Bangabandhu Bhavan Demolition at 32 Dhanmondi: ৫ আগস্ট ২০২৪ সোমবার বিকেলে রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে (বঙ্গবন্ধু ভবন) অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনার বিবরণ
সোমবার বিকেল ৪টার দিকে একদল উত্তেজিত জনতা বঙ্গবন্ধু ভবনে প্রবেশ করে এবং ভেতরে অগ্নিসংযোগ করে। এরপর থেকে বাড়িটিতে আগুন জ্বলতে থাকে। আন্দোলনকারীরা বাড়ি থেকে জিনিসপত্র বের করে নিয়ে যায় এবং লুটপাট চালায়। আগুনে বঙ্গবন্ধু ভবনের প্রায় সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
সূত্রের খবর ভবনটি ভেঙে ফেলা হয় একাংশ । এছাড়া বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যও ভাঙচুর করা হয়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে একদল মানুষকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে হাতুড়ি দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করতে দেখা যায়।
শেখ হাসিনার পতন: বাংলাদেশের সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা
একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, “বাড়ির ভেতরে আগুন দেওয়া হয়েছে। বাড়ি থেকে জিনিসপত্র বের করে যে যার মতো নিয়ে চলে যাচ্ছেন। আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।”
অন্য একজন বলেন, “বঙ্গবন্ধু ভবনে অবশিষ্ট কিছু নেই, সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।”
অন্যান্য স্থাপনায় হামলা
বঙ্গবন্ধু ভবন ছাড়াও আওয়ামী লীগের অন্যান্য স্থাপনায়ও হামলা চালানো হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ের পুরোনো ও নতুন বিল্ডিংয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়া, রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অবস্থিত আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব
বঙ্গবন্ধু ভবনটি ছিল বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এই বাড়িতেই তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে এই বাড়িটিকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছিল।
ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বঙ্গবন্ধুর জীবনের স্মৃতি বহন করত। এটি ছিল জাতির ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক অবদান
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অনন্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ছিলেন বাঙালি জাতির মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা ও রূপকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার মনে করেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে শেখ মুজিবের ভূমিকা অতুলনীয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যেভাবে শেখ মুজিবের উপস্থিতি প্রয়োজন ছিল, তা অন্য কোনোভাবে পূরণ করা যেত না।”
ঐতিহাসিক আকবর হোসেন বলেন, “১৯৬৬ সালের আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের প্রথম প্রধান সিরাজুল আলম খান বলেছিলেন, শেখ মুজিবের নেতৃত্বেই বাংলাদেশকে স্বাধীন করা যাবে, কারণ তাঁর কথা মানুষ শুনবে।”
সম্ভাব্য প্রভাব
বঙ্গবন্ধু ভবন ধ্বংসের এই ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হবে। এটি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও জাতীয় স্মৃতির প্রতি এক আঘাত।
এই ঘটনা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। এটি সামাজিক সংহতি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
তবে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন, “আমরা যা ধ্বংস করেছি, আবার আমরাই সেটি গড়ে তুলব।” এটি আশার কথা যে, জাতি এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।
বঙ্গবন্ধু ভবন ধ্বংসের এই ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক দুঃখজনক অধ্যায়। এটি জাতির পিতার স্মৃতি ও দেশের ঐতিহ্যের প্রতি এক আঘাত। তবে আশা করা যায়, এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে জাতি আবার ঐক্যবদ্ধ হবে এবং দেশের উন্নয়নে এগিয়ে যাবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শ আজও বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে।
মন্তব্য করুন