Aries ruling planet: মেষ রাশির আরাধ্য দেবতা কে? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চান যারা জ্যোতিষশাস্ত্রে আগ্রহী বা নিজের রাশির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত হতে চান, তাদের জন্য এই লেখাটি। মেষ রাশির সঙ্গে জড়িত দেবতা হলেন ভগবান মঙ্গল বা কার্তিকেয়, যিনি শক্তি, সাহস এবং যুদ্ধের প্রতীক। এই লেখায় আমরা জানবো, কেন তিনি মেষ রাশির অধিপতি হিসেবে বিবেচিত হন এবং এর পেছনের তাৎপর্য কী। আপনি যদি জ্যোতিষ বা হিন্দু পুরাণে আগ্রহী হন, তাহলে এই ব্লগটি আপনাকে বিষয়টি সহজে বুঝতে সাহায্য করবে।
মেষ রাশি হল জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রথম রাশি, যা ২১ মার্চ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত বিস্তৃত। এই রাশির ব্যক্তিরা সাধারণত সাহসী, উদ্যমী এবং নেতৃত্বের গুণসম্পন্ন হয়ে থাকেন। এই গুণগুলোর পেছনে রয়েছে মঙ্গল গ্রহের প্রভাব, যিনি মেষ রাশির অধিপতি। আর এই মঙ্গল গ্রহের দেবতা হিসেবে পূজিত হন ভগবান মঙ্গল বা কার্তিকেয়। হিন্দু পুরাণে তিনি যুদ্ধের দেবতা এবং শক্তির প্রতীক হিসেবে পরিচিত। তাঁর এই গুণাবলী মেষ রাশির বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়, যা তাঁকে এই রাশির আরাধ্য করে তুলেছে।
মঙ্গল দেবতা বা কার্তিকেয় হলেন ভগবান শিব এবং দেবী পার্বতীর পুত্র। তিনি ছয় মুখবিশিষ্ট দেবতা হিসেবেও পরিচিত, যাঁকে ‘ষড়ানন’ বা ‘স্কন্দ’ নামেও ডাকা হয়। পুরাণ অনুসারে, তিনি অসুরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং তাঁর অসীম শক্তি ও সাহসের জন্য বিখ্যাত। মেষ রাশির মানুষের মধ্যে যে আগ্রাসী মনোভাব, সাহসিকতা এবং লড়াইয়ের মনোভাব দেখা যায়, তা মঙ্গল দেবতার প্রভাব থেকেই আসে। তিনি লাল রঙের প্রতীক, যা আবার মঙ্গল গ্রহের সঙ্গেও সম্পর্কিত।
মেষ রাশির জন্য মঙ্গল দেবতা গুরুত্বপূর্ণ কারণ তিনি এই রাশির শাসক গ্রহ মঙ্গলের দেবতা। জ্যোতিষশাস্ত্রে প্রতিটি রাশির একটি অধিপতি গ্রহ থাকে, আর সেই গ্রহের সঙ্গে যুক্ত থাকে একজন দেবতা। মঙ্গল গ্রহ শক্তি, উৎসাহ এবং সংগ্রামের প্রতীক। এই গ্রহের প্রভাবে মেষ রাশির মানুষ নতুন কিছু শুরু করতে ভালোবাসে এবং চ্যালেঞ্জ গ্রহণে পিছপা হয় না। মঙ্গল দেবতার পূজা এই রাশির জাতকদের জীবনে শান্তি, সাহস এবং সফলতা আনতে সাহায্য করে।
মেষ রাশির জাতকরা যখন মঙ্গল দেবতার পূজা করেন, তখন তাঁদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে বলে বিশ্বাস করা হয়। হিন্দু ঐতিহ্যে মঙ্গলবারকে মঙ্গল দেবতার দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। এই দিনে অনেকে মঙ্গলের মন্দিরে গিয়ে পূজা দেন বা লাল ফুল, লাল চন্দন এবং মিষ্টি নিবেদন করেন। এছাড়া, ‘মঙ্গল চণ্ডী পাঠ’ বা ‘হনুমান চালিসা’ পড়ারও প্রচলন রয়েছে, কারণ হনুমানজীও মঙ্গল গ্রহের সঙ্গে যুক্ত।
মঙ্গল দেবতার পূজা করতে হলে সকালে উঠে স্নান করে লাল বস্ত্র পরা শ্রেয়। তারপর মঙ্গলের মূর্তি বা ছবির সামনে লাল ফুল, সিঁদুর এবং ধূপ জ্বালিয়ে প্রণাম করতে হয়। অনেকে ‘ওঁ ক্রাং ক্রীং ক্রৌং সঃ মঙ্গলায় নমঃ’ এই মন্ত্র জপ করেন। এই পূজা মেষ রাশির জাতকদের মানসিক শান্তি এবং শারীরিক শক্তি বাড়ায়। জ্যোতিষীরা বলেন, মঙ্গল গ্রহ যদি কারও কুণ্ডলীতে দুর্বল থাকে, তবে এই পূজা তাদের জীবনে ভারসাম্য আনে।
