International Agency
১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭:০৪ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

আরাকান আর্মি: মায়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলে শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী

Arakan Army importance in Myanmar conflict: আরাকান আর্মি (Arakan Army) মায়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে সক্রিয় একটি শক্তিশালী জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠন রাখাইন জাতির জন্য স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লড়াই করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরাকান আর্মি দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি করেছে এবং রাখাইন রাজ্যের বেশিরভাগ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।আরাকান আর্মির উত্থান ও বিস্তার মায়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে। এই সংগঠন বর্তমানে মায়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তাদের সামরিক সাফল্য ও জনপ্রিয়তা দেশের পশ্চিমাঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন করছে।

আরাকান আর্মির উদ্ভব ও বিকাশ

আরাকান আর্মি ২০০৯ সালের ১০ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয়। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান নেতা হলেন মেজর জেনারেল টুয়ান মরাট নাইং। প্রথমদিকে মাত্র ২৬ জন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে আরাকান আর্মির সৈন্যসংখ্যা ৪০,০০০ এর বেশি বলে মনে করা হয়।সংগঠনটির মূল লক্ষ্য হলো রাখাইন জাতির জন্য স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করা। তারা “রাখিতা পথ” নামক একটি আদর্শের ভিত্তিতে লড়াই করছে, যা রাখাইন জাতির মুক্তি ও সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারের জন্য সংগ্রামকে বোঝায়।

পশ্চিমবঙ্গে রোহিঙ্গা মুসলমানদের আগমন: জনবিন্যাসের বিপর্যয়

আরাকান আর্মির গুরুত্ব

আরাকান আর্মি বর্তমানে মায়ানমারের সবচেয়ে শক্তিশালী জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি। নিম্নলিখিত কারণে তারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:

  1. সামরিক শক্তি: আরাকান আর্মির ৪০,০০০ এর বেশি প্রশিক্ষিত সৈন্য রয়েছে। এটি মায়ানমারের সবচেয়ে বড় জাতিগত সশস্ত্র বাহিনীগুলোর একটি।
  2. অঞ্চলগত নিয়ন্ত্রণ: সংগঠনটি রাখাইন রাজ্যের বেশিরভাগ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত তারা রাখাইন রাজ্যের ১১টি টাউনশিপ এবং চিন রাজ্যের ১টি টাউনশিপ দখল করেছে।
  3. জনপ্রিয়তা: আরাকান আর্মি রাখাইন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক জনসমর্থন পেয়েছে।
  4. রাজনৈতিক প্রভাব: তাদের সামরিক সাফল্য ও জনপ্রিয়তা মায়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে।
  5. কৌশলগত অবস্থান: রাখাইন রাজ্য বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চল। এই অঞ্চলে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে।

আরাকান আর্মির সাম্প্রতিক অগ্রগতি

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আরাকান আর্মি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সাফল্য অর্জন করেছে। তারা মাউংডাউ শহরে অবস্থিত মায়ানমার সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটি দখল করে নিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের সাথে মায়ানমারের ২৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের উপর আরাকান আর্মির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।এই সাফল্যের মাধ্যমে আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে তাদের আধিপত্য সুদৃঢ় করেছে। এটি তাদের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

আরাকান আর্মির যুদ্ধকৌশল

আরাকান আর্মি একটি সুপরিকল্পিত যুদ্ধকৌশল অনুসরণ করে আসছে। তারা ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়ে রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল দখল করছে। তাদের সাম্প্রতিক অভিযানগুলোকে চারটি ধাপে ভাগ করা যায়:

  1. প্রথম ধাপ: ২০২৩ সালের নভেম্বরে রাথেদাউং টাউনশিপে প্রথম সংঘর্ষ শুরু হয়।
  2. দ্বিতীয় ধাপ: ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে চিন রাজ্যের পালেটওয়া টাউনশিপ দখল।
  3. তৃতীয় ধাপ: ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে কালাদান ও লে মিও নদী উপত্যকায় অভিযান চালিয়ে কিয়াউকটো, মিনবিয়া, পাউকটো, মিয়েবন ও ম্রাউক-উ দখল।
  4. চতুর্থ ধাপ: ২০২৪ সালের মার্চে পোন্নাগিয়ুন ও রাথেদাউং দখল।

আরাকান আর্মির প্রভাব

আরাকান আর্মির উত্থান ও বিস্তার রাখাইন রাজ্য ও সামগ্রিক মায়ানমারের উপর গভীর প্রভাব ফেলছে:

