জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে অবস্থিত এশিয়ার বৃহত্তম টিউলিপ উদ্যান গত ২৬ মার্চ পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। বিখ্যাত ডাল লেকের পাশে জাবারওয়ান পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত এই উদ্যানে ১.৭ মিলিয়ন টিউলিপ ফুলের সমারোহ দেখা যাবে। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এই উদ্যানের উদ্বোধন করেন, যা কাশ্মীর উপত্যকায় পর্যটন মৌসুমের শুরু হিসেবে চিহ্নিত করে।
ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল টিউলিপ গার্ডেন নামে পরিচিত এই উদ্যানটি ৩০ হেক্টর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত, যেখানে ৭৪টি বিভিন্ন প্রজাতির টিউলিপ ফুল রয়েছে। এর মধ্যে দুটি নতুন প্রজাতির টিউলিপও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা বিশেষভাবে নেদারল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয়েছে। এই বছর উদ্যানটিতে মোট ফুলের সংখ্যা পৌঁছেছে ১.৭ মিলিয়নে, যা গত বছরের তুলনায় বেশি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেন, “টিউলিপ শো কাশ্মীরের বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের উদযাপন এবং বিশ্বব্যাপী প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য একটি মূল আকর্ষণ।” তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের কথা তুলে ধরেন এবং পর্যটকদের এই অনবদ্য জায়গা দেখতে আমন্ত্রণ জানান।
পর্যটকদের সাথে কথোপকথনে মুখ্যমন্ত্রী তাদের “পৃথিবীর স্বর্গ” হিসেবে পরিচিত কাশ্মীরে স্বাগত জানান এবং তাদের নিজ দেশে ফিরে গিয়ে টিউলিপ উদ্যানের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে উৎসাহিত করেন। পরে একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তিনি লেখেন, “এক দশকের বেশি সময় পরে আমি আবার শ্রীনগরের টিউলিপ গার্ডেনে ফিরে এসেছি এটি আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করতে। আগামী কয়েক সপ্তাহে হাজার হাজার মানুষ এশিয়ার বৃহত্তম টিউলিপ উদ্যান দেখতে আসবেন এবং এর রঙিন সৌন্দর্য উপভোগ করবেন”।
টিউলিপ উদ্যানটি প্রথম ২০০৭ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদের উদ্যোগে খোলা হয়েছিল। তখন নেদারল্যান্ড থেকে আমদানি করা মাত্র ৫০,০০০ টিউলিপ বাল্ব দিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে এটি একটি প্রধান পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে গড়ে উঠেছে। উদ্যানটি পূর্বে সিরাজ বাগ নামে পরিচিত ছিল এবং পরবর্তীতে ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল টিউলিপ গার্ডেন নামকরণ করা হয।
টিউলিপের পাশাপাশি উদ্যানে ড্যাফোডিল, হায়াসিন্থ, মাস্কারি এবং সাইক্লামেন সহ অন্যান্য বসন্তকালীন ফুলও রয়েছে। ফুলগুলি পর্যায়ক্রমে রোপণ করা হয়েছে যাতে সেগুলি একমাস বা তার বেশি সময় ধরে ফুটতে থাকে। তবে সাধারণত টিউলিপ ফুলগুলি মাত্র ২০ দিন ফুটে থাকে। ফুলের জীবন আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে ২০ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত হতে পারে। এই ফুলগুলি তাপমাত্রা সংবেদনশীল এবং ১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভালোভাবে বেঁচে থাকে।
গত বছর এই উদ্যান প্রায় ৪.৬৫ লক্ষ পর্যটক আকর্ষণ করেছিল এবং এবছরও প্রচুর সংখ্যক পর্যটক আসার আশা করা হচ্ছে। উদ্বোধনী দিনেই প্রায় ১২,০০০ থেকে ১৩,০০০ পর্যটক উদ্যান দেখতে এসেছিলেন। পর্যটকদের জন্য প্রবেশ মূল্য ভারতীয় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৭৫ টাকা, ৫-১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ৩০ টাকা এবং বিদেশি পর্যটকদের জন্য ২০০ টাকা।
দিল্লি থেকে আসা পর্যটক সীমা বলেন, “এখানে থাকতে খুব ভালো লাগছে। এটা একটি মনমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা। আমরা প্রথমবার শ্রীনগরে এসেছি এবং এখানে টিউলিপ ফুল দেখতে পেয়ে খুব ভালো লাগছে।” মুম্বাই থেকে আসা সুরমিল নামক এক পর্যটক উদ্যানের প্রেমে পড়ে গেছেন, তিনি বলেন, “আমি এই জায়গাটি পছন্দ করি। এত টিউলিপ এখানে, রঙিন। এটা একটি আশ্চর্যজনক অভিজ্ঞতা। পরিবেশ খুব ভালো। মুম্বাইয়ের তুলনায় এখানে আবহাওয়া ঠান্ডা”।
দুবাই থেকে আসা রমন, যিনি তার মেয়ে স্নেহালের সাথে উদ্যান দেখতে এসেছেন, বলেন, “আমি সবসময় শুনেছি যে কাশ্মীর পৃথিবীর স্বর্গ, এবং প্রথম দিনেই এই উদ্যান দেখে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। আমার বাবা-মা সবসময় কাশ্মীরকে স্বর্গ বলতেন, এবং এখন, এই রঙিন টিউলিপ দেখে, আমি বুঝতে পারছি কেন”।
কৃষিমন্ত্রী জাভেদ দার বলেন, “এটা একটি ভালো শুরু, এবং আমরা আশা করছি পর্যটন মৌসুম এই ফুলগুলোর মতোই ফুলে ফেঁপে উঠবে। মানুষ বড় সংখ্যায় আসছে, কেউ কেউ এই দৃশ্য দেখার জন্য বুলেভার্ড রোড থেকে হেঁটেও আসছে”।
২০২৩ সালে টিউলিপ গার্ডেন ওয়ার্ল্ড বুক অফ রেকর্ডস (লন্ডন) এ এশিয়ার বৃহত্তম হিসাবে স্থান পেয়েছে। উদ্যানের দায়িত্বে থাকা ফ্লোরিকালচার বিভাগের আসিফ ইয়াতু উদ্যানের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে বলেন, “প্রতিক্রিয়া চমৎকার ছিল। বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রায় ১২,০০০ থেকে ১৩,০০০ মানুষ উদ্যান পরিদর্শন করেছেন”।
টিউলিপ উদ্যান সাধারণত মার্চ মাসের শেষ দিকে খোলা হয় এবং টিউলিপগুলি শুকিয়ে যাওয়া শুরু না হওয়া পর্যন্ত প্রায় চার সপ্তাহ ধরে খোলা থাকে। পর্যটকরা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত উদ্যান পরিদর্শন করতে পারেন। ১.৭৫ মিলিয়ন টিউলিপ বাল্ব পূর্ণ প্রস্ফুটিত অবস্থায় থাকলে উদ্যানটি সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর দর্শন হয়ে ওঠে।
এই বছর উদ্যানে নতুন কালার স্কিম প্রবর্তন করা হয়েছে এবং টিউলিপ ও অন্যান্য ফুলের প্রজাতির সংখ্যা বাড়িয়ে ৭৪ করা হয়েছে। পর্যটকদের আরো আকর্ষণ করার জন্য উদ্যানে নতুন টেরেস, জলপথ, এবং ফোয়ারা যোগ করা হয়েছে। এবং পর্যটন বিভাগের মতে, এবারের পর্যটন মৌসুমে একটি বাদাম ফুলের উৎসব এবং চেরি ব্লসম উৎসবও আয়োজন করা হবে।