Astronaut challenges in space: মহাকাশ স্টেশনে নভোচারীদের জীবন একটি অসাধারণ ও অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (International Space Station বা ISS) পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উপরে অবস্থিত এবং এখানে নভোচারীরা মাসের পর মাস কাটান। তারা কীভাবে বাস করেন, কী খান, কীভাবে ঘুমান এবং কীভাবে তাদের দৈনন্দিন কাজ সম্পন্ন করেন তা জানা অত্যন্ত রোমাঞ্চকর।
নভোচারীদের থাকার ব্যবস্থা
মহাকাশ স্টেশনে নভোচারীদের থাকার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা ক্যাবিন রয়েছে। এই ক্যাবিনগুলি আকারে ছোট, প্রায় একটি ফোন বুথের সমান। প্রতিটি ক্যাবিনে একজন নভোচারীর জন্য একটি স্লিপিং ব্যাগ, একটি ল্যাপটপ, একটি ছোট উইন্ডো এবং ব্যক্তিগত জিনিসপত্র রাখার জন্য কিছু জায়গা রয়েছে।মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশে ঘুমানো একটি চ্যালেঞ্জ। নভোচারীরা তাদের স্লিপিং ব্যাগে নিজেদেরকে আটকে রাখেন যাতে তারা ঘুমের সময় ভেসে না যান। তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮.৫ ঘণ্টা ঘুমানোর সময় বরাদ্দ থাকে।
সুনীতা উইলিয়ামস ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মহাকাশে আটকে
খাবার ও পানীয়
মহাকাশে খাবার গ্রহণ একটি জটিল প্রক্রিয়া। নভোচারীরা বিশেষভাবে প্রস্তুত করা খাবার খান যা সহজে নষ্ট হয় না এবং মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশে খাওয়া যায়। এই খাবারগুলি সাধারণত ডিহাইড্রেটেড বা ক্যানড হয় এবং খাওয়ার আগে পানি মিশিয়ে নিতে হয়।নাসার নভোচারী খাদ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, “যখনই কোন মহাকাশযান স্পেস স্টেশনে যায়, আমরা ছোট প্যাকেট করে তাজা ফল, সব্জি, কমলা, আপেল, বেরি জাতীয় ফল এসব পাঠাই।” এই তাজা খাবারগুলি নভোচারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।পানীয়ের ক্ষেত্রে, নভোচারীরা পৃথিবী থেকে আনা পানি পান করেন। তবে এই পানি পুনর্ব্যবহার করা হয় – এমনকি মূত্র থেকেও পানি পুনরুদ্ধার করা হয় এবং বিশুদ্ধ করে পান করা হয়।
দৈনন্দিন কার্যক্রম
নভোচারীদের দিন শুরু হয় সকাল ৬টায়। তারা প্রতিদিন প্রায় ৮.৫ ঘণ্টা কাজ করেন। এই কাজের মধ্যে রয়েছে:
- বৈজ্ঞানিক গবেষণা
- মহাকাশ স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণ
- ব্যায়াম (প্রতিদিন ২ ঘণ্টা)
- পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ
নভোচারীরা প্রতিদিন ২ ঘণ্টা ব্যায়াম করেন যা তাদের শারীরিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশে দীর্ঘ সময় থাকলে হাড় ও পেশীর ক্ষয় হতে পারে।
স্বাস্থ্য সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ
মহাকাশে থাকা নভোচারীদের জন্য বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে:
- হাড়ের ক্ষয়: মহাকাশ বিশেষজ্ঞ মি. স্মিথ বলেন, “নারীদের মেনোপজ বা রজোনিবৃত্তির পর হাড়ের যে ক্ষয় হয়, মহাকাশ ভ্রমণে নভোচারীদের হাড়ের ক্ষয় হয় তার দশ গুণ বেশি হারে।”
- বিকিরণের ঝুঁকি: মহাকাশে বিকিরণের মাত্রা অনেক বেশি, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- চোখের সমস্যা: দীর্ঘ সময় মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশে থাকলে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে।
- ইমিউন সিস্টেমের দুর্বলতা: মহাকাশে থাকলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
Indian Railway: হারানো লাগেজের হদিশ এখন আপনার হাতের মুঠোয়
বিনোদন ও যোগাযোগ
নভোচারীরা তাদের অবসর সময়ে বই পড়েন, ছবি দেখেন, সঙ্গীত শোনেন এবং পৃথিবীর দৃশ্য উপভোগ করেন। তারা নিয়মিত ভিডিও কলের মাধ্যমে পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখেন।মহাকাশ স্টেশনে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে, যদিও এটি পৃথিবীর তুলনায় ধীরগতির। নভোচারীরা ইমেইল পাঠাতে এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারেন।
গবেষণা ও কাজ
মহাকাশ স্টেশনে নভোচারীরা বিভিন্ন ধরনের গবেষণা কাজ করেন। এর মধ্যে রয়েছে:
- মাইক্রোগ্র্যাভিটি পরিবেশে বিভিন্ন পদার্থের আচরণ পর্যবেক্ষণ
- জীববিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণা
- পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ও জলবায়ু পর্যবেক্ষণ
- মহাকাশ প্রযুক্তির উন্নয়ন
নারী নভোচারীদের অবদান
মহাকাশ গবেষণায় নারী নভোচারীদের অবদান উল্লেখযোগ্য। ১৯৬৩ সালে সোভিয়েত মহাকাশচারী ভ্যালেন্তিনা তেরেশকোভা প্রথম নারী হিসেবে মহাকাশে যান। এরপর থেকে অনেক নারী নভোচারী মহাকাশ গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবর, জেসিকা মেয়ার এবং ক্রিস্টিনা কোচ প্রথম সম্পূর্ণ নারী দল হিসেবে মহাকাশ পদচারণা করেন। এটি মহাকাশ গবেষণায় একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত ছিল।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
নাসা ২০২৪ সালের মধ্যে আর্টেমিস কার্যক্রমের মাধ্যমে চাঁদে নারী মহাকাশচারী পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া, মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনাও চলছে।
মহাকাশ স্টেশনে নভোচারীদের জীবন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং এবং রোমাঞ্চকর। তারা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গবেষণা ও আবিষ্কারের মাধ্যমে মানব সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশে বসবাস করা, খাওয়া-দাওয়া, ঘুমানো এবং কাজ করা – এই সবকিছুই তাদের জন্য একটি অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। তাদের এই ত্যাগ ও কঠোর পরিশ্রমের ফলে আমরা মহাকাশ সম্পর্কে আরও জানতে পারছি এবং ভবিষ্যতে মহাকাশ অভিযানের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।