  1. রাজনৈতিক পরিস্থিতি: আরাকান আর্মির শক্তি বৃদ্ধি মায়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করছে।
  2. মানবিক সংকট: যুদ্ধের ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ২০২৪ সালের মে মাসে শুধুমাত্র বুথিদাউং থেকে ৭০,০০০ মানুষ পালিয়েছে।
  3. জাতিগত সম্পর্ক: রাখাইন ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
  4. আঞ্চলিক নিরাপত্তা: বাংলাদেশের সাথে সীমান্তে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করছে।
  5. অর্থনৈতিক প্রভাব: যুদ্ধের কারণে রাখাইন রাজ্যের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর পদবী অনুযায়ী বেতন গ্রেড: জেনে নিন কত টাকা পাচ্ছেন আমাদের দেশের সৈনিকরা!

আরাকান আর্মি ও রোহিঙ্গা সংকট

আরাকান আর্মির উত্থান রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর নতুন হুমকি সৃষ্টি করেছে। যদিও আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের উপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে, কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলো তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছে।হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মে মাসে আরাকান আর্মি বুথিদাউং শহর ও আশপাশের গ্রামগুলোতে রোহিঙ্গা এলাকায় হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।অন্যদিকে, ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নে সান লুইন জানিয়েছেন, গত কয়েক মাসে আরাকান আর্মি ২,৫০০ এরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করেছে এবং কমপক্ষে ৩০০,০০০ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইউনুসের ‘নতুন’ বাংলাদেশে ধর্ষণের ঊর্ধ্বগতি: রাজপথে প্রতিবাদের ঝড় ছাত্রদের

ভারতে ইন্টারনেট বিপ্লবের নতুন দিগন্ত: স্টারলিঙ্কের সঙ্গে এয়ারটেলের ঐতিহাসিক চুক্তি

অস্ত্র আমদানির দৌড়ে শীর্ষে ইউক্রেন, ভারতের স্থান দ্বিতীয়: বিশ্বে কী বার্তা?

মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কে নজর! বঙ্গের সব আসনে লড়তে প্রস্তুত আইএমআইএম

হোলির রঙে ব্যাঙ্ক বন্ধ: আগামীকাল থেকে টানা ৪ দিন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাঙ্ক ছুটি, তালিকা দেখে নিন

কেকেআরের প্রস্তুতি শুরু: কলকাতায় নাইটদের ক্যাপ্টেন-কোচের সঙ্গে প্রকাশিত হল প্র্যাক্টিস সূচি

শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ির সামনে ‘ক্রিমিনাল’ পোস্টার: সিপিএম নেতার থানায় তলব!

কলকাতার Zakaria Street-এর মাস্ট ভিজিট ফুড স্টল: একটি খাদ্যপ্রেমীর স্বর্গভূমি

অলক্ষ্যে ঋত্বিক: ঋত্বিক ঘটকের জীবনালেখ্য নিয়ে আসছে বাঙালির প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র

আইপিএল-এ তামাকের বিজ্ঞাপন বন্ধ! স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কড়া নির্দেশ জারি!

১০

দেওয়ালের কোন দিকে কোন রঙ শুভ? বাস্তুশাস্ত্রের চোখে একটি গভীর দৃষ্টিপাত

১১

ডিএলএফ-এমআরএফ-আমূল-পেটিএম: সংক্ষিপ্ত নামেই ভারত বিখ্যাত, এবার জেনে নিন এই ব্র্যান্ডগুলোর পুরো নাম!

১২

সেক্সসমনিয়া: ঘুমের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক বিরল রহস্য

১৩

ভীষণ ক্ষতিকর Non-Stick প্যানে রান্না করছেন না তো? জেনে নিন সেরা বিকল্পগুলো

১৪

কাক ডাকার ফলাফল: ইসলাম ও হিন্দু শাস্ত্রে কী বলা আছে?

১৫

দিনে ৮ ঘণ্টা AC চালালে মাসে কত ‘Electric Bill’ আসবে? সহজ হিসেবে নিশ্চিন্তে থাকুন

১৬

প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কি বুদ্ধিমানের কাজ? একটি গভীর বিশ্লেষণ

১৭

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের জাদু: কীভাবে ভারত হয়ে উঠল অপ্রতিরোধ্য?

১৮

বাংলার প্রথম এসি লোকাল ট্রেন শিয়ালদা-কৃষ্ণনগর রুটে, ভাড়া কত জানেন?

১৯

ভারতে রাজ্যভিত্তিক হীরার মজুদ: কোন রাজ্য হীরা উৎপাদনে সেরা?

২০
close