মেষ রাশির মানুষ স্বাভাবিকভাবেই নেতৃত্বপ্রিয় এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পছন্দ করেন। এই গুণগুলো মঙ্গল গ্রহের শক্তি থেকে আসে। উদাহরণস্বরূপ, যুদ্ধের দেবতা কার্তিকেয় যেমন দ্রুত অসুরদের পরাজিত করেছিলেন, তেমনি মেষ রাশির জাতকরাও জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেন। তবে মঙ্গলের অতিরিক্ত প্রভাবে কখনো কখনো তাঁরা রাগী বা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে পারেন। তাই মঙ্গল দেবতার পূজা তাঁদের এই দিকগুলো নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
জ্যোতিষশাস্ত্রে মঙ্গল গ্রহকে ‘মার্স’ (Mars) বলা হয়, যিনি শক্তি ও সংগ্রামের প্রতীক। এই গ্রহ মেষ এবং বৃশ্চিক রাশির অধিপতি। তবে মেষ রাশির সঙ্গে এর সম্পর্ক অনেক বেশি গভীর, কারণ এটি জ্যোতিষ চক্রের প্রথম রাশি এবং নতুন শুরুর প্রতীক। মঙ্গল গ্রহের লাল রঙ, উত্তেজনা এবং শক্তি মেষ রাশির স্বভাবের সঙ্গে পুরোপুরি মেলে।
কুণ্ডলীতে মঙ্গল গ্রহ যদি শক্তিশালী অবস্থানে থাকে, তবে ব্যক্তি সাহসী, উদ্যমী এবং সফল হয়। কিন্তু দুর্বল মঙ্গল রাগ, দ্বন্দ্ব বা শারীরিক সমস্যা আনতে পারে। মেষ রাশির জাতকদের জন্য মঙ্গলের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাঁদের জীবনের দিকনির্দেশনা দেয়। জ্যোতিষীরা প্রায়ই পরামর্শ দেন যে, মঙ্গল দুর্বল হলে লাল মূলা বা তামার গয়না ধারণ করা উচিত।
হিন্দু পুরাণে মঙ্গল বা কার্তিকেয়ের জন্ম নিয়ে একটি আকর্ষণীয় কাহিনী রয়েছে। তিনি শিব ও পার্বতীর পুত্র হলেও তাঁর জন্ম হয়েছিল গঙ্গা নদীতে ছয়টি তারার শক্তি থেকে। এই কারণে তাঁকে ছয় মুখবিশিষ্ট দেবতা বলা হয়। তিনি তারকাসুর নামক অসুরকে পরাজিত করেছিলেন, যা তাঁর সাহস ও শক্তির প্রমাণ। এই গল্প মেষ রাশির জাতকদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।
মেষ রাশির মানুষের জন্য মঙ্গল দেবতা শুধু আরাধ্য নন, তিনি তাঁদের জীবনের পথপ্রদর্শকও। তাঁদের সাহস ও উদ্যম বজায় রাখতে এবং জীবনে ভারসাম্য আনতে মঙ্গলের পূজা অত্যন্ত উপকারী।
মেষ রাশির জাতকরা মঙ্গলের শক্তি ব্যবহার করতে পারেন নিয়মিত মন্ত্র জপ করে বা মঙ্গলবারে দান করে। লাল বস্তু, যেমন লাল কাপড় বা ফল, দান করলে মঙ্গলের প্রভাব বাড়ে। এছাড়া, ধ্যান ও শারীরিক ব্যায়ামও তাঁদের শক্তি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
মঙ্গলের প্রভাবে মেষ রাশির মানুষ কখনো কখনো অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তাই তাঁদের জন্য ধৈর্য ধরা এবং শান্ত থাকা শেখা জরুরি। মঙ্গল দেবতার পূজা এই ভারসাম্য আনতে সহায়ক।
মেষ রাশির আরাধ্য দেবতা মঙ্গল বা কার্তিকেয় শুধু একজন দেবতা নন, তিনি এই রাশির জাতকদের জীবনের শক্তি ও সাহসের উৎস। তাঁর পূজা ও বিশ্বাস মেষ রাশির মানুষকে জীবনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। এই ব্লগে আমরা দেখলাম, কীভাবে মঙ্গল দেবতা মেষ রাশির সঙ্গে যুক্ত এবং তাঁর প্রভাব জীবনে কীভাবে কাজ করে। আশা করি, এই লেখাটি আপনার জন্য তথ্যবহুল ও আকর্ষণীয় হয়েছে।