বালেনসিয়াগার ‘জিরো শু’ এর আশ্চর্যজনক ৪০,০০০ টাকার মূল্যটেগ

Balenciaga shoes 40000 BDT: বিলাসবহুল ফ্যাশন ব্র্যান্ড বালেনসিয়াগা আবারও আলোচনায় এসেছে তাদের নতুন ‘জিরো’ নামক ব্যারফুট শু লাইন নিয়ে, যার দাম প্রায় ৪০,০০০ টাকা (৪৫০ ডলার)। ডিসেম্বর ২০২৪-এ প্রকাশিত এই জুতা পা প্রায় অনাবৃত রাখে, সামান্য সুরক্ষা প্রদান করে, অথচ দাম এতটাই বেশি যে বহু ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ এবং ভোক্তারা অবাক হয়েছেন। কিন্তু কেন এই মিনিমালিস্ট “ব্যারফুট” জুতা এত আলোচনায় এসেছে এবং এর পেছনের বাজার কেমন, তা জানা যাক।

ব্যারফুট বা জিরো শু কি?

ব্যারফুট বা জিরো শু হল এমন জুতা যা প্রাকৃতিক পদচারণার অনুভূতি দেয়, অর্থাৎ আপনি যেন খালি পায়ে হাঁটছেন কিন্তু সামান্য সুরক্ষা পাচ্ছেন। এই জাতীয় জুতার বৈশিষ্ট্য:

• খুব কম প্যাডিং বা আর্চ সাপোর্ট থাকে

• “জিরো-ড্রপ” ডিজাইন, অর্থাৎ গোড়ালি এবং পায়ের সামনের অংশ একই উচ্চতায় থাকে

• প্রশস্ত টো বক্স যাতে আঙ্গুলগুলি প্রাকৃতিকভাবে ছড়িয়ে যেতে পারে

• হালকা এবং নমনীয় সোল

• মিনিমালিস্টিক ডিজাইন

জিরো শুগুলি এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে পা প্রাকৃতিকভাবে কাজ করতে পারে, আপনাকে তলার স্পর্শ অনুভব করতে দেয়, কিন্তু সাথে সাথে কাঁচ বা ধারালো বস্তু থেকে সুরক্ষাও দেয়।

বালেনসিয়াগার ‘জিরো শু’ – লক্জারি সেগমেন্টে ব্যারফুট ট্রেন্ড

বালেনসিয়াগার ‘জিরো শু’ হল বিলাসবহুল স্ট্রিটওয়্যার মার্কেটে ব্যারফুট ট্রেন্ডের একটি উদাহরণ। এই জুতাগুলি পায়ের অধিকাংশ অংশ অনাবৃত রাখে, প্রায় সবকিছুই না দেওয়ার জন্য ৪০,০০০ টাকার এক মূল্যটেগ নিয়ে এসেছে1। এই জুতাগুলি নিম্নলিখিত কারণে ব্যয়বহুল:

• বিলাসী ব্র্যান্ডিং এবং মার্কেটিং

• উচ্চমানের উপকরণ ব্যবহার (সম্ভবত)

• একটি ট্রেন্ডসেটিং ব্র্যান্ড হিসাবে বালেনসিয়াগার পজিশনিং

• সীমিত সংখ্যক উৎপাদন যা এক্সক্লুসিভিটি তৈরি করে

জিরো শু বিলাসী বাজারে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হয়ে উঠেছে, কারণ বিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলি ব্যারফুট ট্রেন্ডকে অ্যাপ্রোপ্রিয়েট করে একে প্রিমিয়াম প্রাইস পয়েন্টে নিয়ে যাচ্ছে।

জিরো শু মার্কেটের অভূতপূর্ব বৃদ্ধি

যদিও বালেনসিয়াগার জুতা আলোচনায় এসেছে, তবে ব্যারফুট শু বাজার একটি দ্রুত বর্ধনশীল সেগমেন্ট হিসাবে বিকশিত হচ্ছে।

