বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শনিবার হিন্দু সম্প্রদায়কে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি হিন্দুদের নির্ভয়ে পূজামণ্ডপে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শনিবার ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শন করেন এবং দুর্গাপূজার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতিসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের সাথে মতবিনিময় করেন।
সেনাপ্রধান বলেন, “প্রত্যেকেরই নিজ নিজ ধর্ম পালন করার অধিকার রয়েছে। আপনারা নির্ভয়ে মণ্ডপে যেতে পারেন, পূজা করতে পারেন এবং আনন্দের সাথে এই উৎসব উদযাপন করতে পারেন।” তিনি আরও বলেন যে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে আসছে।
Bangladeshi Minority Security: হুমকি ও আক্রমণের মুখে বাংলাদেশে
সেনাবাহিনী প্রধান জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দুর্গাপূজা উপলক্ষে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে সারা দেশের জেলা পর্যায়ে সেনা সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আশা প্রকাশ করেন যে, হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রত্যেক নাগরিক ইতিবাচক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন করবেন।
এবারের দুর্গাপূজা ৯ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। এই উপলক্ষে সারা দেশে ৩২,৬৬৬টি পূজামণ্ডপে মোট ২,১২,১৯২ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হবে। তারা ৮ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ৬ দিন ধরে নিরাপত্তা বিধান করবেন।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ আশা প্রকাশ করেছেন যে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দুর্গাপূজা সুষ্ঠুভাবে ও আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপিত হবে[3]। তিনি সকলকে যথাসময়ে তথ্য প্রদানের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন যাতে সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়।
এদিকে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ সরকারকে দুর্গাপূজা উপলক্ষে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জায়সওয়াল বলেছেন, “আমরা অনেকবার, এমনকি সর্বোচ্চ পর্যায়েও বলেছি যে সেখানে (বাংলাদেশে) সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেওয়া উচিত। এটাই আমাদের প্রত্যাশা যে সেখানকার সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেবে। দুর্গাপূজার সময় কোনো ঘটনা ঘটা ভালো নয়।”
উল্লেখ্য, এর আগে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছিল যে দুর্গাপূজা কমিটিগুলোকে ৫ লাখ টাকা করে ‘জিজিয়া’ কর হিসেবে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই করের কারণে অনেক পূজা কমিটি এবার উৎসব আয়োজন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। তবে সেনাপ্রধানের এই আশ্বাসবাণীর পর আশা করা যাচ্ছে যে এবারের দুর্গাপূজা নিরাপদ ও আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপিত হবে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করে বাংলাদেশে বসবাসরত হিন্দু ও সকল সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে এই তথ্য জানিয়েছেন।
সামগ্রিকভাবে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান থেকে শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যন্ত সকলেই এবারের দুর্গাপূজা যাতে নিরাপদে ও আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপিত হয় সেজন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাদের এই আশ্বাসবাণী ও কার্যকর পদক্ষেপ হিন্দু সম্প্রদায়কে স্বস্তি দিয়েছে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
National Sports Day 2024: মেজর ধ্যানচাঁদের জীবনী, তারিখ এবং দিনটির তাৎপর্য সম্পর্কে জানুন
বাংলাদেশে হিন্দুরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হলেও তারা দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। দুর্গাপূজা শুধু হিন্দুদের নয়, সকল ধর্মের মানুষের কাছে একটি বড় উৎসব হিসেবে পালিত হয়। তাই এই উৎসবকে কেন্দ্র করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। সরকার, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদেরও এ ব্যাপারে সচেতন ও সহযোগী হওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশের মতো একটি বহু ধর্মীয় ও বহু সাংস্কৃতিক দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহাবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুর্গাপূজার মতো ধর্মীয় উৎসবগুলো এই সম্প্রীতি ও ঐক্যের বন্ধন আরও দৃঢ় করে। তাই সকল ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে এই উৎসব যাতে নিরাপদে ও আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপিত হয় সেদিকে সকলকে মনোযোগী হতে হবে।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের আশ্বাসবাণী ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এটি দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতার প্রতিফলন। তবে শুধু সরকারি উদ্যোগই যথেষ্ট নয়, সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
আশা করা যায়, এবারের দুর্গাপূজা হবে আনন্দঘন, নিরাপদ ও সকলের অংশগ্রহণে একটি সার্থক উৎসব। এই উৎসব হয়ে উঠুক বাংলাদেশের ধর্মীয় সহাবস্থান ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।