এশিয়ার সর্ববৃহৎ টিউলিপ উদ্যান: শ্রীনগরের রঙিন সৌন্দর্য ২৬ মার্চ থেকে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে

জম্মু ও কাশ্মীরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরে অবস্থিত এশিয়ার সর্ববৃহৎ টিউলিপ উদ্যান, ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল টিউলিপ গার্ডেন, আগামী ২৬ মার্চ থেকে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে কাশ্মীর উপত্যকা পর্যটন…

Srijita Chattopadhay

 

জম্মু ও কাশ্মীরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরে অবস্থিত এশিয়ার সর্ববৃহৎ টিউলিপ উদ্যান, ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল টিউলিপ গার্ডেন, আগামী ২৬ মার্চ থেকে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে কাশ্মীর উপত্যকা পর্যটন বিভাগ। জাবারওয়ান পাহাড়ের পাদদেশে বিস্তৃত এই বিখ্যাত বাগানটি প্রতি বছর লক্ষাধিক দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করে এবং কাশ্মীরের বসন্তকালীন পর্যটন মৌসুমের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হয়।

প্রায় ৩০ হেক্টর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই মনোমুগ্ধকর টিউলিপ উদ্যানে এবার ১৫ লক্ষেরও বেশি টিউলিপ ফুটবে, যা সাতটি ভিন্ন টেরেসে বিন্যস্ত করা হয়েছে। অত্যন্ত যত্ন সহকারে লাগানো এই টিউলিপগুলি ৬৮টি ভিন্ন প্রজাতির এবং সাদা, হলুদ, লাল, গোলাপি, বেগুনি, কমলা সহ নানান রঙের। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে টিউলিপগুলি প্রায় একমাস ধরে ফুটে থাকবে।

২০০৭ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদের উদ্যোগে এই বাগানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে মাত্র ৭টি প্রজাতির টিউলিপ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও, আজ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮ প্রজাতিতে। বাগানটি ডাল লেকের তীরে জাবারওয়ান পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত, যা দর্শনার্থীদের একই সাথে টিউলিপের সৌন্দর্য এবং কাশ্মীরের অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ দেয়।

জম্মু-কাশ্মীর পর্যটন বিভাগের আধিকারিকদের মতে, বাগানে টিউলিপের পাশাপাশি হায়াসিন্থ, নার্সিসাস, রেনানকুলাস, ড্যাফোডিলস, আইরিস ও অন্যান্য রঙিন ফুলেরও দেখা মিলবে। আধিকারিকদের মতে, এবার অতিরিক্ত আকর্ষণ হিসেবে বাগানে একটি ওয়াটার লিলি সেকশন এবং একটি মেডিসিনাল গার্ডেন যুক্ত করা হয়েছে।

গত বছর এই টিউলিপ উদ্যান পরিদর্শন করেছিলেন ৪.৬৫ লক্ষ দর্শনার্থী, যা ছিল একটি রেকর্ড। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এবার সেই সংখ্যা আরও বাড়বে। দর্শনার্থীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে গার্ডেনের ভিতরে পার্কিং ব্যবস্থা, বিশ্রামাগার, ফুড কোর্ট এবং সুভেনির শপের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পর্যটন বিভাগের একজন আধিকারিক জানিয়েছেন, “বাগানটি সাধারণত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। প্রবেশ মূল্য ভারতীয় নাগরিকদের জন্য প্রাপ্তবয়স্ক ৭০ টাকা এবং শিশুদের জন্য ২৫ টাকা, অন্যদিকে বিদেশি পর্যটকদের জন্য ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে”।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর কাশ্মীর পর্যটন বিভাগ টিউলিপ গার্ডেনের উদ্বোধনের সময় ‘টিউলিপ ফেস্টিভাল’ আয়োজন করে। এই উৎসবে কাশ্মীরি লোকনৃত্য, সংগীত অনুষ্ঠান, হস্তশিল্প প্রদর্শনী এবং ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্টল থাকে, যা পর্যটকদের কাশ্মীরি সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়।

কাশ্মীরের সৌন্দর্য বর্ণনা করে এক পর্যটন ব্যবসায়ী বলেন, “যখন ডাল লেক, নিষাত বাগ, শালিমার বাগ এবং অন্যান্য মুঘল গার্ডেনগুলি সবুজে ভরে যায়, তখন টিউলিপ গার্ডেনের রঙিন সৌন্দর্য উপত্যকার সৌন্দর্যে অতুলনীয় মাত্রা যোগ করে। এই সময়ে কাশ্মীর দেখার অভিজ্ঞতা অবর্ণনীয়”।

বাগানের তত্ত্বাবধায়ক ইফতিখার মাটু জানিয়েছেন, “এবার আমরা আরও বেশি পর্যটকের আগমন আশা করছি। কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে পর্যটন খাত উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমরা দর্শনার্থীদের জন্য আরও ভাল পরিষেবা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত”।

জম্মু ও কাশ্মীরের অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্পের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টিউলিপ গার্ডেনের মতো আকর্ষণীয় স্থানগুলি শুধু পর্যটকদের আকৃষ্ট করে না, বরং স্থানীয় অর্থনৈতিক বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। টিউলিপ গার্ডেন থেকে শুরু করে গুলমার্গের তুষারাবৃত পাহাড় পর্যন্ত, কাশ্মীর প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটককে স্বাগত জানায়।

আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে জানা গেছে, এই সময়ে শ্রীনগরে আবহাওয়া সাধারণত অনুকূল থাকে, যা টিউলিপের প্রস্ফুটনের জন্য আদর্শ। দিনের গড় তাপমাত্রা ১৫-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, যা উদ্যান ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত।

সহজেই আসতে চাইলে, পর্যটকরা শ্রীনগর বিমানবন্দরে নেমে সরাসরি ট্যাক্সি বা অন্য গাড়িতে টিউলিপ গার্ডেনে পৌঁছাতে পারেন, যা বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কাশ্মীর ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন এমন পর্যটকদের জন্য মার্চ-এপ্রিল মাস সবচেয়ে উপযুক্ত সময়, যখন প্রকৃতি নতুন রূপে সেজে ওঠে এবং টিউলিপের রঙিন সমারোহ উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া যায়।

About Author
Srijita Chattopadhay

সৃজিতা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক। তিনি একজন প্রতিশ্রুতিশীল লেখক এবং সাংবাদিক, যিনি তার লেখা দ্বারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধি তুলে ধরতে সদা উদ্যমী। সৃজিতার লেখার ধারা মূলত সাহিত্য, সমাজ এবং সংস্কৃতির বিভিন্ন দিককে ঘিরে আবর্তিত হয়, যেখানে তিনি তার গভীর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও বিশ্লেষণী দক্ষতার পরিচয় দেন। তাঁর নিবন্ধ ও প্রতিবেদনগুলি পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, যা তার বস্তুনিষ্ঠতা ও সংবেদনশীলতার পরিচয় বহন করে। সৃজিতা তার কর্মজীবনে ক্রমাগত নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে বদ্ধপরিকর, যা তাকে বাংলা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।