শরতের শেষে ছাতিম ফুলের মাদক সুবাসে মাতাল শহর-বন্দর-গ্রাম!

Transition from summer to autumn: শরতের শেষে এবং হেমন্তের শুরুতে বাংলাদেশের শহর-বন্দর-গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ছাতিম ফুলের মাদক সুবাস। সাদা রঙের এই ফুলের তীব্র গন্ধে মেতে ওঠে চারপাশ। বিশেষ করে…

Avatar

 

Transition from summer to autumn: শরতের শেষে এবং হেমন্তের শুরুতে বাংলাদেশের শহর-বন্দর-গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ছাতিম ফুলের মাদক সুবাস। সাদা রঙের এই ফুলের তীব্র গন্ধে মেতে ওঠে চারপাশ। বিশেষ করে সন্ধ্যা নামার পর থেকে রাত গভীর হওয়া পর্যন্ত এই গন্ধ চরমে ওঠে।

ছাতিম গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Alstonia scholaris, যা Apocynaceae গোত্রের অন্তর্গত। এটি একটি বড় আকারের চিরসবুজ গাছ যা ১৫-২০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতা লাভ করতে পারে। গাছের শাখা-প্রশাখায় ৪-৭টি পাতা ছত্রাকারে সাজানো থাকে, যার জন্য এর নাম ছাতিম। আবার প্রতিটি শাখায় সাধারণত ৭টি পাতা থাকে বলে এর অন্য নাম সপ্তপর্ণী।ছাতিম ফুলের সুবাস শুধু মানুষকেই নয়, প্রকৃতিকেও মাতিয়ে তোলে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসে এর সুন্দর বর্ণনা পাওয়া যায়। লেখক লিখেছেন, “রাত্রি গভীর হয়। ছাতিম ফুলের উগ্র সুবাসে হেমন্তের আঁচলাগা শিশিরাদ্র নৈশবায়ু ভরিয়া যায়।”
ফুলদানির ফুল তাজা রাখার ১১টি অব্যর্থ উপায় – বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

ছাতিম গাছের বিস্তৃতি বেশ ব্যাপক। বাংলাদেশ, ভারত, চীনসহ এশিয়ার প্রায় সর্বত্রই এটি পাওয়া যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এক হাজার মিটার উঁচুতেও এটি জন্মায়। তবে সমভূমিতে এ গাছ দ্রুত বাড়ে। বাংলাদেশের রাস্তার আশেপাশে ছাতিম গাছ প্রায়শই নজরে পড়ে।ছাতিম গাছের শুধু ফুলই নয়, এর অন্যান্য অংশও বেশ উপকারী। প্রাচীন আয়ুর্বেদশাস্ত্রে দীর্ঘ দিন ধরে ওষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে ছাতিমগাছের নানা অংশ। ছাতিমের ছাল কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এছাড়া কফের আধিক্য, হিক্কা, হাঁপানি, সর্দি, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, ডায়রিয়া, আমাশয় ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায়ও ছাতিমের বিভিন্ন অংশ ব্যবহৃত হয়।

বিশেষ করে ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসায় ছাতিম গাছের ছালের নির্যাস বেশ কার্যকর। ম্যানিলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ছাতিম গাছের ছালের নির্যাস ব্যবহার করে সুফল পেয়েছেন। তাদের ধারণা, এটা কুইনাইনের বদলেও ব্যবহার করা যেতে পারে।তবে ছাতিম ফুলের তীব্র গন্ধ সবার কাছে সমান প্রিয় নয়। অনেকেই এই গন্ধ সহ্য করতে পারেন না। বিশেষ করে যাদের সাইনাসাইটিস, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, চোখের সংক্রমণ বা ক্রনিক সর্দিকাশির সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে ছাতিম ফুলের গন্ধ থেকে সমস্যা হতে পারে।

ছাতিমফুলের রেণু থেকে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এই গাছ থেকে নিঃসৃত রজনজাতীয় সাদা রস থেকেও সংক্রমণ হতে পারে। এছাড়া মাথা ব্যথা, গা গোলানো, বমি বমি ভাবের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।প্রাচীনকালে ছাতিমগাছের কদর ছিল অন্য কারণেও। টোল বা পাঠশালার প্রাঙ্গণে ছাতিমগাছ লাগানো হতো। শিক্ষক ছাত্রদের নিয়ে সেই ছাতিমগাছের ছায়াতলে বসে পাঠদান করতেন। এছাড়া এর কাঠ দিয়ে বানানো হতো ব্ল্যাকবোর্ড। চকপেনসিল দিয়ে সে ব্ল্যাকবোর্ডে লেখা হতো।

ছাতিমগাছের আরেকটি বিশেষত্ব হল এর বীজের বাতাসে ভেসে চলার অদ্ভুত ক্ষমতা। ছোট কাঠির মতো বীজের সঙ্গে প্রান্তে থাকে পশমের মতো অঙ্গ। ফল ফেটে বীজ বাতাসে ছড়িয়ে পড়লে তা বাতাসে ভেসে ভেসে অনেক দূরে চলে যায়। সুবিধামতো জায়গায় পড়লে সেখানেই ছাতিমগাছ গজিয়ে ওঠে।বর্তমানে ঢাকা শহরে পথতরু হিসেবে বেশ কিছু ছাতিমগাছ লাগানো হয়েছে। ছাতিমগাছ খুব দ্রুত বাড়ে। তিন-চার বছরের মধ্যেই গাছগুলো পথচারীদের ছাতার মতো ছায়া দিতে পারে।
সুস্থ সকালের শুরু: দিনের প্রথম ৪টি সেরা পানীয়

তবে একালে ছাতিমের প্রয়োজন হয়তো ফুরিয়েছে, কেউ আর এখন ব্ল্যাকবোর্ডে লেখে না। তাই এর কাঠের দরকার হয় না। সচরাচর ছাতিমগাছ কেউ লাগায় না। তবু সারা দেশে বিক্ষিপ্তভাবে ছাতিমগাছ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।যাই হোক, শরতের শেষে এবং হেমন্তের শুরুতে ছাতিম ফুলের মাদক সুবাসে মেতে ওঠে বাংলাদেশের শহর-বন্দর-গ্রাম। এই গন্ধ কারও কাছে প্রিয়, কারও কাছে অপ্রিয় হলেও এটি যে বাংলার ঋতু পরিবর্তনের এক অন্যতম নিদর্শন, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।

About Author
Avatar

আমাদের স্টাফ রিপোর্টারগণ সর্বদা নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন যাতে আপনি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সর্বশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে পারেন। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রতিশ্রুতি আমাদের ওয়েবসাইটকে একটি বিশ্বস্ত তথ্যের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।তারা নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্টিংয়ে বিশ্বাসী, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন তৈরিতে সক্ষম