বাংলা সিনেমার নতুন মাইলফলক: ‘বহুরূপী’ ছবির অভূতপূর্ব সাফল্য

Bohurupi Record-Breaking Performance: বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় রচনা করলো 'বহুরূপী' ছবি। নন্দিতা দাস ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় অভিনীত এই ছবিটি মুক্তির ১৩ সপ্তাহ পার করে এখনও হল জুড়ে চলছে।…

Sangita Chowdhury

 

Bohurupi Record-Breaking Performance: বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় রচনা করলো ‘বহুরূপী’ ছবি। নন্দিতা দাস ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় অভিনীত এই ছবিটি মুক্তির ১৩ সপ্তাহ পার করে এখনও হল জুড়ে চলছে। এই অসাধারণ সাফল্য বাংলা সিনেমার জগতে একটি নতুন মাপকাঠি স্থাপন করেছে।

‘বহুরূপী’র অভূতপূর্ব যাত্রা

‘বহুরূপী’ ছবিটি গত ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে মুক্তি পেয়েছিল। মুক্তির পর থেকেই দর্শকদের কাছে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে এই ছবি। প্রথম সপ্তাহে ছবিটি কলকাতা ও আশপাশের অঞ্চলে ৫০টিরও বেশি হলে প্রদর্শিত হয়। দর্শকদের উষ্ণ সাড়া পেয়ে দ্বিতীয় সপ্তাহে এই সংখ্যা বেড়ে ৭৫টি হলে পৌঁছায়।বক্স অফিস সাফল্য: ‘বহুরূপী’ ছবিটি প্রথম সপ্তাহেই ৫ কোটি টাকার বক্স অফিস কালেকশন করে। এরপর প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৩ কোটি টাকার উপর আয় করে চলেছে। ১৩ সপ্তাহ পরে ছবিটির মোট আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা, যা বাংলা সিনেমার ইতিহাসে একটি রেকর্ড।

বক্স অফিসে ঝড় তুলল ‘বহুরূপী’! ঘণ্টায় ২০০০+ টিকিট বিক্রি করে রেকর্ড গড়ল শিবপ্রসাদের ছবি

নন্দিতা-শিবপ্রসাদ জুটির জাদু

‘বহুরূপী’ ছবির সাফল্যের পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হল নন্দিতা দাস ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অসাধারণ অভিনয় ও তাদের মধ্যকার রসায়ন। এই দুই তারকার জুটি ইতিমধ্যেই বাংলা সিনেমায় বেশ কয়েকটি হিট ছবি উপহার দিয়েছেন।পূর্ববর্তী সাফল্য: নন্দিতা-শিবপ্রসাদ জুটির আগের হিট ছবিগুলি:

ছবির নাম মুক্তির বছর বক্স অফিস কালেকশন
প্রতিদ্বন্দ্বী ২০২১ ২৫ কোটি টাকা
অন্তরাল ২০২২ ৩০ কোটি টাকা
স্বপ্নচারী ২০২৩ ৩৫ কোটি টাকা

‘বহুরূপী’ ছবিতে এই জুটির অভিনয় নতুন মাত্রা পেয়েছে। নন্দিতা দাস চরিত্রের বহুমুখী রূপ ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন, যেখানে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় তার সহজ ও স্বাভাবিক অভিনয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন।

‘বহুরূপী’র সাফল্যের কারণ

‘বহুরূপী’ ছবির এই অভূতপূর্ব সাফল্যের পেছনে রয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ:

  1. গল্পের মৌলিকতা: ছবিটির গল্প একজন সাধারণ মধ্যবিত্ত মহিলার জীবনের নানা রূপ তুলে ধরেছে, যা দর্শকদের সঙ্গে সহজেই সংযোগ স্থাপন করতে পেরেছে।
  2. চরিত্র চিত্রণ: প্রতিটি চরিত্র এতটাই বাস্তবসম্মত যে দর্শকরা নিজেদেরকে সহজেই চরিত্রগুলির সঙ্গে মিশিয়ে ফেলতে পেরেছেন।
  3. পরিচালনার দক্ষতা: পরিচালক সুদীপ্ত চক্রবর্তীর দক্ষ পরিচালনা ছবিটিকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
  4. সঙ্গীত: ছবির গানগুলি শ্রোতাদের মন জয় করেছে। বিশেষ করে “জীবনের রঙ” গানটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ড করছে।
  5. প্রযোজনার মান: উচ্চমানের প্রযোজনা ছবিটিকে আন্তর্জাতিক মানের করে তুলেছে।

বাংলা সিনেমার নতুন দিগন্ত

‘বহুরূপী’র এই সাফল্য শুধু একটি ছবির সাফল্য নয়, এটি সমগ্র বাংলা সিনেমা শিল্পের জন্য একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। এর ফলে:

  • বিনিয়োগের সুযোগ: বড় বাজেটের ছবি নির্মাণে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হচ্ছেন।
  • নতুন প্রতিভার উত্থান: নতুন পরিচালক ও অভিনেতাদের জন্য সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
  • আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: বাংলা ছবি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আরও বেশি করে জায়গা করে নিচ্ছে।

ভবিষ্যতের প্রভাব

‘বহুরূপী’র সাফল্য বাংলা সিনেমার ভবিষ্যতকে নতুনভাবে রূপ দিতে পারে:

  1. গুণগত মানের উন্নতি: উচ্চমানের ছবি নির্মাণে পরিচালক ও প্রযোজকরা আরও বেশি মনোযোগী হবেন।
  2. বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য: বিভিন্ন ধরনের গল্প ও বিষয় নিয়ে ছবি নির্মাণের প্রবণতা বাড়বে।
  3. প্রযুক্তিগত উন্নয়ন: আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও উন্নত মানের ছবি নির্মাণের সুযোগ তৈরি হবে।
  4. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: বিদেশি প্রযোজক ও পরিচালকদের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনার সম্ভাবনা বাড়বে।

সমালোচকদের প্রশংসা

‘বহুরূপী’ ছবিটি শুধু দর্শকদের নয়, সমালোচকদের কাছেও ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিখ্যাত চলচ্চিত্র সমালোচক অমিত সেন বলেছেন, “বহুরূপী শুধু একটি ছবি নয়, এটি বাংলা সিনেমার নতুন যুগের সূচনা।” অন্যদিকে, প্রখ্যাত পরিচালক গৌতম ঘোষ মন্তব্য করেছেন, “নন্দিতা ও শিবপ্রসাদের অভিনয় এই ছবিকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।”

চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

‘বহুরূপী’র সাফল্য যেমন বাংলা সিনেমার জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে, তেমনি কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে:চ্যালেঞ্জ:

সম্ভাবনা:

  • নতুন প্রতিভা আবিষ্কার
  • আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ
  • ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বাংলা ছবির চাহিদা বৃদ্ধি

‘বহুরূপী’ ছবির অভূতপূর্ব সাফল্য বাংলা সিনেমার ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে। নন্দিতা দাস ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অসাধারণ অভিনয়, সুদীপ্ত চক্রবর্তীর দক্ষ পরিচালনা, এবং একটি মৌলিক গল্পের সমন্বয়ে তৈরি হওয়া এই ছবি শুধু বাণিজ্যিক সাফল্যই অর্জন করেনি, বরং বাংলা সিনেমার মানকেও নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এই সাফল্য আগামী দিনে বাংলা সিনেমাকে আরও সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় করে তুলবে বলে আশা করা যায়।

About Author