Allied Market Research অনুসারে, 2021 সালে বিশ্বব্যাপী ব্যারফুট জুতার বাজারের মূল্য ছিল ৪৭১.১ মিলিয়ন ডলার, যা ২০৩১ সালের মধ্যে ৭৮৮.৭ মিলিয়ন ডলার পৌঁছাবে, ২০২২ থেকে ২০৩১ সাল পর্যন্ত যৌগিক বার্ষিক বৃদ্ধির হার (CAGR) ৫.৩% হবে।

Future Market Insights এর একই রকম প্রক্ষেপণ অনুসারে, বিশ্বব্যাপী ব্যারফুট জুতার বাজার ২০২৪ সালে ৫৫৩.৫ মিলিয়ন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০৩৪ সালে ৯৪৫.৪ মিলিয়ন ডলার এ পৌঁছাবে, যৌগিক বার্ষিক বৃদ্ধির হার (CAGR) হবে ৫.৫%।

গুগল কিওয়ার্ড প্ল্যানার এবং Ahrefs থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ব্যারফুট জুতা সম্পর্কিত কিওয়ার্ডের সার্চের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০২০ সালের শেষ তিন মাসে বিশ্বব্যাপী ত্রৈমাসিক সার্চ ছিল ৪.৫৫ মিলিয়ন, যা ২০২৪ সালের তৃতীয় তিন মাসে বেড়ে ১৪.৩১ মিলিয়ন হয়েছে।

সর্বাধিক জনপ্রিয় ব্যারফুট শু ব্র্যান্ড

বাজারে অনেক ব্র্যান্ড আছে, তবে কয়েকটি ব্র্যান্ড বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য:

জ়িরো শুজ (Xero Shoes): এটি বাজারের অন্যতম নেতৃস্থানীয় ব্র্যান্ড, ২০০৯ সালে Steven Sashen এবং Lena Phoenix দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। জ়িরো শুজ ২০১৮ সালে ৮.৭ মিলিয়ন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩ সালে ৭৮ মিলিয়ন ডলারের রাজস্ব অর্জন করেছে। ব্র্যান্ডটি শুরু করেছিল একটি DIY স্যান্ডেল কিট দিয়ে এবং এখন ৫০টিরও বেশি স্টাইলের জুতা ও স্যান্ডেল উৎপাদন করে।

ভিভোবেয়ারফুট (VivoBareFoot): একটি আরেকটি জনপ্রিয় মিনিমালিস্ট জুতা ব্র্যান্ড।

বেলেনকা (BeLenka): যারা ব্যারফুট জুতার সন্ধানে, তাদের মধ্যে জনপ্রিয় তৃতীয় বিকল্প।

এই ধরনের জুতা কেন জনপ্রিয় হচ্ছে

ব্যারফুট জুতা নিম্নলিখিত কারণে বর্তমানে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে:

• স্বাস্থ্য সুবিধা: এই জুতা পায়ের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, সামগ্রিক শক্তি বৃদ্ধি করে, এবং সক্রিয় পুনরুদ্ধার, ভারসাম্য এবং চলাফেরা উন্নত করতে সাহায্য করে।

• আরামদায়ক: বিস্তৃত টো বক্স এবং নমনীয় সোলের কারণে এই জুতা সারাদিন পরা যায় এবং ব্যথা কমিয়ে দেয়।

• মিনিমালিস্ট লাইফস্টাইল ট্রেন্ড: বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান মিনিমালিস্ট জীবনযাপন আন্দোলনের সাথে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ।

• প্রাকৃতিক চলাফেরার প্রতি সচেতনতা: Christopher McDougall এর “Born to Run” বইয়ের মতো প্রভাবশালী পাবলিকেশন প্রাকৃতিক চলাফেরার সুবিধা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়িয়েছে।

জ়িরো শু’র উপকারিতা – কেন লোকেরা এত আগ্রহী

জ়িরো শু পায়ের স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক ফিটনেসে অনেক উপকারিতা প্রদান করে:

ব্যারফুট উপকারিতা:

