Assam Floods: অসমের বন্যা পরিস্থিতি প্রতি বছরই ভয়াবহ আকার ধারণ করে। কিন্তু ২০২৪ সালে এই বন্যা যেন সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছে। ব্রহ্মপুত্র নদীর জলস্তর বিপদসীমার উপরে উঠে আসার ফলে কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের ৭০ শতাংশ এলাকা জলের তলায় চলে গেছে। এই বিপর্যয়ের ফলে উদ্যানের ১২৯টি বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়েছে।
কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের পরিচিতি:
কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান ভারতের আসাম রাজ্যের গোলাঘাট ও নগাঁও জেলায় অবস্থিত একটি বিখ্যাত উদ্যান। এটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত। কাজিরাঙা তার একশৃঙ্গ গণ্ডার, বাঘ, হাতি, হরিণ এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখির জন্য বিখ্যাত। উদ্যানটি ১৯০৫ সালে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০০৫ সালে এর শতবর্ষ উদযাপিত হয়েছিল।
বন্যার প্রভাব:
২০২৪ সালের জুলাই মাসে অসমে টানা বৃষ্টির ফলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের ২৩৩টি ফরেস্ট ক্যাম্পের মধ্যে ৬৬টি এখন জলের তলায়। উদ্যানের ৭০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে, যা উদ্যানের বন্যপ্রাণীদের জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে।
প্রাণীর মৃত্যু:
বন্যার ফলে কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে ১২৯টি বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে একশৃঙ্গ গণ্ডার, হরিণ, বন্য শূকর এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। উদ্যানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাণীগুলি বন্যার জল থেকে বাঁচার জন্য উঁচু জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তাতেও তারা রক্ষা পায়নি।
উদ্ধার কার্যক্রম:
বন্যার ফলে উদ্যানের প্রাণীগুলিকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। উদ্যানের কর্মকর্তারা এবং স্থানীয় প্রশাসন যৌথভাবে উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়েছে। ৭২টি প্রাণীকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং তাদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে।
বন্যার কারণ:
অসমে প্রতি বছর বর্ষাকালে বন্যা হয়। ব্রহ্মপুত্র নদীর জলস্তর বৃদ্ধি এবং টানা বৃষ্টির ফলে এই বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ২০২৪ সালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় বন্যার তীব্রতা বেড়েছে।
প্রশাসনের পদক্ষেপ:
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী অসমের জনগণের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন এবং সমস্ত ধরনের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এনডিআরএফ, এসডিআরএফ এবং সেনাবাহিনীকে উদ্ধার কার্যক্রমে মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় জনগণের অবস্থা:
অসমের ৩০টি জেলার প্রায় ২৪.৫ লক্ষ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ২৮টি জেলার ২৫০০ গ্রাম জলমগ্ন হয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা লখিমপুর, দারং এবং গোলাঘাট জেলায়।
কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে এখন কোন প্রাণীগুলি উদ্ধার করা হচ্ছে
কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে বর্তমানে যে প্রাণীগুলি উদ্ধার করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে:
- হগ ডিয়ার (বরাহ হরিণ): সবচেয়ে বেশি সংখ্যক হগ ডিয়ার উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন রিপোর্টে ৬৩ থেকে ৮৬টি পর্যন্ত হগ ডিয়ার উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে।
- গণ্ডার শাবক: একটি গণ্ডার শাবক উদ্ধার করা হয়েছ।
- উদবিড়াল (অটার): দুটি উদবিড়াল উদ্ধার করা হয়েছে।
- সাম্বার হরিণ: দুটি সাম্বার হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে।
- স্কপস পেঁচা: দুটি স্কপস পেঁচা উদ্ধার করা হয়েছে।
- ভারতীয় খরগোশ: একটি ভারতীয় খরগোশ উদ্ধার করা হয়েছে।
- জঙ্গলের বিড়াল: একটি জঙ্গলের বিড়াল উদ্ধার করা হয়েছে।
- হাতি: একটি হাতি উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধারকৃত প্রাণীদের মধ্যে কিছু প্রাণী চিকিৎসাধীন রয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৩৪টি প্রাণী এখনও চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। উদ্ধার অভিযান চলমান রয়েছে এবং এনডিআরএফ ও পার্ক কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে এই কাজ করছে।
কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে বন্যা পরিস্থিতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ
কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর এবং উদ্বেগজনক:
- উদ্যানের ৭০% এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। ২৩৩টি ফরেস্ট ক্যাম্পের মধ্যে ১৪১টি এখনও জলের নীচে রয়েছে।
- এখন পর্যন্ত ১২৯টি বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৬টি গণ্ডার এবং ১০০টি হগ ডিয়ার রয়েছে।
- ৭২টি প্রাণীকে উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে ৬৩টি হগ ডিয়ার, ২টি উদবিড়াল, ২টি সাম্বার হরিণ, ১টি গণ্ডার শাবক, ১টি ভারতীয় খরগোশ, ১টি জঙ্গলের বিড়াল এবং ২টি স্কপস পেঁচা রয়েছে।
- বন্যার কারণে অনেক প্রাণী উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে।
- এনডিআরএফ, এসডিআরএফ এবং পার্ক কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে।
- জাতীয় সড়কে যানবাহনের গতি সীমিত করা হয়েছে প্রাণীদের সুরক্ষার জন্য।
- বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও এখনও অনেক এলাকা জলমগ্ন রয়েছে।
সামগ্রিকভাবে, এই বন্যা কাজিরাঙার জৈব বৈচিত্র্য এবং বন্যপ্রাণীদের জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম প্রয়োজন যাতে আরও ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা যায়।
অসমের বন্যা পরিস্থিতি প্রতি বছরই ভয়াবহ আকার ধারণ করে। কিন্তু ২০২৪ সালের বন্যা যেন সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছে। কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের ১২৯টি বন্যপ্রাণীর মৃত্যু আমাদেরকে প্রকৃতির প্রতি আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। প্রশাসনের উদ্যোগ এবং স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় আমরা আশা করি এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারব।