Artist Society of Bengal Mourned the Death of Buddhadev Bhattacharya: বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ৮ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সমগ্র বাংলায়, বিশেষ করে শিল্পী মহলে। বুদ্ধবাবুর প্রয়াণে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র, অভিনেতা অনীক দত্তের গলা ধরে এসেছে, আর পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়সহ অন্যান্য শিল্পীরা বলেছেন, “আমরা বুদ্ধবাবুর যোগ্য নই”।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য দীর্ঘদিন ধরে COPD (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ) রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এই রোগের কারণে তাঁর ফুসফুস ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং তিনি প্রায়শই শ্বাসকষ্টে ভুগতেন। শেষের দিকে তিনি প্রায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন এবং দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে ফেলেছিলেন। তাঁর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য এবং সহকারীরা তাঁকে খাওয়াতেন এবং দেখাশোনা করতেন।
শব্দের জাদুকর: নবারুণ ভট্টাচার্যের কবিতায় বাঙালি জীবনের প্রতিচ্ছবি
বুদ্ধবাবু তাঁর কলকাতার পাম অ্যাভিনিউয়ের বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল ৮০ বছর। তিনি ১৯৪৪ সালের ১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
শিল্পী সমাজের প্রতিক্রিয়া
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে বাংলার শিল্পী সমাজ গভীর শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছে। বিশিষ্ট অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তিনি বুদ্ধবাবুর সঙ্গে তাঁর স্মৃতিচারণ করেছেন এবং তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
অভিনেতা অনীক দত্তের গলা ধরে এসেছে এই দুঃসংবাদ শুনে। তিনি বুদ্ধবাবুর সঙ্গে তাঁর কিছু ব্যক্তিগত মুহূর্তের কথা স্মরণ করেছেন এবং নিজেকে “ক্ষমাপ্রার্থী” বলে উল্লেখ করেছেন।
পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় এবং অন্যান্য শিল্পীরা একটি অত্যন্ত বিনয়ী মন্তব্য করেছেন। তাঁরা বলেছেন, “আমরা বুদ্ধবাবুর যোগ্য নই”। এই মন্তব্য থেকে বোঝা যায় যে বুদ্ধবাবুর প্রতি তাঁদের কতটা শ্রদ্ধা ও সম্মান ছিল।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জীবন ও কর্ম
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছিলেন একজন প্রখ্যাত ভারতীয় কমিউনিস্ট রাজনীতিবিদ এবং ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) এর পলিটব্যুরোর প্রাক্তন সদস্য। তিনি ২০০০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের ৭ম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বুদ্ধবাবু উত্তর কলকাতায় একটি বাঙালি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতামহ কৃষ্ণচন্দ্র স্মৃতিতীর্থ ছিলেন একজন বিশিষ্ট সংস্কৃত পণ্ডিত, পুরোহিত এবং লেখক।
বামপন্থার পুনরুত্থান: বাংলার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে জনমত
তিনি মীরা ভট্টাচার্যকে বিয়ে করেন এবং তাঁদের একটি মেয়ে রয়েছে, যার নাম সুচেতনা ভট্টাচার্য। বুদ্ধবাবু তাঁর সাদাসিধে জীবনযাপনের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কলকাতার বালিগঞ্জে একটি দুই কক্ষের বাসায় বসবাস করতেন এবং মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনও সেই একই বাসভবন থেকে কাজ করতেন।
বুদ্ধবাবুর প্রতি শিল্পীদের শ্রদ্ধা
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য শুধু একজন রাজনীতিবিদই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রেমিক ব্যক্তিত্ব। তাঁর এই দিকটি বাংলার শিল্পী সমাজকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। সিপিআইএমের যুবনেতা শতরূপ ঘোষ জানিয়েছেন যে, বুদ্ধবাবু যখনই কোনো শিল্পীর সঙ্গে দেখা করতেন, তখন তিনি সিনেমা ও গান নিয়ে প্রশ্ন করতেন। এটি প্রমাণ করে যে তিনি শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি কতটা আগ্রহী ছিলেন।
শিল্পীদের প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায় যে বুদ্ধবাবু তাঁদের কাছে শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁর জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা এবং সাংস্কৃতিক চেতনা শিল্পীদের গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।
সম্ভাব্য প্রভাব
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যু শুধু রাজনৈতিক মহলেই নয়, সাংস্কৃতিক জগতেও এক বড় শূন্যতার সৃষ্টি করেছে। তাঁর প্রয়াণে বাংলার শিল্প ও সংস্কৃতি জগৎ একজন বড় পৃষ্ঠপোষক হারাল। এর ফলে আগামী দিনে শিল্প ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।
বুদ্ধবাবুর মৃত্যু বাংলার রাজনীতিতেও একটি যুগের অবসান ঘটাল। তাঁর নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গে যে শিল্পায়ন ও আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হতে পারে।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে বাংলার শিল্পী সমাজ গভীর শোকাহত। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র কান্নায় ভেঙে পড়েছেন, অভিনেতা অনীক দত্তের গলা ধরে এসেছে, আর পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়সহ অন্যান্য শিল্পীরা নিজেদের বুদ্ধবাবুর যোগ্য নয় বলে মনে করছেন। এই প্রতিক্রিয়াগুলি প্রমাণ করে যে বুদ্ধবাবু শুধু একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাংলার সাংস্কৃতিক জগতের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তাঁর মৃত্যুতে বাংলার রাজনীতি ও সংস্কৃতি জগতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হল, তা পূরণ করা সহজ হবে না।