Average working hours by country: বর্তমান বিশ্বে কর্মঘণ্টা নিয়ে বিতর্ক চলছে। কোন দেশের মানুষ কত ঘণ্টা কাজ করে তা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন দেশে কর্মঘণ্টার মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে। কোথাও সপ্তাহে ৫৪ ঘণ্টা কাজ করতে হয়, আবার কোথাও মাত্র ২৫ ঘণ্টা। এই বৈচিত্র্য দেশের অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার মানের সাথে সম্পর্কিত।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টার দেশগুলো হল:
দেশ | সাপ্তাহিক গড় কর্মঘণ্টা |
---|---|
ভুটান | ৫৪.৩ |
সংযুক্ত আরব আমিরাত | ৫২.০ |
লেসোথো | ৪৯.৫ |
কাতার | ৪৮.২ |
লেবানন | ৪৮.০ |
লাইবেরিয়া | ৪৮.০ |
কঙ্গো প্রজাতন্ত্র | ৪৭.৯ |
জর্ডান | ৪৭.০ |
পাকিস্তান | ৪৬.৬ |
ব্রুনাই | ৪৬.৬ |
এই তালিকায় ভুটান শীর্ষে রয়েছে, যেখানে সপ্তাহে গড়ে ৫৪.৩ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। এর পরেই রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, যেখানে সাপ্তাহিক গড় কর্মঘণ্টা ৫২।
অন্যদিকে, কিছু দেশে কর্মঘণ্টা অনেক কম। ILO-এর তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালে সর্বনিম্ন কর্মঘণ্টার দেশগুলো হল:
দেশ | সাপ্তাহিক গড় কর্মঘণ্টা |
---|---|
সিরিয়া | ২৫.৩ |
ইয়েমেন | ২৫.৪ |
নেদারল্যান্ডস | ২৬.৭ |
নরওয়ে | ২৭.১ |
ভানুয়াতু | ২৭.৬ |
ফিনল্যান্ড | ২৮.৯ |
সুইডেন | ২৯.২ |
মোজাম্বিক | ২৯.৪ |
অস্ট্রিয়া | ২৯.৪ |
ডেনমার্ক | ২৯.৫ |
এই তালিকায় সিরিয়া সবচেয়ে কম কর্মঘণ্টার দেশ হিসেবে রয়েছে, যেখানে সপ্তাহে গড়ে মাত্র ২৫.৩ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। এরপর রয়েছে ইয়েমেন, যেখানে সাপ্তাহিক গড় কর্মঘণ্টা ২৫.৪।
ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায়, বিকশিত দেশগুলোতে কর্মঘণ্টা ক্রমশ কমে আসছে। ১৯ শতকের তুলনায় বর্তমানে কর্মীরা ২০-৩০ ঘণ্টা কম কাজ করে। ১৮৭০ সালে একজন কর্মী বছরে প্রায় ৩,০০০ ঘণ্টা কাজ করত। কিন্তু ১৯৮০ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১,৯৪৯ ঘণ্টায়।জার্মানির উদাহরণ দিলে দেখা যায়, ১৯৮০ সালে একজন জার্মান কর্মী বছরে গড়ে ২,১৮৬ ঘণ্টা কাজ করত। ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১,৭৮৩ ঘণ্টায় – যা ১৯৮০ সালের তুলনায় ৪০৩ ঘণ্টা কম।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (OECD) এর সদস্য দেশগুলোতে গড় কর্মঘণ্টা অনেক কম। এসব দেশে একজন পূর্ণকালীন কর্মী সপ্তাহে গড়ে ৩৬ ঘণ্টা কাজ করে, যা বছরে ১,৮৫৪ ঘণ্টার সমান।ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতেও একই চিত্র দেখা যায়। এখানে একজন পূর্ণকালীন কর্মী সপ্তাহে গড়ে ৩৬ ঘণ্টা কাজ করে।যুক্তরাজ্যে একজন পূর্ণকালীন কর্মী বছরে ১,৮৬৬ ঘণ্টা বা সপ্তাহে ৩৫.৯ ঘণ্টা কাজ করে।জার্মানিতে একজন পূর্ণকালীন কর্মী বছরে গড়ে ১,৭৮৩ ঘণ্টা বা সপ্তাহে ৩৪.৩ ঘণ্টা কাজ করে।
যুক্তরাষ্ট্রে একজন পূর্ণকালীন কর্মী বছরে ১,৮৯২ ঘণ্টা বা সপ্তাহে ৩৬.৪ ঘণ্টা কাজ করে – যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের তুলনায় বছরে ১০ ঘণ্টা বেশি।তবে যুক্তরাষ্ট্রে শিল্পখাত অনুযায়ী কর্মঘণ্টার পার্থক্য রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে খনন ও লগিং শিল্পে কর্মীরা সপ্তাহে গড়ে ৪৫.৫ ঘণ্টা কাজ করেছে। অন্যদিকে অবসর ও আতিথেয়তা খাতে কর্মীরা সপ্তাহে মাত্র ২৫.৪ ঘণ্টা কাজ করেছে।
এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার অনেক দেশে কর্মঘণ্টা বেশি। চীনে সরকারিভাবে ৪০ ঘণ্টার কর্মসপ্তাহ রয়েছে। কিন্তু ওভারটাইমের নিয়ম না থাকায় বাস্তবে অনেক বেশি কাজ করতে হয়। ২০১৭ সালে চীনে বার্ষিক গড় কর্মঘণ্টা ছিল ২,১৭৪।দক্ষিণ কোরিয়ায় আইনত সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজের সীমা রয়েছে। তবে কর্মীরা সম্মত হলে সপ্তাহে অতিরিক্ত ১২ ঘণ্টা ওভারটাইম করতে পারে। ফলে ২০২৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় বার্ষিক গড় কর্মঘণ্টা দাঁড়িয়েছে ২,০৬৩ ঘণ্টায়।
গবেষকরা মনে করেন, আয় ও সম্পদের বৃদ্ধিই কর্মঘণ্টা কমার প্রধান কারণ। দেখা গেছে, মাথাপিছু জিডিপি যত বেশি, কর্মঘণ্টা তত কম। যেসব দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেশি, সেখানে কর্মঘণ্টা দ্রুত কমেছে।এছাড়া প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, শ্রম আইনের পরিবর্তন এবং সপ্তাহান্তে ছুটির প্রচলনও কর্মঘণ্টা কমাতে সাহায্য করেছে। অনেক দেশে কর্ম-জীবন ভারসাম্যের প্রতি গুরুত্ব বাড়ায় কর্মঘণ্টা কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভবিষ্যতে কর্মঘণ্টা আরও কমতে পারে। তবে এর হার আগের চেয়ে কম হবে। কারণ ইতিমধ্যে অনেক দেশে কর্মঘণ্টা অনেকটাই কমে এসেছে।তবে দেশভেদে এর পার্থক্য থাকবে। যেসব দেশের অর্থনীতি দ্রুত বাড়ছে, সেখানে কর্মঘণ্টা কমার সুযোগ বেশি। অন্যদিকে উন্নত দেশগুলোতে কর্মঘণ্টা কমার হার ধীর হতে পারে।কর্মঘণ্টা নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা চলছে। অনেক দেশে দীর্ঘ কর্মঘণ্টা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। আবার কিছু দেশে কম কর্মঘণ্টায় উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। ভবিষ্যতে কর্ম-জীবন ভারসাম্য রক্ষার জন্য কর্মঘণ্টা আরও যুক্তিযুক্ত করার প্রয়োজন হতে পার
মন্তব্য করুন