এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার কাছে বাংলাদেশের অসহায় আত্মসমর্পণ, সুপার ফোরের স্বপ্ন এখন সুতোয় ঝুলছে

আবুধাবি, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫: এশিয়া কাপের মঞ্চে আরও একবার শ্রীলঙ্কার কাছে নতজানু হলো বাংলাদেশ। ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং – তিন বিভাগেই ব্যর্থতার চূড়ান্ত নিদর্শন দেখিয়ে লিটন দাসের দল পরাজিত হলো…

Ani Roy

 

আবুধাবি, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫: এশিয়া কাপের মঞ্চে আরও একবার শ্রীলঙ্কার কাছে নতজানু হলো বাংলাদেশ। ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং – তিন বিভাগেই ব্যর্থতার চূড়ান্ত নিদর্শন দেখিয়ে লিটন দাসের দল পরাজিত হলো ৬ উইকেটের বড় ব্যবধানে। আবুধাবির শেখ জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে বাংলাদেশের দেওয়া ১৩৯ রানের লক্ষ্যমাত্রা লঙ্কানরা টপকে যায় ৩২ বল বাকি থাকতেই। এই শোচনীয় পরাজয়ের ফলে বাংলাদেশের সুপার ফোরে ওঠার পথ অত্যন্ত কঠিন হয়ে গেল।

ব্যাটিং বিপর্যয়ে শুরু, শেষটাও অনুজ্জ্বল

এদিন টসে জিতে বাংলাদেশকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠান শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা। শুরুতেই তার সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করেন লঙ্কান পেসাররা। ম্যাচের প্রথম দুই ওভারেই নুয়ান থুশারা এবং দুষ্মন্ত চামিরার আগুনে বোলিংয়ে বাংলাদেশের দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম এবং পারভেজ হোসেন ইমন রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন। স্কোরবোর্ডে কোনো রান না তুলে দুই উইকেট হারিয়ে শুরুতেই খাদের কিনারায় চলে যায় বাংলাদেশ।

এরপর অধিনায়ক লিটন দাস এবং তৌহিদ হৃদয় মিলে বিপর্যয় সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ২৬ বলে ২৮ রান করে হাসারাঙ্গার শিকার হন লিটন। ৮ রান করে রান আউট হন হৃদয়। দলীয় মাত্র ৫৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন ধুঁকছে।

এই কঠিন মুহূর্তে দলের হাল ধরেন তরুণ দুই ব্যাটসম্যান জাকের আলি অনিক এবং শামিম হোসেন পাটোয়ারী। তাদের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ সম্মানজনক একটি স্কোরে পৌঁছায়। এই জুটি অবিচ্ছিন্ন থেকে ৮৬ রান যোগ করে। জাকের আলি ৩৪ বলে ৪১ এবং শামিম হোসেন ৩৪ বলে ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে বাংলাদেশ ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩৯ রান সংগ্রহ করে।

শ্রীলঙ্কার সহজ জয়

১৪০ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শ্রীলঙ্কাও শুরুতে কুশল মেন্ডিসের উইকেট হারায়। তবে পাথুম নিশাঙ্কা এবং কামিল মিশারার ৯৫ রানের অনবদ্য জুটি শ্রীলঙ্কার জয় নিশ্চিত করে দেয়। নিশাঙ্কা মাত্র ৩৪ বলে ৫০ রানের এক ঝড়ো ইনিংস খেলেন। কামিল মিশারাও দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

বাংলাদেশের বোলাররা এদিন ছিলেন একেবারেই নিষ্প্রভ। ফিল্ডিংয়েও ছিল একাধিক ভুলত্রুটি। যার সুযোগ নিয়ে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা সহজেই রান তুলে নেয়। শেষদিকে মেহেদী হাসান দুটি উইকেট পেলেও তা পরাজয়ের ব্যবধান কমানো ছাড়া আর কোনো কাজে আসেনি।

পরিসংখ্যানের আয়নায় ম্যাচ

  • বাংলাদেশ: ১৩৯/৫ (২০ ওভার)
    • শামিম হোসেন: ৪২* (৩৪)
    • জাকের আলি: ৪১* (৩৪)
    • লিটন দাস: ২৮ (২৬)
    • ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা: ২/১৯
  • শ্রীলঙ্কা: ১৪০/৪ (১৪.৪ ওভার)
    • পাথুম নিশাঙ্কা: ৫০ (৩৪)
    • কামিল মিশারা: অপরাজিত
    • মেহেদী হাসান: ২/২৯

সুপার ফোরের জটিল সমীকরণ

এই পরাজয়ের ফলে বাংলাদেশের নেট রান রেট (-১.৫০) অনেকটাই কমে গেছে। গ্রুপ ‘বি’-তে বাংলাদেশ এখন তৃতীয় স্থানে রয়েছে। সুপার ফোরে যেতে হলে বাংলাদেশকে তাদের শেষ ম্যাচে হংকং-এর বিরুদ্ধে শুধু জিতলেই হবে না, জিততে হবে বিশাল ব্যবধানে। একই সাথে তাকিয়ে থাকতে হবে শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তানের ম্যাচের দিকে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের এমন পারফরম্যান্সের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, দলের ব্যাটিং লাইনআপের গভীরতা এবং পাওয়ারপ্লে-তে আগ্রাসী মানসিকতার অভাব স্পষ্ট। বোলাররাও সঠিক সময়ে উইকেট নিতে ব্যর্থ। ফিল্ডিংয়ের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

অধিনায়ক লিটন দাস ম্যাচ শেষে ব্যাটিং ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, “পাওয়ারপ্লে-তে আমরা যেভাবে উইকেট হারিয়েছি, সেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন ছিল। ১৭০-১৮০ রান করতে পারলে ম্যাচের ফল অন্যরকম হতে পারতো।”

অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা তার বোলারদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তিনি বলেন, “প্রথম দুই ওভারে দুই উইকেট তুলে নেওয়াই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।”

এশিয়া কাপের মতো বড় মঞ্চে টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশকে তাদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আগামী ম্যাচে হংকং-এর বিরুদ্ধে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিয়েই সুপার ফোরের আশা বাঁচিয়ে রাখতে হবে টাইগারদের। তবে পথটা যে অত্যন্ত কঠিন, তা শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এই পরাজয়ই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

 

About Author
Ani Roy

অনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এডুকেশনে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। শিক্ষার প্রতি গভীর অনুরাগ এবং আজীবন শেখার প্রতি প্রতিশ্রুতি নিয়ে অনি নতুন শিক্ষামূলক পদ্ধতি ও প্র্যাকটিসগুলি অন্বেষণ করতে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তার একাডেমিক যাত্রা তাকে শিক্ষার তত্ত্ব এবং ব্যবহারিক শিক্ষণ কৌশলগুলিতে দৃঢ় ভিত্তি প্রদান করেছে। অনি অন্তর্দৃষ্টি এবং দক্ষতা তার চিন্তাশীল লেখাগুলিতে প্রতিফলিত হয়, যা শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত ও তথ্যপূর্ণ করার উদ্দেশ্যে লেখা। তিনি তার আকর্ষণীয় এবং প্রভাবশালী কাজের মাধ্যমে শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান রাখতে থাকেন।