বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাদের ভূমিকা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বর্তমান অবস্থা, শক্তি ও সামর্থ্য নিয়ে একটি বিস্তারিত পর্যালোচনা করা যাক।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সবচেয়ে বড় অংশ। সেনাবাহিনীর প্রধান দায়িত্ব হলো দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কৌশল বাস্তবায়ন এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা করা। সেনাবাহিনীর বর্তমান আকার ও সামর্থ্য:
-
মোট সৈন্য সংখ্যা: প্রায় ১,৬০,০০০ জন।
-
বেসামরিক কর্মী: ১৩,৪০৮ জন।
-
সক্রিয় সৈন্য: ১৪০,০০০ জন।
-
রিজার্ভ সৈন্য: ৬০,০০০ জন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন প্রকল্প “ফোর্সেস গোল ২০৩০” এর আওতায় বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
-
তিনটি নতুন পদাতিক ডিভিশন গঠন: ১৭তম (সিলেট), ১০ম (রামু, কক্সবাজার) এবং ৭ম (বরিশাল-পটুয়াখালী)
-
সৈন্যদের আধুনিক সরঞ্জামে সজ্জিতকরণ: নাইট ভিশন গগলস, ব্যালিস্টিক হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ইত্যাদি।
-
নতুন ট্যাংক ও সমরাস্ত্র সংগ্রহ: ৪৪টি এমবিটি-২০০০ ট্যাংক, ৩০০টি বিটিআর-৮০ এপিসি।
সেনাবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে:
-
দ্বিতীয় কমান্ডো ব্যাটালিয়ন গঠন
-
পুরনো ট্যাংকগুলো আধুনিকায়ন
-
নতুন আর্টিলারি সিস্টেম সংগ্রহ
-
বিশেষ বাহিনী গঠন ও প্রশিক্ষণ
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাজেট ধরা হয়েছে ৪২৩.৬ বিলিয়ন টাকা (৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), যা আগের বছরের তুলনায় ১১% বেশি। এর মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিচালন ব্যয় ৩৮৭.৯ বিলিয়ন টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ১২.৮৪ বিলিয়ন টাকা।বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় বৃহত্তম প্রতিরক্ষা বাজেট নিয়ে কাজ করছে। বিশ্বের ৩৭তম শক্তিশালী সামরিক বাহিনী হিসেবে স্বীকৃত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে পরিগণিত।
সেনাবাহিনীর কাঠামোগত পরিবর্তন:
-
তিনটি কোরে বিভক্তকরণ: মধ্য, পূর্ব ও পশ্চিম
-
নতুন ক্যান্টনমেন্ট স্থাপন
-
বিদ্যমান ঘাঁটিগুলোর আধুনিকায়ন
-
নদী ব্রিগেড গঠন (কিশোরগঞ্জের মিঠামাইনে)
সাম্প্রতিক সময়ে সেনাবাহিনী কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছে:
-
২০২৪ সালে চীন থেকে তিনটি নরিনকো সিএস/এএ৩ ট্যুইন-ব্যারেল এন্টি-এয়ারক্রাফট গান সিস্টেম
-
২০২৩ সালে তুরস্ক থেকে ৬টি বায়রাকতার টিবি২ ড্রোন
-
২০২২ সালে চীন থেকে ভিটি৫ লাইট ট্যাংক
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শুধু দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় নয়, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৭,০০০ বাংলাদেশি সৈন্য শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে।
তবে সেনাবাহিনীর এই শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সামরিক হস্তক্ষেপের ঘটনাও উল্লেখযোগ্য। ১৯৭৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট ২৯টি সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছে, যার মধ্যে কিছু সফল এবং কিছু ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
-
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড
-
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ: হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ক্ষমতা দখল
-
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি: লে. জেনারেল মঈন উ আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন