন: মূলত পানি দিয়ে গঠিত হওয়ায় এটি শরীরে পানির চাহিদা পূরণ করে।
আপেলের জুসের উপকারিতা
ভিটামিন সি এর উৎস: আপেলের জুস ভিটামিন সি এর চমৎকার উৎস, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
তাৎক্ষণিক শক্তি: উচ্চ কার্বোহাইড্রেট থাকায় এটি দ্রুত শক্তি প্রদান করে।
দীর্ঘস্থায়িত্ব: পাস্তুরিত হওয়ায় এটি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।
2024-এর এই ১৫ টি গ্যাজেট না কিনলে আপনি পিছিয়ে পড়বেন!
বিভিন্ন ধরনের সাইডার সম্পর্কে জানুন
হার্ড সাইডার কী?
হার্ড সাইডার হলো অ্যাপল সাইডারের অ্যালকোহলযুক্ত সংস্করণ। এটি তৈরি হয় যখন সাধারণ অ্যাপল সাইডারকে গাঁজন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় আপেলের প্রাকৃতিক চিনি অ্যালকোহলে রূপান্তরিত হয়। কিছু হার্ড সাইডারে ১২% পর্যন্ত অ্যালকোহল থাকতে পারে।
অ্যাপল সাইডার ভিনেগার
অনেকে অ্যাপল সাইডার শুনে ভুল করে অ্যাপল সাইডার ভিনেগার ভাবেন, কিন্তু এগুলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। অ্যাপল সাইডার ভিনেগার তৈরি হয় দুই দফা গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। প্রথমে অ্যাপল সাইডার থেকে হার্ড সাইডার তৈরি হয়, তারপর দ্বিতীয় গাঁজনে অ্যাসিটিক অ্যাসিড তৈরি হয়ে ভিনেগার হয়।
প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রভাব
পাস্তুরিত বনাম অপাস্তুরিত
পাস্তুরিত করার প্রক্রিয়ায় তরলটিকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গরম করে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলা হয়। আপেলের জুস সাধারণত পাস্তুরিত করা হয়, যেখানে অ্যাপল সাইডার অনেক সময় কাঁচা অবস্থায় বিক্রি হয়। অপাস্তুরিত সাইডার স্বাদে বেশি তাজা এবং প্রাকৃতিক হয়, কিন্তু সংরক্ষণের মেয়াদ কম থাকে।
ফিল্টারিং এর গুরুত্ব
ফিল্টারিং প্রক্রিয়ায় তরল থেকে সমস্ত কঠিন কণা সরিয়ে ফেলা হয়। আপেলের জুস সম্পূর্ণভাবে ফিল্টার করা হয় বলে এটি স্বচ্ছ দেখায়, যেখানে অ্যাপল সাইডার ফিল্টার না করায় ঘোলা থাকে। এই ঘোলাটে অংশেই থাকে অনেক পুষ্টিকর উপাদান।
কোনটি আপনার জন্য ভালো?
স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্য
যদি আপনি বেশি পুষ্টিগুণ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চান, তাহলে অ্যাপল সাইডার বেছে নিন। এতে পলিফেনল এবং অন্যান্য উপকারী উপাদান বেশি থাকে। তবে মনে রাখবেন, উভয়েই চিনি সমৃদ্ধ, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
সুবিধার জন্য
দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণ এবং সুবিধার জন্য আপেলের জুস ভালো। এটি পাস্তুরিত হওয়ায় দীর্ঘদিন ভালো থাকে এবং যেকোনো সময় পান করা যায়।
স্বাদের পছন্দ
অ্যাপল সাইডারের স্বাদ বেশি তীব্র এবং প্রাকৃতিক, যেখানে আপেলের জুস মিষ্টি এবং মৃদু স্বাদের। আপনার পছন্দ অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন।
সতর্কতা ও পরামর্শ
উভয় পানীয়ই প্রাকৃতিক চিনি সমৃদ্ধ, তাই মাত্রাতিরিক্ত সেবন এড়িয়ে চলুন। একদিনে এক গ্লাসের বেশি না খাওয়াই ভালো। গর্ভবতী মহিলা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন ব্যক্তিদের অপাস্তুরিত সাইডার এড়িয়ে চলা উচিত।
পানি দিয়ে মিশিয়ে পান করলে চিনির পরিমাণ কমানো যায় এবং হাইড্রেশনের উপকারিতা পাওয়া যায়।
অ্যাপল সাইডার এবং আপেলের জুসের মধ্যে পার্থক্য জানা থাকলে আপনি আপনার প্রয়োজন এবং স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে সঠিক পছন্দ করতে পারবেন। উভয়েরই নিজস্ব উপকারিতা রয়েছে, তবে অ্যাপল সাইডার পুষ্টিগুণের দিক থেকে একটু এগিয়ে। যাই বেছে নিন না কেন, পরিমিত সেবনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।