• পায়ের শক্তি বাড়ায়

• দৌড়ানোর সময় পায়ের আঘাতের ঝুঁকি কমায়

• ভারসাম্য এবং চলাফেরায় উন্নতি ঘটায়

• পায়ের স্বাভাবিক গতিবিধি অনুমতি দেয়

• সাধারণ জুতার তুলনায় হালকা ওজন

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে দৌড়ানোর সময় না হলেও, ব্যারফুট শু পরা দৌড়ানোর ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে, কারণ এতে পায়ের শক্তি বাড়ে, জিমে সামগ্রিক শক্তি বাড়ে, এবং সক্রিয় পুনরুদ্ধার, ভারসাম্য এবং চলাফেরার উন্নতি হয়।

জ়িরো শুজ (Xero Shoes) – একটি সাফল্যের গল্প

বালেনসিয়াগার বিলাসী জ়িরো শু-এর দিকে তাকালে যেমন মনোযোগ আকর্ষণ করে, তেমনি বাজারে Xero Shoes এর সাফল্যের গল্পটিও উল্লেখযোগ্য।

Xero Shoes-এর প্রতিষ্ঠাতা Steven Sashen একজন ধাবক ছিলেন যিনি আঘাতের পরে ব্যারফুট রানিং-এ আগ্রহী হন2। তিনি এবং তার স্ত্রী Lena Phoenix ২০০৯ সালে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেন, একটি DIY স্যান্ডেল কিট দিয়ে শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে তৈরি স্যান্ডেল এবং বদ্ধ পাদুকায় সম্প্রসারিত করেন।

২০১৩ সালে, Shark Tank-এ উপস্থিত হয়ে, তারা Kevin O’Leary-এর ৪০০,০০০ ডলারের বিনিময়ে কোম্পানির ৫০% শেয়ারের অফার প্রত্যাখ্যান করেন। যদিও তাদের “বিভ্রান্ত উদ্যোক্তা” বলে চিত্রিত করা হয়েছিল, তবু Xero Shoes বিশাল সাফল্য অর্জন করেছে।

খেয়াল করার মত তথ্য:

• ২০২১ সালে, Xero Shoes-এর নেট বিক্রয় ছিল ৩৩.৬ মিলিয়ন ডলার।

• ২০২৩ সালে, ব্র্যান্ডটি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস-এর “দ্য আমেরিকাস ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং কোম্পানিজ” তালিকায় ২০৩ নম্বরে স্থান পেয়েছে, ২৮৩% যৌগিক বার্ষিক বৃদ্ধির হার রিপোর্ট করেছে।

• বর্তমানে তারা বিশ্বব্যাপী ৮০০টি দোকানে পাওয়া যায়, এবং ১.৫ মিলিয়নেরও বেশি বিশ্বস্ত গ্রাহক রয়েছে।

ব্যারফুট জুতার বাজার দ্রুত বিকশিত হচ্ছে, বালেনসিয়াগার মতো বিলাসী ব্র্যান্ড থেকে Xero Shoes-এর মতো বিশেষায়িত কোম্পানি পর্যন্ত। এই ট্রেন্ড ক্রমবর্ধমান সংখ্যক ভোক্তা যারা পায়ের স্বাস্থ্য এবং প্রাকৃতিক চলাফেরার সুবিধা সম্পর্কে আরও সচেতন হচ্ছেন, তাদের প্রয়োজন মেটাচ্ছে।

বালেনসিয়াগার ৪০,০০০ টাকা মূল্যের ‘জিরো শু’ এই শ্রেণীতে একটি বিলাসী প্রবেশ হিসাবে দেখা যেতে পারে, যা ব্যারফুট ফ্যাশনকে মেইনস্ট্রিমে নিয়ে আসতে সাহায্য করছে। যেহেতু বাজার বৃদ্ধি পাচ্ছে, আমরা সম্ভবত আরও বেশি ব্র্যান্ড এই ট্রেন্ডে যোগ দিতে দেখব, মূল্যের বিভিন্ন পয়েন্টে বিকল্প প্রদান করবে।তবে চূড়ান্ত বিশ্লেষণে, ব্যারফুট শু সম্পর্কে আকর্ষণীয় বিষয় হল এর সারমর্ম: অতি কম দিয়ে অনেক বেশি পাওয়া। এমনকি যদি সেই “অতি কম” এর জন্য বালেনসিয়াগার ক্ষেত্রে অনেক বেশি ব্যয় করতে হয়।